২৪ বছর জেলের অন্ধকারে! বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই মুক্তির আবেদন! কে এই দারা সিং?
Dara Singh: অস্ট্রেলিয় মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই শিশু পুত্রকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় দারা সিংয়ের।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ওড়িশায় ব্যাপক জয় পেয়েছে বিজেপি। ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে ক্ষমতা থেকে সরাতেও উঠে পড়ে লেগেছিল গেরুয়া শিবির। তাতে সফলও হয়েছে মোদির দল। এই প্রথম ওড়িশায় মারাত্মক ভালো ফল ছিল বিজেপির। এর মধ্যেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী দারা সিং শীর্ষ আদালতে মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, ২৪ বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন দারা সিং, আর প্রায় ২৫ বছর পরে নবীন সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই দারা সিংয়ের এই মুক্তির আবেদন মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। কে এই দারা সিং? কেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাকে?
রবীন্দ্র পাল ওরফে দারা সিং প্রায় ২৪ বছর জেলবন্দি। ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি কেওনঝাড়ের মোহনপুরে অস্ট্রেলিয় মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই শিশু পুত্রকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় দারা সিংয়ের। তিনি এখন শীর্ষ আদালতে মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন। স্টেইনসের এই হত্যাকাণ্ডকে তৎকালীন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার 'দুষ্কৃতী কার্যকলাপ' বলেছিল। তখন অভিযোগ উঠেছিল, স্টেইনসের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের ধর্মান্তরণের অভিযোগ তুলে লাগাতার প্রচার করেছিল বজরং দল-সহ কিছু কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তার ফলেই এই হত্যা। বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছিল, ২০০৭-২০০৮ সালে ওড়িশার কন্ধমল জেলায় গোষ্ঠী হিংসায় শতাধিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রাণ হারিয়ে ছিলেন। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল একাধিক গির্জা ও বাড়ি। সেবারও এই হত্যাকাণ্ডের আঙুল উঠেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, বনবাসী কল্যাণ পরিষদের মতো সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ সংগঠনের দিকে।
আরও পড়ুন- ২২ জানুয়ারিই বজরং দলের হাতে হত্যা হয় পাদ্রীর! প্রাণ প্রতিষ্ঠার আড়ালে হারাচ্ছে যে ঘটনার স্মৃতি
দারা সিং গো সুরক্ষা সমিতিরও একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বিজেপির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা দারা ১৯৯৮ সালের নির্বাচনের সময় বিজেপির হয়ে প্রচারও করেছিলেন। পটনায় ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময়ও বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন দারা সিং। যেহেতু ওড়িশায় গোহত্যা নিষিদ্ধ তাই দারা সিং প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গের গরু পরিবহনকারী ট্রাকগুলিকে আটকাতেন, পশুদের ছেড়ে দিতেন এবং ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় লোকজনের কাছে ওই গরু বিতরণ করে দিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন দারা। সেই কারণেই গ্রাহাম স্টেইনস মামলা চলাকালীন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পলাতক থাকার পরও গ্রামের কিছু লোকই তাকে আশ্রয় দিয়েছিল।
দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ ওড়িশা সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছে, "এক্ষেত্রে আবেদনকারীর অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর।" এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ওড়িশা সরকারের মতামতও চেয়েছে। বলে রাখা দরকার, দারার পক্ষে যে আইনজীবী আদালতে আবেদন জানিয়েছেন, তিনি জ্ঞানব্যাপী এবং মথুরা শাহি ইদগাহ মামলায় হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন। স্টেইনস হত্যাকাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল বজরং দলেরও। কট্টর হিন্দুত্ববাদী দারা বজরং দলের ঘনিষ্ঠ বলেই জানা গিয়েছিল। বজরং দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি ছিলেন প্রতাপ ষড়ঙ্গী। তিনি আবার নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য তথা বালেশ্বরের বর্তমান বিজেপি সাংসদ। সেই সময় দারা সিংয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও ছাড়া পেয়ে যান প্রতাপ। অভিযোগ উঠেছিল, তাঁকে নাকি লাগাতার জেরাও করেননি সরকারি আইনজীবী। স্টেইনস হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই বলে জানিয়েছিলেন প্রতাপ।
বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন দেশের পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগীররা। দিল্লির যন্তর মন্তরে দীর্ঘদিন প্রতিবাদ করেন তারা। তবুও ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করেনি বিজেপি সরকার। ২০২২ সালে জুনিয়র মহিলা অ্যাথলেটিক্স কোচ অভিযোগ তুলেছিল মোদির মন্ত্রিসভার সন্দীপ রায়ের বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পরও মুদ্রণ ও স্টেশনারি মন্ত্রী ছিলেন তিনি। তিনি চণ্ডীগড় আদালতে আগাম জামিন চেয়েছিলেন এবং তা পেয়েও গিয়েছিলেন। দু'বছর আগে গুজরাতের আদালতে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গা পর্বে বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১জন ধর্ষক ও খুনির মুক্তির আবেদন জানানো হয়েছিল। শেষে ১১ জন ধর্ষক ও খুনি মুক্তিও পায়, তাদের ফুলের মালা দিয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন গেরুয়া শিবির ঘনিষ্ঠরা। দারা সিংয়ের এই আবেদন কি তবে মুক্তির লক্ষ্যেই?