ডুবে ডুবে জল খাওয়া না কি গভীর প্রণয়, কেমন সম্পর্ক ছিল ইমরান-মুনমুনের?

ইমরানের ব্যক্তিগত জীবন আট বা নয়ের দশকের বহুচর্চিত বিষয়। বরাবর বহুনারীসঙ্গের বিতর্কে নাম উঠে এসেছে তাঁর। রাজনীতিতে আসার আগে পর্যন্ত এই নিয়ে রাখঢাক করা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি ‘কাপ্তান’। বরং বিষয়টা উপভোগই করেছেন। বিভিন্ন সময় এ-বিষয়ে সংবাদপত্রকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার এর সাক্ষ্য দেবে। লাইমলাইট এবং বিনোদনের জগতের প্রতি ইমরানের একটা সহজাত ঝোঁক ছিল। জমিদার পরিবারের সন্তান, বাবা নামকরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার; একদিকে সামন্ত ঐতিহ্য, অপরদিকে হোয়াইট কলার চাকরির আভিজাত্য– এই দুইই সম্ভবত ইমরানের এই ঝোঁকের জন্য দায়ী। পরবর্তীতে নিজেও আলোর জগতের একজন হয়ে ওঠা এই আগুনে আরও হাওয়া দিয়েছিল। সেই কারণেই, কখনও বলিউড, কখনও হলিউড–কাপ্তানের গতায়াত সর্বত্র। প্রচুর বলিউড অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে। 

বিখ্যাত মডেল ম্যারি হেলভিন বলেছিলেন, “ইমরানের প্রেমে পড়তেই হয়, ওর এমন একটা গন্ধ রয়েছে! মেয়েরা পাগল হয়ে যায় সেই গন্ধে।” এরপর হলিউডের অভিনেত্রী গোল্ডি হউনের সঙ্গে ইমরানের সম্পর্কের ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আসে। এমা সার্জেন্ট নাম্নী এক ব্রিটিশ চিত্রকরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অনেকদিন। কিন্তু বিয়ের কথা কখনও ভাবেননি তাঁরা। ইমরানের বহুগামী ঝোঁকের কথাও সর্বজনবিদিত। একই সঙ্গে একাধিক সম্পর্কে থেকেছেন সময়ে সময়ে। ‘ক্যাসানোভা’-জাতীয় একটা ভাবমূর্তি সচেতনভাবে নির্মাণ করতেন তিনি। তাঁর মোট পাঁচ জন অবৈধ সন্তানের কথা জানা যায়। সংখ্যাটা আরও বেশিও হতে পারে। তাঁদের মধ্যে ভারতীয়ও রয়েছেন। শোনা যায়, সেই ভারতীয় সন্তানদের মধ্যে একজনের বয়স বর্তমানে ৩৪ বছর। এবং তিনি বিবাহিত। এও শোনা যায়, ইমরানের যাবতীয় গুপ্তকথা যদি কেউ জেনে থাকেন, তবে তা তাঁর প্রথম স্ত্রী জেমাইমা। যদিও সেই বিয়ের পরেও যাপন যে বদলাননি ইমরান– সে বিষয়ে আলোকপাত করেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রেহম, নিজের আত্মজীবনীতে। 

যেহেতু সিনেমা জগতের বহু নামের সঙ্গে ইমরানের নাম জড়িয়ে, জিনাত আমন থেকে রেখা হয়ে শাবানা অজমি– কাজেই সেখানে এক বাঙালি অভিনেত্রীর নাম উঠে আসা খুব বিস্ময়কর ব্যাপার না। কে তিনি? বাঙালির চিরদিনের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কন্যা মুনমুন সেন, যাঁর আবেদন নিয়ে একসময় বঙ্গমানসে আগ্রহের শেষ ছিল না। ১৯৮৪-তে ‘অন্দর বাহার’ ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে যাত্রা শুরু মুনমুনের। প্রথম হিন্দি ছবিতেই নিজের ‘সাহসী’ ভাবমূর্তি নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। অনিল কাপুর ও জ্যাকি শ্রফের সঙ্গে মুনমুনের অভিনীত এই ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপরে নানা প্রোজেক্টের অফার আসতে থাকে। তবে ইমরানের মতোই বর্ণময় জীবন মুনমুনেরও। বরাবরই নানা গুজব ছড়িয়েছে তাঁকে নিয়ে। বিতর্কের শীর্ষে থেকেছেন মুনমুন। এমন মিল মানুষকে বন্ধুত্বের দিকে ঠেলে দেয় কখনও-সখনও। পরস্পরের প্রতি সমানুভূতিশীল করে তোলে। ফলে ইমরান এবং মুনমুন যে নির্ভার একটি সম্পর্কের দিকে এগোবেন– তা আর আশ্চর্য কী! ইমরান খানের সঙ্গে মুনমুনের নাম যে-সময় জড়াল, সে-সময় মুনমুন বিবাহিত। ভারতীয় সমাজে পরচর্চার এটি অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। পরকীয়া নিয়ে দেশের মানুষের আগ্রহ নেহাত কম না।

দ্রুত চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে তাঁদের সম্পর্ক। এ-সময় একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও ইমরান ও মুনমুনকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যায়। যখন মুনমুনকে ইমরানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন মুনমুনের খোলামেলা জবাব গ্রহণ করার ক্ষমতা ছিল না এ সমাজের। তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, “ইমরানের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভাল লাগে। ওকে খুব পছন্দ করি। আমার স্বামীও সে-কথা জানেন এবং আমাদের মেলামেশায় ওঁর কোনও সমস্যাই নেই। লোকের এত কীসের অসুবিধে বুঝি না!”  কিন্তু খোলাখুলি বয়ানের ফল খুব একটা ভাল হয় না। ধীরে ধীরে গৃহবন্দি হতে হয় মুনমুনকে, এক প্রকার বাধ্য হয়েই।

কিন্তু সে তো গেল ইতিহাসের কথা। সেই আট-নয়ের দশকের বিতর্ক মানুষ ভুলতে বসেছিল। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতি এবং নির্বাচন এমন জিনিস, যা প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্য তাঁদের অতীতকে, ব্যক্তিজীবনের নানা ঘটনাকে দুর্বলতা হিসেবে, বিচ্যুতি হিসেবে উপস্থাপিত করে এবং সেই অপমান ভাঙিয়ে ফায়দা তোলার পরিসর তৈরি করে। ২০১৯-এ ফের ইমরান-সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মুনমুনকে। কারণ, ইমরান ও মুনমুন– দু’জনেই ততদিনে সংসদীয় রাজনীতিতে এসেছেন। ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের মুখে দাঁড়িয়ে ইমরানের সঙ্গে কথা এরপরে কখনও বলবেন কি না– এ-জাতীয় প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। “কেন বলব না? আশচর্য! ও তো বন্ধু আমার!” স্পষ্ট জানান মুনমুন। তবে কিনা, হাজার বিপত্তি একবার পেরিয়ে এবার সতর্ক তিনি। তুলনামূলকভাবে অভিজ্ঞও। বলেন, “আমরা বন্ধুই। আর কোনওরকম সম্পর্ক ওর সঙ্গে নেই। কিন্তু এই জাতীয়তাবাদী ধুয়ো তুলে যে রাজনীতি চলছে তা খুবই মারাত্মক।” তবে এখানেই থামেননি সাংবাদিক। ভারতের তরফ থেকে তাঁকে গুপ্তচরবৃত্তি করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি কী করবেন– এই প্রশ্নও করা হয় তাঁকে। উত্তরে মুনমুন সাবলীলভাবে জানান, এই ধরনের গুরুদায়িত্ব কখনওই তাঁকে দেওয়া হবে না, এ মিথ্যে জল্পনা। নিজে থেকে এইসব ব্যাপার নিয়ে ইমরানের সঙ্গে কখনওই কথা বলতে তিনি উদ্যোগী হবেন না, এবং তাঁকে কেউ বলবেনও না এমন করতে– মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত দক্ষ নেত্রী, তিনি কখনওই মুনমুনের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের ফায়দা তুলবেন না। সে-বিশ্বাস মমতার ওপর রয়েছে বলেই জানান অভিনেত্রী। মুনমুনের বয়ানে, “কলকাতায় ইমরানের অনেক বন্ধু রয়েছে, আমার স্বামীও ওর বন্ধু।”

 

More Articles