সৌদি আরবের মাটিতে 'কাটোঁ কা টক্কর', মেসি না রোনাল্ডো, দিনের শেষে এগিয়ে রইলেন কে?

Messi vs Ronaldo in Saudi Arabia : উল্টোদিকে যে মেসি বনাম রোনাল্ডো! বহু বছর পর ফের মুখোমুখি। এই সুযোগ কি ছাড়া যায়!

শেষ কবে তাঁরা একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন, মনে নেই অনেকেরই। বহু দিন হয়ে গেল, ময়দানে পরস্পরের মুখোমুখি হননি তাঁরা। বল পায়ে একে অন্যকে মেপে নিতে পারেননি। সেই সুযোগই আসেনি। মেসি বনাম রোনাল্ডোর দ্বন্দ্ব আজও সেই জায়গাতেই রয়েছে। স্পেনের এল ক্লাসিকো অর্থাৎ রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ম্যাচে বারবার দেখা গিয়েছে লড়াইটা। স্রেফ সেটা দেখতেই রাতের পর রাত জাগা। চায়ের দোকানে, বন্ধুদের আড্ডায় জোর তর্ক। একটা সময় সেটাই ছিল রোজনামচা। তারপর পৃথিবীর ওপর দিয়ে বয়ে গেল সময়ের ঝড়। বহুদিন পর ১৯ জানুয়ারি ফের মুখোমুখি হলেন দু’জনে। এবার ইউরোপে নয়; আরবের মাটিতে মহারণে নামলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

মাঝখানে অবশ্য অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে আরবের আল নাসেরে যোগ দিয়েছেন রোনাল্ডো। কাতারে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে রিজার্ভ বেঞ্চেই কেটেছে বেশিরভাগ সময়। সেভাবে ফুটে উঠতে পারেননি সিআর সেভেন। অন্যদিকে, বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখানো থামাননি মেসি। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়, গোলের বন্যা, সঙ্গে আস্ত বিশ্বকাপ জয় – ২০২২ মেসির কাছে স্বপ্নের। তার এক বছর আগে কোপা আমেরিকাও জিতেছেন। বিশ্বকাপের পর ক্লাব পিএসজির হয়ে নেমে ফের গোল করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ছন্দে রয়েছেন এলএম ১০।

এসবের মধ্যেই ১৯ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাতে মুখোমুখি হল পিএসজি এবং রিয়াধ সিজন একাদশ। সৌদির সেরা দুই দল, আল হিলাল ও আল নাসেরের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই দলটি। তারই অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। উল্টোদিকে পিএসজির হয়ে কেলর নাভাস, মেসি, নেইমার, এমবাপে, সার্জিও রামোস, হাকিমি – তারকাখচিত দল। এর আগে মাঠ জুড়ে এমন তারকার ছড়াছড়ি দেখেনি কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। হোক না প্রদর্শনী ম্যাচ, তাতে কি! উল্টোদিকে যে মেসি বনাম রোনাল্ডো! বহু বছর পর ফের মুখোমুখি। এই সুযোগ কি ছাড়া যায়!

ম্যাচও জমিয়ে রাখলেন দুজনে। মেসি ও রোনাল্ডো – মাঠের মধ্যে জাদু ছড়াতে কেউই কমতি রাখেননি। ম্যাচ শুরুর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় রিয়াধ একাদশের জালে বল জড়ান মেসি। সেই চেনা ছন্দ, চেনা ম্যাজিক। রণডঙ্কায় ফুৎকারটা তখনই দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। গোলের নিচে আল ওয়েয়িস, সৌদির সেই গোলকিপার যিনি আর্জেন্টিনাকে আটকে দিয়েছিলেন। তাঁকেই পরাস্ত করে বদলা নিয়েই নিলেন মেসি।

তবে ফিরতি ঝটকা এল রোনাল্ডোর তরফে। ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি দিয়ে গোলের পর সেই পরিচিত ‘সিউউউউ’ সেলিব্রেশন। হাফ টাইমের অতিরিক্ত সময়ে ফের দুরন্ত গোল করলেন রোনাল্ডো। তাঁর শট পিএসজির গোলপোস্টে লেগে ফিরে এসেছিল। ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে বাঁ পায়ে জোরালো শট মেরে জালে বল জড়ালেন রোনাল্ডো। যেন বলে দিলেন, আমি এখনও ফুরোইনি। সামান্য খারাপ সময় চলছিল মাত্র। ফের বীরবিক্রমে মাঠে নামবেন, গোলও করবেন।

এমন হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখার জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন সবাই। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ৬ টি গোলের সাক্ষী ছিল বিশ্ব। আর সৌদি আরবের মাটিতে মেসি বনাম রোনাল্ডো ম্যাচে গোল হল মোট ৯ টি! মেসির একটি, রোনাল্ডোর দুটি। পাশাপাশি গোল পেলেন আরও দুই মহাতারকা কিলিয়ান এমবাপে ও সার্জিও রামোস। কিন্তু গোল পাননি নেইমার। শেষমেশ ৫-৪ গোলে শেষ হল ম্যাচ। রোনাল্ডোদের হারিয়ে শেষ হাসি হাসলেন মেসি-এমবাপেরাই।

কিন্তু সবকিছুর বাইরে গিয়ে মন জিতে নিলেন মেসি এবং রোনাল্ডো। গোলের বিচারে এগিয়ে রইলেন সিআর সেভেন। জয়ের হাসি ফুটল মেসির মুখে। গোল করার পাশাপাশি মেসি ম্যাজিকেরও সাক্ষী থাকল আরব্য রজনীর দেশ। ঠিক যেন উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা একটি রাত। সেয়ানে সেয়ানে টক্করের শেষে দুজনের মুখেই হাসি। বয়স হয়েছে; কিন্তু ঝাঁঝ কারোরই কমেনি এতটুকুও। সেই চেনা দ্বৈরথ নিশ্চয়ই দারুণ উপভোগ করলেন মেসি আর রোনাল্ডো!

More Articles