নারী মুক্তি নারী শক্তি, ফিরে দেখা নারী দিবসের ইতিহাস

"নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেহ নাহি দিবে অধিকার
হে বিধাতা?

নত করি মাথা
পথ প্রান্তে কেন রব জাগি
ক্লান্ত ধৈর্য্য প্রত্যাশার পূরণের লাগি
দৈবগত দিনে।"

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রবীন্দ্রনাথেক এই কবিতা খানি বারংবার মনের গহিনে উঁকি দেয়। আজকের দিনটি প্রতিবছর নানানরকম ভাবে আমরা পালন করি। কিন্তু অনেকেই হয়তো আর স্মরণ করেন না এই দিনটির আসল তাৎপর্য।

১৮৫৭সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুতা কারখানায় মহিলা শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে প্রথম আন্দোলন করে।পুরুষরা ৮ ঘন্টা কাজ করলেও মেয়েদের ১২ ঘন্টা কাজ করতে হতো এবং পারিশ্রমিকও তারা কম পেতো।কারন মালিকের ধারণা ছিলো মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় কম কাজ করে। কাজের সময় ১২ ঘন্টা থেকে ৮ঘন্টা এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক আদায়ের জন্য মেয়েরা পথে নামে। সেই শুরু,এরপর আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস।নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের "সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট"-নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী 'ক্লারা জেটকিন'-এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৭টি দেশ থেকে মোট ১০০জন নারী প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।১৯১০ সালের ৮-ই মার্চ এই দিনটি নারী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন ক্লারা জেটকিন। কিন্তু বিরোধীতার শেষ ছিলোনা।তাই ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে ১৯১১ সালের ১৯শে মার্চ গোটা ইউরোপ জুড়ে মহিলারা রাস্তায় বেড়িয়ে এলেন। মহিলাদের ভোটাধিকার,তাদের জনপ্রতিনিধি হবার অধিকার এবং একই সঙ্গে কাজের জন্য পুরুষ দের সমান মজুরীর দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠলো ইউরোপের শহরের রাজপথগুলি।

এরপর কেটে গেলো আরোও ৬ বছর।১৯১৭ সাল।পেত্রোগ্রাদ।সেই ৮-ই মার্চ।শহর জুড়ে মহিলারা রাস্তায় বেড়িয়ে এলেন। সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিলেন। তাদের দাবি-"রুটি আর শান্তি"।যুদ্ধের অবসান হোক। রাশিয়ার 'জার' নিপাত যাক্।সূচনা হলো ফ্রেব্রুয়ারি রেভোলিউশন-এর।সূচনা হলো International Working Women's Day-এর।

দুনিয়া কাঁপানো দশদিনের সমাপ্তি শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস কে ছুটির দিন ঘোষণা করা হলো।আলেক্সান্দ্রা কোলোনতাই,এমা গোল্ডম্যান, নারী অধিকারের পক্ষে বক্তব্য রাখলেন। কিন্তু তখনো সম্পূর্ণ জয় আসেনি। ইংল্যান্ডে মহিলাদের ভোটাধিকারের দাবীতে শহীদ হলেন এমিলি ডেভিডসন।জেলে অনশনরত মহিলাদের গলা বা নাক দিয়ে জোর করে টিউব ঢুকিয়ে তাদের খাওয়ানোর চেষ্টা চলতে লাগল। ইতিমধ্যেই সোভিয়েতে কোলোনতাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চালু হলো নতুন সিভিল আইন। ডিভোর্স,যৌনতা, অ্যাবর্শন,মাতৃত্ব,-সব  নিজস্ব বিষয়গুলিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল।মাতৃত্ব, উত্তরাধিকার, সম্পত্তি সবকিছুতেই নারীদের সামনে এক নতুন উন্মেষ ঘটল।

১৯২৮-এ ইংলন্ডে মহিলারা ভোটাধিকার পেল। এরপর কেটে গেলো বহু দশক। একে একে এলো জয়, শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, ভোটদানের অধিকার ইত্যাদি। ভারতে তখন লড়েছিলেন সাবিত্রীবাই ফুলে,বেগম রোকেয়া, সাখাওয়াত হোসেন। এরপর এল সেই দিন- ১৯৭৭ সাল। United Nations-এ প্রস্তাব পাশ হলো, বিশ্বজুড়ে ৮-ই মার্চ নারী দিবস ঘোষনার। International Working Women's Day হয়ে গেলো International Women's Day.

More Articles