রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারীকে হত্যার চেষ্টা, এবার লক্ষ্য স্বয়ং পুতিন?

পুতিনের ডানহাতকে হত্যার চেষ্টার পরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এবার কি আততায়ীদের মূল লক্ষ্য রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট?

 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে বিশ্ব, তখনই পুতিনের সহকারী নিকোলাই পত্রুশেভকে হত্যার চেষ্টা নিয়ে তোলপাড় রাশিয়ার রাজনীতি। ৭১ বছরের নিকোলাইকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডানহাত বলা যেতেই পারে। রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমানে ক্রেমলিনের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিকোলাই পত্রুশেভকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়তেই দ্রুততার সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। রাশিয়ার প্রশাসনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম জেনারেল এসভি আর সূত্রের খবর, ডাক্তারি পরীক্ষায় পত্রুশেভের দেহে বিষপ্রয়োগের প্রমাণ মিলেছে।

মস্কোর ক্ষমতার অন্দরমহলে নিকোলাই পত্রুশেভ যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য মুখ। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে প্রায়শই দেখা মেলে পত্রুশেভের। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের উপর অগাধ আস্থা প্রেসিডেন্ট পুতিনের। বর্তমানে পুতিনের শারীরিক অবস্থা খুব ভালো যাচ্ছে না। যখনই প্রেসিডেন্ট চিকিৎসার জন্য দেশে অনুপস্থিত থাকেন, মস্কো শাসনের দায়ভার তখন বর্তায় নিকোলাই পত্রুশেভের ওপর। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও পুতিনের অন্যতম ভরসা পত্রুশেভ। ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্তের জন্য দেশের অন্দরে, এমনকী, বিভিন্ন শক্তিধর দেশের কাছেই নিন্দার মুখে পড়তে হয়েছে রাশিয়াকে। এই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ও মূল কারিগর নিকোলাই পত্রুশেভ।

নিকোলাই পত্রুশেভের ছেলে দিমিত্রি বর্তমানে পুতিন প্রশাসনের কৃষিমন্ত্রী। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা ভবিষ্যতে যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে হাঁটেন সেক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদের অন্যতম দাবিদার দিমিত্রি পত্রুশেভ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রাশিয়ার এহেন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর ওপর বিষপ্রয়োগের ঘটনা কি আসলে রাষ্ট্রনায়ক পুতিনকেই সতর্ক করা? বিষপ্রয়োগে নিকোলাই পত্রুশেভ অসুস্থ হওয়ার পরই জরুরি ভিত্তিতে এই হত্যার চেষ্টার তদন্তে নেমেছে রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ। চূড়ান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এই অন্তর্ঘাতের পিছনে কারা জড়িয়ে রয়েছে!

আরও পড়ুন: গোপনে রাশিয়াকে সাহায্য? জেলেনস্কির নয়া সিদ্ধান্তে জল্পনা ইউক্রেনের গুপ্তচরদের নিয়ে

এমনিতেই রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শত্রুসংখ্যা কম নয়। বিশ্বের রাজনীতিতে যত নিজের প্রভাব বিস্তার করেছেন পুতিন, ততই তাঁর প্রতি বিরূপ হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা। রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখনও ওয়াশিংটন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পুতিনের যুদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করে। শুধু তাই নয়, রাশিয়াকে কুপোকাত করতে ইউক্রেনকে অর্থ ও সেনা-সাহায্য পাঠাতেও সম্মত হয় পশ্চিমি দুনিয়ার দেশগুলি।

ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ দাবি করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সংবাদমাধ্যমে বুদানভ দাবি করেন, প্রায় দুই মাস আগে ককেশাস থেকে আসা ভাড়াটে গুন্ডার দল প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের কঠোর নিরাপত্তার ব্যূহ ভেদ করে তাঁকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি আততায়ীদের পক্ষে। অন্য এক দাবিতে কিরিলো আরও দাবি করেন, পুতিনের স্বাস্থ্যের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্য ক্রেমলিনের অন্দরে খুব শীঘ্রই অশান্তি তৈরি হতে চলেছে। যদিও ইউক্রেনের এইসব দাবিই নাকচ করে দেন পুতিনের দীর্ঘদিনের সহযোগী বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাসেঙ্কো।

রাশিয়ার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ধারণা প্রেসিডেন্ট পুতিনের কোনও শত্রুই তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নিকোলাই পত্রুশেভকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তাঁদের মতে, ২০০৪ সালে পুতিন জর্জিয়া আক্রমণের পর থেকেই জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের সদস্যরা রাশিয়ার বিভিন্ন প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্তাদের জীবননাশের চেষ্টা করে চলেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করার পরে ইউক্রেন ও অন্যান্য বিরোধী সংগঠন ও পুতিন প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। ২০১৭ সালে চলচ্চিত্রকার অলিভার স্টোনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁকে অন্তত ৫ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যদিকে মার্চ মাসের শুরুর দিকে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের এক সেনেটর রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হত্যার দাবি তোলেন। পুতিনের ডানহাতকে হত্যার চেষ্টার পরে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এবার কি আততায়ীদের মূল লক্ষ্য রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট?

 

More Articles