গোপনে রাশিয়াকে সাহায্য? জেলেনস্কির নয়া সিদ্ধান্তে জল্পনা ইউক্রেনের গুপ্তচরদের নিয়ে

সরগরম পরিস্থিতির মধ্যেই নিজের দেশের দুই উচ্চপদস্থ আধিকারিককে অপসারণ করলেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি।

 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় ছয় মাস অতিক্রান্ত। এই ছয় মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন কোনও পক্ষই যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে আনেনি। বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের এই দীর্ঘ যুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে জড়িয়ে পড়া আরও জটিল করেছে পরিস্থিতি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গোটা বিশ্বে তৈরি হয়েছে এক নতুন সমীকরণও। ব্রিটেন, আমেরিকার মতো একাধিক দেশ অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে ইউক্রেনকে। এই সরগরম পরিস্থিতির মধ্যেই নিজের দেশের দুই উচ্চপদস্থ আধিকারিককে অপসারণ করলেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি।

ইউক্রেনের গুপ্তচর সংস্থার প্রধান এবং ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলকে নিজেদের পদ থেকে বরখাস্তর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রাশিয়ান অনুপ্রবেশের চেষ্টা যুদ্ধের প্রথম থেকেই ছিল। এই দুই আধিকারিকের অপসারণ প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিতে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, "এখনও অবধি প্রায় ৬০ জন প্রাক্তন ইউক্রেন সরকারের আধিকারিক রাশিয়ার হয়ে গোপনে কাজ করে চলেছে। এই দুই আধিকারিকের বিভিন্ন কার্যকলাপ এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতেই আমরা এই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।"

এই প্রসঙ্গে ইউক্রেনিয়ান টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক ও প্রেসিডেন্ট-ঘনিষ্ঠ আন্দ্রি স্মিরনভ জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থেই সাময়িকভাবে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের দুই সরকারি সংস্থার আধিকারিককে। অপসারিত দুই ইউক্রেন সরকারের আধিকারিক ইভান বাকানভ এবং ইরিনা ভেনেকদিক্তোভার বিরুদ্ধে তদন্তের পর তাঁদেরকে আবার পদে বহাল করা হতে পারে বলেই মন্তব্য করেছেন স্মিরনভ। এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে স্মিরনভ বলেছেন, "এই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার একাধিক প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে।রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইকে কেউ যদি কোনোভাবে নষ্ট করার চক্রান্ত করে তাহলে ইউক্রেন সরকারকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমার ধারণা এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সিদ্ধান্ত একদম যথাযথ।"

আরও পড়ুন: মানুষের আস্থা ফিরবে? শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের আসল পরিচয় জানুন

অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে রাশিয়া গোপনে ইউক্রেনের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এমনকি তাঁদেরকে সরাসরি প্রভাবিত করে ইউক্রেনকে নিজেদের কবজায় আনতে চেষ্টা করেছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই এই ব্যাপারে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে সরব হয়েছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। শুধুমাত্র এই দুই উচ্চপদস্থ আধিকারিকই নয়, ইউক্রেনের গুপ্তচর সংস্থার একাধিক কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধেই রাশিয়ার সঙ্গে গোপন আঁতাঁতের প্রমাণ মিলেছে। যুদ্ধের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে মস্কোর এই কৌশল ইউক্রেনের মানুষজনের কাছে খুবই পরিচিত বিষয়। সুদূর অতীত থেকেই রাশিয়ান গুপ্তচর সংস্থা ইউক্রেনের ভেতর থেকে নানা গোপন তথ্য পাচারের কাজ করে চলেছে।

কারা এই ইভান বাকানভ এবং ইরিনা ভেনেকদিক্তোভা?
২০১৯ সালে ইউক্রেন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির হয়ে সফল প্রচারকার্য চালানোর পর ইউক্রেনের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির মাথায় বসেন বাকানভ। সেই সময় এইরকম গুরুত্বপূর্ণ পদে বাকানভের নিয়োগ নিয়ে বিরোধীদের কাছে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে কিছুদিন ধরেই বাকানভের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ পাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এমনকী, ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, তখনও দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বাকানভের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। বাকানভের অপসারণের পর তাঁর পদে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ভাসিল মালুক।

আবার অন্যদিকে আইনি দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণ করা হয়েছে ইরিনা ভেনেকদিক্তোভাকে। ২০২০-তে প্রসিকিউটর জেনারেলের পদে বসেন ইরিনা। বেশ কিছুদিন ধরেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সতর্ক করা হচ্ছিল ইরিনাকে। গত জুন মাসেই একটি সংবাদ বিবৃতিতে ইরিনা জানিয়েছিলেন এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ঘটে যাওয়া প্রায় ২১,০০০ অপরাধের তদন্তভার হাতে নিয়েছে তাঁর সংস্থা।

যেভাবে প্রতি মুহূর্তেই ইউক্রেনের প্রশাসনিক বিভাগে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ও গোপন যোগাযোগ বেড়ে চলেছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে বরখাস্ত হতে পারেন আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক। যুদ্ধের মাঝে এই ধরনের প্রশাসনিক সমস্যা নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে রাশিয়াকে এবং চাপের মুখে ফেলবে জেলেনস্কি প্রশাসনকে।

 

More Articles