অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট! কোন কোন ভুল সিদ্ধান্তে এশিয়া কাপে ভরাডুবি ভারতের

Asia Cup, Team India: এশিয়া কাপের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নিলে ইন্ডিয়া-কে হোঁচট খেতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।

ফেভারিট হিসেবেই এশিয়া কাপে নিজেদের যাত্রা শুরু করেছিল সাত বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। কিন্তু গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত দাপটের পর সুপার ফোরে উঠতেই খেই হারিয়ে ফেলে রোহিত শর্মার দল। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই আশায় ছিলেন, ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল দেখার। ফাইনালের দিনক্ষণও ঠিক করা হয়েছিল রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দেখে। তবে কে জানত, গ্রুপ পর্বে দুরন্ত ছন্দে থাকা এই দলটির এমন অবস্থা হবে!

সুপার ফোর স্টেজে পাকিস্তানের কাছে হারের পর শ্রীলঙ্কার কাছেও হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় একপ্রকার নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া-র। কাগজ-কলমে যা একটু আশা বেঁচে ছিল, তাও। শেষ ম্যাচে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেই আশাও শেষ করে দেয়। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুবাইয়ে শিরোপার লড়াইয়ে নামে পাকিস্তান। এবং রাজার মতো খেলে ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা। বিগত মাসগুলোতে শ্রীলঙ্কার আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যেরকম হয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে এই এশিয়া কাপ জয় নিঃসন্দেহে অক্সিজেন জোগাবে শ্রীলঙ্কাবাসীকে। তবে আজ আমাদের আলোচনার বিষয় ভারতের ভরাডুবি। এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ শিরোপাধারী ভারতের এমন ভরাডুবি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে মোটামুটি ভাবে বেশ কয়েকটি কারণ স্পষ্ট। চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।

সুপার ফোরে ভারতের টানা দুই হারের পিছনে বড় কারণ ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতা। ভারতীয় দলে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই, কিন্তু পাকিস্তানের আসিফ আলির মতো এক ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন, এমন ব্যাটসম্যান নেই। যদিও দীনেশ কার্তিকের মতো ফিনিশার ছিলেন রোহিতদের দলে। কিন্তু প্রথম ম্যাচের পর দলে জায়গাই পাননি এই উইকেটকিপার-ব্যাটার। তার বদলে ঋষভ পন্থকে দলে নেওয়া হলেও তেমন কিছু করতে পারেননি তরুণ এই ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ঋষভের জঘন্য কিপিংয়ের জন্য ম্যাচ হেরেছে ভারত।

আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টির রমরমায় ক্রিকেটাররা এখন কর্পোরেট চাকুরে?

এছাড়া টুর্নামেন্টের মাঝপথে রবীন্দ্র জাদেজার মতো অলরাউন্ডারের চোটে পড়াও ভুগিয়েছে ভারতকে। এশিয়া কাপ তো বটেই, ইনজুরি-তে পড়ে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে গেছেন এই অলরাউন্ডার। জাদেজা-র চোট পাওয়ার ধরনের তার ওপর ক্ষেপে আছে নির্বাচকদের একাংশ। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুসুলভ আচরণ করে ইনজুরি-তে পড়েছেন জাদেজা। একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রথম একাদশে পরিবর্তন আনতে হয়েছে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। জাদেজা-র বদলে ফিনিশার হিসেবে খেলিয়েছেন অলরাউন্ডার দীপক হুডাকে। দীপক হুডা ওপরের দিকে ব্যাট করেন, কেন তাঁকে জাদেজার মতো সাত নম্বরে ব্যাট করানো হলো, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। প্রাক্তন ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পার মতে, দলে দীনেশ কার্তিকের মতো দারুণ ফর্মে থাকা ফিনিশারকে সাত নম্বরে ব্যবহার না করা বোকামি।

Ravindra Jadeja

চোটের কারণে মাঠের বাইরে রইলেন রবীন্দ্র জাদেজা

ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া ট‍্যুইটারে লিখেছেন, "বোলিং ভারতের দুর্বল জায়গা। এটার দিকে আঙুল তোলার দরকার নেই। শক্তির জায়গা ব্যাটিং, সেটাই তো জ্বলে উঠতে পারেনি। ১৫-২০ রানের ওভারগুলো নেই। এখানেই আসলে ভুল হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, ভারতের ব্যাটিং পুরো ২০ ওভার ব্যাট করতে পারছে না, যে কারণে পুরোপুরি হাতখোলা ব্যাটিং দেখা যাচ্ছে না।"

অন্যদিকে সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ঋষভ পন্থ প্রতি ম্যাচে ভালো শুরু করেও ইনিংস দীর্ঘ করতে পারেননি। যে-কারণে শুরুর দিকে কোহলি-রোহিতরা মজবুত ভিত গড়ে দিলেও শেষে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে দলকে। এশিয়া কাপ শুরুর আগেই বড় ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। টিম ইন্ডিয়ার বোলিংয়ের মেরুদণ্ড জসপ্রীত বুমরাহ ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গিয়েছিলেন। বুমরাহর অভাব গোটা টুর্নামেন্টে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ভারত। কিন্তু আরও তো বোলার ছিল, তাদের কেন নেওয়া হলো না? প্রশ্ন উঠছে উমরান মালিক কোথায়, যিনি ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন? দীপক চাহার, শার্দুল ঠাকুর কোথায়? তরুণ পেসার অর্শদীপ সিং সুপার ফোরের দুই ম্যাচে শেষ ওভারে দারুণ বল করলেও শুরুর দিকে বেশ মার খেয়েছিলেন। এছাড়া চাহালকে বল হাতে বিন্দুমাত্র বিপদজনক মনে হয়নি। প্রশ্ন উঠবে, কেন কুলদীপকে স্কোয়াডে নেওয়া হলো না।

সব মিলিয়ে এশিয়া কাপে ভারতীয় টিম ম‌্যানেজমেন্টের দল নির্বাচন থেকে শুরু করে স্ট্র্যাটেজি, সবকিছুই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ভারতীয় বোর্ড কর্তারাও ভীষণরকম হতাশ। দেড় মাস পরেই আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপেই যদি টিমের এরকম পারফরম‌্যান্স হয়, তাহলে বিশ্বকাপে কী হবে? চিন্তায় কর্তারা! শোনা যাচ্ছে, রিভিউ মিটিং ডাকা হতে পারে। সেখানে কোচ রাহুল দ্রাবিড় আর অধিনায়ক রোহিত শর্মা থাকবেন। তাঁদের থেকে জানতে চাওয়া হবে, কেন এরকম ব‌্যর্থতা। বোর্ডের এক কর্তার দাবি, “অবশ‌্যই রিভিউ মিটিং হবে। কেন বারবার এরকম ব‌্যর্থতা হচ্ছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাছাড়া যে কোনও বড় ইভেন্টের আগেই টিম নিয়ে একটা বৈঠক হয়। এবারও সেটা হবে।"

বেশিরভাগ টিম বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করে দিলেও ভারতীয় দল করেনি। আইসিসি-র তরফ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর স্কোয়াড ঘোষণার ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে। যা খবর, তাতে এই সপ্তাহের শেষ দিকে কিংবা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই দল ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।বোর্ডের অন্দরহমহলের যা খবর, তাতে বিশ্বকাপের দলে বেশ কিছু বদল হতে চলেছে। যেমন মহম্মদ শামি খুব সম্ভবত টিম ফিরতে পারেন। এশিয়া কাপের টিমে ভারতের অন‌্যতম সেরা পেসারকে না-দেখে অনেকেই রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যান। তাছাড়া এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ। পেসারদের ভূমিকাটা প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। সেখানে শামির মতো অভিজ্ঞ পেসারকে দরকার বলেই বোর্ডের অনেকেই মনে করছেন। জসপ্রীত বুমরাহ-ও চোট সারিয়ে প্রায় ফিট হওয়ার পথে। এনসিএ-তে রিহ‌্যাব পর্ব শেষ করে বোলিংও শুরু করে দিয়েছেন বুমরাহ। আর দিন কয়েকের মধ‌্যেই তিনি পুরো ফিট হয়ে যাবেন বলেই আশা করা হচ্ছে।

Jasprit Bumrah

জসপ্রীত বুমরাহ

বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটো টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবেন রোহিতরা। যা খবর, তাতে বুমরাহ ওই সিরিজেই ফিরতে চলেছেন। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির সময়ও পেয়ে যাবেন। আর এক পেসার হর্ষল প‌্যাটেলও প্রায় ফিট হয়ে গিয়েছেন। বুমরাহ-র মতো তিনিও বোলিং শুরু করে দিয়েছেন। যা শোনা যাচ্ছে, তাতে পাঁচ থেকে ছয় জন পেসার রাখা হতে পারে স্কোয়াডে।

অনেকেই বলেন, ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির খেলোয়াড়দের নিয়েই একটা আন্তর্জাতিক মানের দল দাঁড় করানো যায়। তবে একটা প্রবাদ আছে, ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’। এই ভারতীয় দলে এত সন্ন্যাসী, যে গাজনের জন্য কাকে কাকে নেওয়া হবে- সেটাই বেছে উঠতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বলাই বাহুল্য, এশিয়া কাপের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নিলে হোঁচট খেতে হবে বিশ্বকাপেও।

More Articles