অশান্ত কাশ্মীর সামলেছেন, পেয়েছেন বহু পদক || কে ভারতের নতুন সেনাপ্রধান?

আর্মি ভাইস লিউটেনেন্ট জেনারেল মনোজ পাণ্ডেকে ভারতীয় সেনাপ্রধান পদে নিয়োগ করা হয়েছে। গত তিন মাসে অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন আধিকারিকের মধ্যে তিনি প্রবীণতম। আগামী ৩০ এপ্রিল ২৯তম সেনাপ্রধান পদের দায়িত্বগ্রহণ করবেন পাণ্ডে। বর্তমান সেনাপ্রধান এম. এম. নারাভান নিজস্ব পদ ছেড়ে নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হচ্ছেন। এই মাসের শেষে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা। গত ফেব্রুয়ারিতেই লিউটেনেন্ট জেনারেল সি. পি. মহান্তি অবসর গ্রহণের পর ভারতীয় সেনা উপপ্রধান পদে নিয়োগ করা হয়েছিল তাঁকে। এর আগে ইস্টার্ন কম্যান্ডের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং ইন চিফ ছিলেন পাণ্ডে। ২০২১-এর ১ জুন এই পদ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। আন্দামান-নিকোবর কম্যান্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কম্যান্ডার ইন চিফ হিসেবে। গত ১৮ এপ্রিল তাঁকে সেনাপ্রধানের পদের জন্য মনোনীত করা হয়, আগামী তিরিশ তারিখ থেকে অফিস তাঁর হাতে ছাড়া হবে। ‘ইন্ডিয়ান আর্মি কর্পস্‌ অব ইঞ্জিনিয়ার’ থেকে ইনিই প্রথম সেনাপ্রধান হলেন।

মনোজ পাণ্ডের বাবা ড. জি. সি. পাণ্ডে ছিলেন সাইকোথেরাপিস্ট। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। মা প্রেমা অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে সঞ্চালিকার কাজ করতেন। মারাঠি পরিবারটি নাগপুরে বসবাস করত। সোমালওয়ার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে মনোজ ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন। এনডিএ জমানার পরে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন এবং অফিসার পদে আসীন হন। এরপরে পুনের কলেজ অফ মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়শোনা শুরু করেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিটেক ডিগ্রি অর্জন করেন মনোজ। ১৯৮৭ সালের ৩ মে অর্চনা সল্পেকরকে বিয়ে করেন মনোজ। অর্চনা গভর্নমেন্ট অব ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল থকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত।

'কর্পস্ অব ইঞ্জিনিয়ারস্‌'-এর একটি রেজিমেন্ট বম্বে স্যাপার্স। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বর মাসে পাণ্ডেকে এই রেজিমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। লন্ডনের ক্যাম্বারলি স্টাফ কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। সেই পড়াশোনা শেষ হলে মনোজ ভারতে ফেরেন, সে সময় তাঁকে উত্তর পূর্ব ভারতের মাউন্টেন বিগ্রেডে বিগ্রেড মেজর পদে বহাল করা হয়। সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত দক্ষ কাজের জন্য তাঁর পদোন্নতি হয় দ্রুত। লিউটেনেন্ট কর্নেল পদে আসীন হওয়ার পরে সম্মিলিত জাতপুঞ্জের ইথিওপিয়া ও এরিট্রিয়া মিশনের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন পাণ্ডে। জম্মু এবং কাশ্মীরে এলওসি-তে ১১৭ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার রেজিমেন্ট পরিচালনা করেন। অপারেশন পরাক্রম-এরও কম্যান্ডার ছিলেন মনোজ। এরপরে মধ্যপ্রদেশের মাহৌ-তে অবস্থিত আর্মি ওয়ার কলেজ থেকে উচ্চ নির্দেশনা বা হাই কম্যান্ড কোর্স করেন। কোর্স শেষে তাঁকে পার্বত্য বিভাগের আট নম্বর উচ্চ নির্দেশালয়ে কর্নেল কিউ করা হয়। সেখান থেকে প্রমোশন পেয়ে বিগ্রেডিয়ার পদ পান এবং ওয়েস্টার্ন থিয়েটারের স্ট্রাইক কর্পসের অংশ হিসেবে থাকা ইঞ্জিনিয়ার বিগ্রেডের দায়িত্ব পান। এলওসি-র বাহান্ন নম্বর ইনফ্যানট্রি বিগ্রেডও পরিচালনা করেন কিছুদিন। এরপরে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান পাণ্ডে। এই কোর্স শেষ করার পর তাঁকে ইস্টার্ন কম্যান্ডের উচ্চ নির্দেশালয়ে স্টাফ অপারেশনের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল পদে বসানো হয়।

আরও পড়ুন: জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদী সক্রিয়তা?

মেজর জেনারেলের পদে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাণ্ডে পশ্চিম লাদাখে নানা হাই অল্টিটিউড অপারেশন সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালনায় আট নং পার্বত্য বিভাগের কাজকর্ম চলে দীর্ঘদিন। এরপরে সেনা উচ্চ নির্দেশালয়ের মিলিটারি অপারেশন ডিরেক্টরেটে অতিরিক্ত নির্দেশক জেনারেল পদে কাজ করেন। কাজে খুশি হয়ে তাঁকে লিউটেন্যান্ট জেনারেল পদ দেওয়া হয়। এই সময় সাউদার্ন কম্যান্ডের কর্মচারী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পাণ্ডে।৩০ ডিসেম্বর ২০১৮-য় লিউটেন্যান্ট জেনারেল গুরুপাল সিং সংঘের কাছে থেকে তেজপুরের চতুর্থ কর্পসের দায়িত্ব নেন মনোজ। এই কর্পস্‌ উত্তর পূর্বে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি-তে প্রতি-আক্রমণমূলক কাজকর্ম চালায়। এর প্রায় দেড় বছর বাদে তাঁকে সেনা উচ্চ নির্দেশালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে ডিরেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব পান। মূলত অনুশাসন, অনুষ্ঠান এবং কল্যাণ– এই তিনটি বিষয় দেখশোনা করা ছিল তাঁর কাজ।

২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল আন্দামান নিকোবর কম্যান্ডে প্রধান নির্দেশক পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় পাণ্ডেকে। ২০২০ সালের ১ জুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বছরখানেক বাদে ইস্টার্ন কম্যান্ডের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং ইন চিফ পদে আসীন হন। আন্দামান নিকোবর কম্যান্ডের দায়িত্ব লিউটেন্যান্ট জেনারেল অজয় সিং-কে বুঝিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন কম্যান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর, গত ৩১ জানুয়ারি আর্মি স্টাফের উপপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। 

তাঁর ঝুলিতে রয়েছে পরম বিশিষ্ট সেবা পদক, অতি বিশিষ্ট সেবা পদক এবং বিশিষ্ট সেবা পদক। এছাড়াও তাঁকে আর্মি স্টাফ প্রধানের কমেন্ডেশন কার্ড ও দু'টি জিওসি-ইন-সি কমেন্ডেশন কার্ডে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

More Articles