বিদেশে ক্ষমতার পদে ফের ভারতীয়! মার্কিন মুলুকে অরুণা মিলারের জয় যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

Aruna Miller: ২০১৫ সাল। ডেমোক্রেটিক দলের সঙ্গে জুড়ে গেল অরুণার নাম। দক্ষ মিলারের উপর ভরসা করলেন নেতারা

কমলা দেবী। ঋষি। অরুণা। ভারতবর্ষের একাধিক নাগরিক খুঁজে পাওয়া যায় এই নামেই। কিন্তু বিদেশে? উপরের তিনজনের পদবি জুড়লে এঁরা সবাই বিদেশি! শুধু ভিন দেশের নাগরিক নন, বিখ্যাত নাগরিকও বটে। কিন্তু সকলেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ভারতীয় বংশের হয়েও বিদেশে বিখ্যাত হয়ে ওঠার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে আগে থেকেই। কেউ কেউ জন্ম থেকেই অন্য দেশের। আবার কেউ কেউ জন্মেছেন এদেশে, কিন্তু বাকিটা অন্য জায়গায়। দেশের প্রতি কতটা অবদান রয়েছে, আদৌ তাঁরা কতটা বিদেশি, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও একদা ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের কেউ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান! এই ঘটনাও তাক লাগিয়েছে বিশ্বকে। যে চমকের শুরু হয়েছিল কমলা হ্যারিসকে (Kamala Harris) দিয়ে। তাইই ফের মাথাচাড়া দেয় ঋষি সুনকে (Rishi Sunak) এসে। এবার সেই জল্পনা আর আলোচনার উপজীব্য হিসেবে উঠে এসেছেন আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত অরুণা মিলার (Aruna Miller)। যিনি মার্কিন মুলুকের একটি প্রদেশের লেফট্যানেন্ট গভর্নর নির্বাচিত হলেন। অন্যপদের মাধ্যমে রেকর্ড আগেই গড়েছেন কমলা হ্যারিস। ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তারপর দেশের উপরাষ্ট্রপতি হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন কমলা। যাঁর মায়ের বাড়ি এদেশেই, দক্ষিণ ভারতে। আর অরুণা নিজেই দক্ষিণ ভারতের সন্তান। প্রায় ৭ বছর বয়স পর্যন্ত কাটিয়েছেন চেন্নাইয়ে।

কী করেছেন তিনি?

আমেরিকার অন্যতম একটি জনপদ, প্রদেশ মেরিল্যান্ডের মধ্যমেয়াদি নির্বাচনে জয় পেয়েছেন অরুণা। আর এই জয়ের সঙ্গেই এই প্রদেশের প্রথম উদ্বাস্তু গভর্নর হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। এমনকী ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবেও নয়া মাইলস্টোন সৃষ্টি করেছেন তিনি।

কী কাজ করবেন অরুণা?

মূলত, বৃহৎ ওই প্রদেশের গভর্নর হিসেবে যিনি নির্বাচিত হন, তিনিই মূলত সর্বেসর্বা। সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অন্যতম থাকে। আর নির্দিষ্ট কিছু প্রশাসনিক কাজের সঙ্গেই, গভর্নর অনুপস্থিত থাকলে সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তায় লেফট্যানেন্ট গভর্নরের উপরে। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতির মতোই একটি পদ। কিন্তু এর দায়িত্ব খানিকটা বেশি, ওই প্রদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। এখানেও রয়েছে ইতিহাসের হাতছানি। এই প্রদেশের গভর্নর ওয়েস মুর কৃষ্ণাঙ্গ, যা মেরিল্যান্ড প্রদেশে প্রথম।

আরও পড়ুন- গীতা ছুঁয়ে শপথ, ঋষি সুনককে কেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানল ব্রিটেন

কে এই অরুণা মিলার?

১৯৬৪-র ৬ নভেম্বর অন্ধপ্রদেশের (তখন তেলঙ্গনা রাজ্য হয়নি) হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ভর্তি হন স্থানীয় স্কুলে। কিন্তু তাঁর যখন ৭ বছর বয়স, ঠিক তখনই মেরিন ইঞ্জিনিয়র বাবার সঙ্গে অরুণা পাড়ি দেন মার্কিন মুলুকের উদ্দেশ্যে। নিউ ইয়র্কের পাফিস্কি শহরে দুই ভাইবোনের সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন তিনি। ভর্তি হন মিসৌরির একটি কলেজে। এই শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রযুক্তিবিদ্যায় এগোন পড়াশোনা। এরপর চাকরি সূত্রে তিনি কাজ শুরু করেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখান থেকে ভার্জিনিয়া, হাওয়াই সরকারের হয়েও কাজ করতে শুরু করেন অরুণা।

অরুণার আমেরিকা-যাপন

কাজ চলতে চলতে তাঁর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে মানুষের সমস্যার কথা। এর মধ্যে ১৯৯০ সাল নাগাদ তিনি চলে এসেছেন মেরিল্যান্ডে। একাধিক সংস্থায় কাজ, পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য হিসেবে যোগদান। এর সঙ্গেই একাধিক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে তাঁর ছাপ রাখেন অরুণা। অনগ্রসর শ্রেণি, আর্থিকভাবে দুর্বলদের জন্য সহযোগিতা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান অধিকার, শিক্ষার প্রসার; সব ক্ষেত্রেই ভূমিকা পালন করেন তিনি। হাউস ওয়েস অফ্ মিনস কমিটি, অ্যাপরেসিয়েশন কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করতে থাকেন অরুণা। তাঁর ভূমিকা ছিল সবেতন পারিবারিক ছুটির মতো ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে। ২০০০ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান তিনি।

রাজনীতিতে অরুণা

২০১৫ সাল। ডেমোক্রেটিক দলের সঙ্গে জুড়ে গেল অরুণার নাম। দক্ষ মিলারের উপর ভরসা করলেন নেতারা। মেরিল্যান্ডের সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটল তাঁর। যে অরুণা এতদিন ইন্দো ভারত সম্পর্ক এবং তার প্রয়োগে সচেষ্ট ছিলেন তিনিই এবার উঠে এলেন প্রশাসনে। যদিও এর আগেও মেরিল্যান্ডের প্রায় ১৫টি জেলার প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যদিও একবার মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হারেন অরুণা। দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা সোসাইটির সভাপতি তিনি। এমনকি মন্টেগমরি কমিটির অন্যতম সদস্য অরুণা।

আরও পড়ুন- কুকথাই অস্ত্র! পঞ্চায়েত ভোটের আগে শুভেন্দুকে এভাবেই বিপাকে ফেলবে তৃণমূলের হোয়াটস্যাপ?

হিন্দুত্ববাদ ও অরুণা মিলার

দাবি করা হয়, মেরিল্যান্ডের এই নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদ ইস্যু হয়েছে মার্কিন মুলুকেও। যেখানে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন অরুণা মিলার। শুধু তাঁর পদ নয়, গভর্নর পদের ক্ষেত্রেও এই ইস্যু বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। ভারত আমেরিকার সম্পর্ক, বহু হিন্দু ভারতীয় প্রবাসীর আধিক্য মিলারের প্রভাব বেড়েছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যাঁর মধ্যে রাজনৈতিক মত তৈরি হয়েছিল ৯০-র দশক থেকেই। এদিকে এই নির্বাচনে মিলার, ওয়েসের হয় প্রচার করেছেন জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস স্বয়ং।

কেন তাঁকে প্রাধান্য

বহুকালের অভিজ্ঞতা। ৫৭ বছর বয়সি এই মহিলার শিক্ষা এবং সমাজের বিভিন্ন অংশে কাজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছে ডেমোক্র্যাট দলের নেতারা। তৃণমূল স্তরের মানুষের প্রয়োজন বোঝেন অরুণা, যা মূলত, একজন জননেতার বা প্রশাসনিক প্রধানের প্রয়োজন। সেই ক্ষেত্রেই একাধিক প্রতিনিধির মধ্যে এগিয়ে ছিলেন অরুণা। যাঁর সুবক্তা সুলভ প্রকাশও নজর কেড়েছিল মেরিল্যান্ডের ভোটারদের মধ্যে। অর্থাৎ অন্য কেউ জিতুন, এর তুলনায় অরুণা জিতছেন! এই মন্ত্র তৈরি করতে পেরেছিলেন চেন্নাইয়ের চমকদার কৃতী! বলছেন কেউ কেউ।

More Articles