বাণিজ্য থেকে যুদ্ধ || কী আলোচনা হতে পারে বরিস-মোদি বৈঠকে?

অনেকবার করোনার দাপটে বাতিল হয়েছে তাঁর সফর। অবশেষে বৃহস্পতিবার ভারত সফরে এলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। দুই দিনের সফরে প্রথমেই তিনি আসেন মোদি-শাহর রাজ্য গুজরাতে। বৃহস্পতিবার সকালে আহমেদাবাদে পৌঁছোন জনসন। 

জনসনই প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যিনি গুজরাত সফর করলেন। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক। সারা বিশ্ব এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। জনসনের অফিস আগেই জানিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে কথা হবে, তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, বাণিজ্য, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা। ব্রিটেনের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে উল্লেখ করা হয়েছে বরিসের প্রতিক্রিয়া, 'খুব ভাল লাগছে ভারতে এসে।'

বৃহস্পতিবার সকালেই গুজরাতের আহমেদাবাদ বিমামনবন্দরে নামেন জনসন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এবং রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রত। বিমানবন্দরে গুজরাতের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও সংগীত পরিবেশন করা হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সামনে।
পরে সেখান থেকে একটি হোটেলে যান জনসন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর বরিস জনসন পৌঁছন সবরমতী আশ্রমে। 

আরও পড়ুন: বরিসের আগমনে কি আদৌ লক্ষ্মীলাভ হবে ভারতের?

গান্ধী আশ্রম, গুজরাত বায়োটেকনোলজি ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখা, গান্ধীনগরের অক্ষরধাম মন্দির, ভাদোদরা শহরের কাছে হালোলে জেসিবি কোম্পানির কারখানা ঘুরে দেখার মতো নানা বিষয় ছিল জনসনের প্রথম দিনের সফরসূচিতে। সবরমতীতে চরকায় সুতো কাটতেও দেখা গেল তাঁকে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সঙ্গে গুজরাতের পঞ্চমহলের হালোল জিআইডিসি-তে জেসিবি কারখানা পরিদর্শন করেছেন তিনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নতুন কারখানায় একটি জেসিবি থেকেই মিডিয়াকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়েন।

বরিস উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ভারতের। জনসন বলেন, 'আমরা একসঙ্গে বিরাট সাফল্য অর্জন করতে পারব, সেই সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি।' গান্ধীজির স্মৃতিবিজড়িত আশ্রমে গিয়েও খুশি তিনি। ভিজিটরস বুকে লিখেওছেন সেকথা।

প্রথম দিনের সফরে তিনি বৈঠক করেন শিল্পপতিদের সঙ্গে। আহমেদাবাদে আলাদাভাবে বৈঠক করেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গেও। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে গৌতম আদানি লিখেছেন, ‘বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করতে পেরে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। এই প্রথম কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গুজরাত সফরে এলেন। আদানি গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ঘুরে দেখলেন। পুনর্ব্যবহার্য শক্তি, নতুন শক্তি ও গ্রিন এনার্জির ব্যাপারে তাঁর সমর্থন পেয়ে আপ্লুত।'

আহমেদাবাদের পরে বরিস আজ দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর আজ একান্ত বৈঠক। ব্রেক্সিটের পরে বাণিজ্য-বন্ধু হিসেবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাকে ইউরোপের বিকল্প ভাবছে ব্রিটেন। সেই লক্ষ্যেই দ্রুত ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়িত করতে চান বরিস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যনীতির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ব্রিটেন এখন ভারতের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যনীতি করতে খুবই আগ্রহী। ২০৩৫-এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য দু’গুণ বাড়িয়ে বছরে ২ হাজার ৮০০ কোটি পাউন্ড করাই লক্ষ্য জনসন প্রশাসনের।

এছাড়াও জানা গেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়া নিয়ে ব্রিটেন-সহ পশ্চিমি দুনিয়া যে অবস্থান নিয়েছে, সেই বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে কথা বলবেন জনসন। ভারত সফরে আসার আগে লন্ডনে সাংবাদিকদের বরিস বলেন, ‘‘একটি স্বেচ্ছাচারী দেশের প্রতাপে যে ভাবে গোটা বিশ্বের শান্তি ও সুস্থিতি বিঘ্নিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের সরব হতেই হবে। এবং এই কাজে শক্তিশালী গণতন্ত্রগুলি যাতে হাত মেলায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ভারত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র এবং অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি। আমরা আশা করি, এই অস্থির সময়ে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’’

যুদ্ধের সমালোচনা করলেও সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যায়নি ভারত। এই পরিস্থিতিতে বরিস ও মোদির বৈঠকে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ‍র প্রসঙ্গ কি অস্বস্তিকর হবে? তবে ব্রিটিশ সরকার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভারতের অবস্থানের বিষয়ে শুনবেন জনসন। ভারতকে কোনও কিছু নিয়ে 'লেকচার' দেবেন না তিনি। অবশ্য ইউক্রেন নিয়ে ব্রিটেনের অবস্থানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মোদির সামনে তুলে ধরবেন বরিস জনসন।

 

More Articles