কেন কাতারেই হামলা চালাল ইরান?
Qatar: ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানে এটাই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সরাসরি হামলা। ইরানের কর্মকর্তারা এই হামলার জন্য অপ্রত্যাশিত পরিণতি ভোগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
উত্তর দেওয়া হবে, ফোর্দো-সহ একাধিক পারমাণবিক ঘাঁটিতে মার্কিন আক্রমণের পরই বলেছিল তেহরান। মার্কিন হানাদারির প্রত্যাঘাত নেমে এল এই বার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাতারের আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান। কাতারের রাজধানী দোহার কাছে অবস্থিত এই ঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন হলো, কেন দোহার এই ঘাঁটিই বেছে নিল ইরান? কতটা সফল এই প্রত্যাঘাতের চেষ্টা?
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) দাবি করেছে, তারা আল উদেইদে ধ্বংসাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই অভিযানের নাম দিয়েছে বিজয়ের ঘোষণা। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরান থেকে ছোড়া স্বল্প এবং মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কাতার ও মার্কিন বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। কাতার সরকারও বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এই হামলাকে "কাতারের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই ঘটনাকে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছি।" এই ঘটনার পর কাতার তাদের আকাশসীমা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়, যদিও পরে তা আবার চালু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতিকে বুড়ো আঙুল! ইজরায়েলে কেন হামলা অব্যহত ইরানের?
আল উদেইদ বিমানঘাঁটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সামরিক অভিযানের প্রধান কেন্দ্র। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঘাঁটিতে মার্কিন বিমান বাহিনী, কাতারের এমিরি বিমান বাহিনী এবং যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সদস্যরা সক্রিয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ চুম্বক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ইরানের হামলার আগে মার্কিন বাহিনী এই ঘাঁটি থেকে বেশিরভাগ বিমান সরিয়ে নিয়েছিল, এই তৎপরতাই হতাহতের ঘটনা এড়াতে সাহায্য করেছে।
গত শনিবার মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান ইরানের তিনটি পরমাণু ঘাঁটিতে হামলা চালায়। ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানে এটাই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সরাসরি হামলা। ইরানের কর্মকর্তারা এই হামলার জন্য অপ্রত্যাশিত পরিণতি ভোগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। আল উদেইদে হামলা তারই একটি প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে "খুবই দুর্বল প্রতিক্রিয়া" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরান আগে থেকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল, ফলে কোনো প্রাণহানি হয়নি। তিনি আরও বলেন, "ইরান ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, এখন আশা করছি এর পর আর আর ঘৃণার এই আবহ থাকবে না।" তবে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিমধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
আরও পড়ুন- ১৯৫৩ থেকে ২০২৫! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক কেন রক্তাক্ত হলো?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই হামলা প্রতীকী হলেও এটি মার্কিন সামরিক উপস্থিতির জন্য একটি সতর্কবাণী। ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে তাদের প্রতিশোধের টার্গেট হিসেবে দেখছে এবং তারা প্রস্তুত। এদিকে,কাতারের মতো উপসাগরীয় দেশগুলো এখন তাদের মাটিতে মার্কিন ঘাঁটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য এই ঘটনার পর থেকেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। ট্রাম্প ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে একটি "সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত" যুদ্ধবিরতির কথা বলেছেন, যদিও ইরান ও ইজরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। যদি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথামতো সত্যিই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেয় ইজরায়েল-ইরান দুই যুযুধান পক্ষ, তবে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট কোন দিকে যায়, তা নির্ভর করছে খোমেনি-নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তর উপর।