১৯৫৩ থেকে ২০২৫! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক কেন রক্তাক্ত হলো?

US-Iran Relations : ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তবে,এই দাবির পক্ষে স্থায়ী কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই টালমাটাল। আজকের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধপরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সামরিক হামলা ও কূটনৈতিক সংঘাতের আখ্যান। ১৯৫৩ সালে শুরু হওয়া এই জটিল সম্পর্ক সম্প্রতি নতুনতর বাঁক নিয়েছে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে মার্কিন হামলার পরে।

১৯৫৩ সাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ইরানের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনে। মোসাদ্দেক তেল শিল্পের জাতীয়করণ করেছিলেন। তাঁর পদক্ষেপ পশ্চিমা বাণিজ্যিক স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। এই ঘটনা ইরানের জনগণের মধ্যে মার্কিন বিরোধী মনোভাবের বীজ বপন করে। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের শাসনের অবসান ঘটে এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরান একটি ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যায়। এই বিপ্লবের পর থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও টানাপোড়েনের দিকে যায়।

২০২০ সালে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্য়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ইরান এর জবাবে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। ২০২৩ সালে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্দি বিনিময় হয়।

  আরও বলেন-  রাষ্ট্রপুঞ্জের কালো তালিকায় ইজরায়েল! যে যে অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত

রবিবার ভোরে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা—ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে মার্কিন বিমান হামলা চালাল। ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তবে,এই দাবির পক্ষে স্থায়ী কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছেন এবং প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। ইরান দাবি করে, এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল এই ঘটনাকে হুমকি হিসেবে দেখে। বলাই বাহুল্য, ট্রাম্পের হামলার পর ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য পাল্টা হামলা নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে ইরান ও তার মিত্ররা এই হামলার নিন্দা করেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধের কারণ হতে পারে। ইতিমধ্যেই ইজরায়েলে নতুন করে হামলাও শুরু করেছে তেহরান।

এই পরিস্থিতিতে তেহরানে সরকার পরিবর্তন বিষয়ে ট্রাম্পের ইঙ্গিত উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য শাসন পরিবর্তন নয়, বরং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বহু দেশই শান্তি ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। এই সংঘাত যাতে আরও বিপজ্জনক রূপ না নেয়, চাইছে ছোট-বড় নানা দেশ।

More Articles