২ ঘণ্টার পারিশ্রমিক ১১ কোটি! কাদের থেকে, কী কাজের জন্য নিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর?
Prashant Kishor’s ₹11 Crore Controversy:প্রশান্ত কিশোর যে সংস্থার কথা বলছেন, তার নাম নাভায়ুগা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (Navayuga Engineering Company)।
বিহার নির্বাচনের আগে ফের আলোচনায় ভোটকৌশলী তথা জন সুরজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর। সম্প্রতি তাঁর একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছিল জোর বিতর্ক— তিনি নাকি বলেছিলেন, মাত্র দুই ঘণ্টার পরামর্শের জন্য এক সংস্থা তাঁকে ১১ কোটি টাকা দিয়েছে। ভোটকৌশলী থেকে রাজনীতিবিদ— এই পথচলায় তাঁর আর্থিক উৎস নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেকের। সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দিলেও, ফের শুরু হয়েছে জলঘোলা।
পিকের কথায়, তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেখানে দাবি করা হয়— তিনি মাত্র দু-ঘণ্টায় দেওয়া পরামর্শের জন্য ১১ কোটি টাকা নিয়েছেন। প্রশান্ত কিশোর একটি সংবাদমাধ্যমে বলেন, “মিডিয়া আমার বক্তব্য এমন ভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছে, যা একেবারেই ভুল।” পিকে আরও বলেন, “আমি কখনও বলিনি যে দু-ঘণ্টার জন্য ১১ কোটি টাকা নিয়েছি। আমি দু’ঘন্টার কথা উল্লেখ করিনি।” তবে ভিডিওটিতে পিকে-কে দু’ঘন্টার কথা স্পষ্ট বলতে শোনা গিয়েছে। যদিও ইনস্ক্রিপ্ট ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি।
পিকে ব্যাখ্যা দেন, “একটি সংস্থা তাদের তৈরি করা অ্যান্টি-এজিং পণ্যের প্রচার ও বিপণন নিয়ে তাঁর কাছে পরামর্শ চেয়েছিল; সেই পরামর্শ দিতে রাজি হই কারণ আমার জন সুরজের জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল।” পিকে ওই সংবাদমাধ্যমে নিজেই বলেন, এখনও ওই পণ্য নাকি লঞ্চই করেনি; তিনি সংস্থাকে বলেছেন, পণ্যটি বাজারে আসলে তার প্রচারে সাহায্য করবেন। এর বদলে সংস্থাটি জন সুরজ পার্টিকে সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন
প্রশান্ত কিশোরের নতুন রাজনৈতিক দলকে বিশ্বাস করে ঠকবেন বিহারবাসীরা?
প্রশান্ত কিশোর যে সংস্থার কথা বলছেন, তার নাম নাভায়ুগা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (Navayuga Engineering Company)। দক্ষিণ ভারতের এই সংস্থাটি ভারতীয় জনতা পার্টিকে ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে মোট ৫৫ কোটি টাকা দান করেছিল। কোনো একটি সংস্থা যদি ক্ষমতাসীন দলকে এত বড় অঙ্কের টাকা অনুদান দেয়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে— এই অর্থ লগ্নির নেপথ্যে কি কোনো অন্য স্বার্থ রয়েছে? এই বিষয়টি নিয়ে আগেও বহু বিতর্ক হয়েছে।
আইন অনুযায়ী ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে দান করা বৈধ হলেও, অনেকেই মনে করেন এতে নীতি ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়— বিশেষ করে যখন সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব পরিষ্কার নয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে এই বিপুল অনুদান সাধারণ মানুষকে অবাক করে দিয়েছিল। আর এখন যখন জানা যাচ্ছে, জন সুরজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর ওই সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন, তখন আবারও ইলেকটোরাল বন্ড নিয়ে জালিয়াতি ও অস্বচ্ছতার প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন এবং কী উদ্দেশ্যে এই অর্থ নিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর? যারা ভারতীয় জনতা পার্টিকে সাহায্য করেছে, তারাই প্রশান্ত কিশোরকে সাহায্য করছে তাহলে কি তিনটি পক্ষেরই স্বার্থ একে অন্যের সঙ্গে জড়িত? এই প্রশ্নও উঠছে।
আরও পড়ুন
মিমকে টেক্কা দিয়ে বিহারী মুসলিমদের মনদখল করতে চাইছেন পিকে?
এর আগে এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর জানান, গত তিন বছরে তিনি মোট ২৪১কোটি টাকা আয় করেছেন। মূলত রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেই এই অর্থ এসেছে বলে দাবি তাঁর। পিকের বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংস্থা, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শমূলক কাজ করি। তার জন্য আমরা পারিশ্রমিক পাই। এই কাজ থেকেই আয়।” তিনি আরও জানান, এই আয় পুরোপুরি বৈধ উপায়ে হয়েছে, এবং সরকারের কাছে করও দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “এই তিন বছরে প্রায় ৫১ কোটি টাকা কর হিসেবে সরকারকে দিয়েছি— এর মধ্যে জিএসটি ও আয়কর দুটোই আছে।” তাঁর দাবি, আয় থেকে প্রশান্ত কিশোর ৯৯কোটি টাকার বেশি দান করেছেন নিজের দল ‘জন সুরজ’-কে। পিকের কথায়, “আমরা চাই, আমাদের দল বাইরের কারও টাকায় না চলুক। সমাজের পরিবর্তনের জন্য আমরা নিজেদের উপার্জন থেকেই দলের খরচ চালাব।”
তবে ভোটের আগে এমন আর্থিক বিতর্ক অনেক সময় সাধারণ ভোটারের মনে সংশয় তৈরি করে। প্রশান্ত কিশোরের দাবি অনুযায়ী, তিনি স্বচ্ছভাবে আয় করেছেন, কর দিয়েছেন এবং দলের কাজের জন্য অর্থ ব্যয় করেছেন— এটি যদি প্রমাণসাপেক্ষ হয়, তাহলে তার ভালো ফল হলেও হতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে, বিরোধীরাও এই ঘটনাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারে। তারা বলতে পারে— প্রশান্ত কিশোর একদিকে পেশাদার পরামর্শদাতা, আবার অন্যদিকে জননেতা; এই দুই ভূমিকায় তিনি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন, তা স্পষ্ট নয়। সত্যিই কি প্রশান্ত কিশোর ২ ঘণ্টার জন্য ১১ কোটি টাকা নিয়েছিলেন? পিকের দাবি অনুযায়ী, জন সুরজ পার্টিকে যে অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা কতটা স্বচ্ছ? জন সুরজের ‘স্বচ্ছ রাজনীতি’র বার্তা কি এখনও বিশ্বাসযোগ্য থাকবে? সেই প্রশ্নও উঠছেই।

Whatsapp
