রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের মাথায় গুলি, কেন হাত কাঁপে না ওদের

বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম কাজ হল – আমাদের নিজেদেরকে মানসিক চিকিৎসার কিছু ভ্রান্ত ধারনা ও কুসংস্কার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। আমরা পারছি কি?

দৃশ্য এক

১০ জুন, ২০২২, পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেকবাগানে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউট পোস্টের সামনে। কালিম্পঙের বাসিন্দা চোডুপ লেপচা উন্মত্ত ভঙ্গিতে গুলি চালাচ্ছেন। শেষ গুলিটা তিনি মারলেন নিজের মাথায়। লুটিয়ে পড়লেন রাস্তায়। রক্তে ভাসল পিচে ঢাকা পথ। সংবাদপত্র, টিভি বুলেটিনে শুধুই তার নাম। কিন্তু তার আগে কে শুনেছিল তাঁর কথা? দুদিন পরেই বা কে শোনে চডুপ লেপচাদের কথা? কে জানতে চায় তাদের মনের ভিতর কী চলছে!

দৃশ্য দুই

অন্ধকার ঘর। বছর দশেকের একটি মেয়ে শুয়ে আছে মেঝেতে। স্কুলে পড়ে সে এবং পড়াশোনাতেও ভালো। তার মা বাবা ভীষণ ব্যস্ত। শহরের ইঁদুরের দৌড়ে তারা নিজেদের বিলীন করে দিয়েছে। মেয়েটি খুব চঞ্চল এবং হাসিখুশি। কিন্তু হঠাৎ করে কি যেন পাল্টে গেল, সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করল। কারুর সাথে ঠিকভাবে কথা বলে না, খায় না। এইটুকু একরত্তি মেয়ের চোখের তলায় কালির ছাপ। মা বাবা তার মন খারাপের কারণ হিসেবে ধরে নিয়েছেন দুষ্টুমিকে। মেয়েটি অনেকবার বলার চেষ্টা করেছে তার মন খারাপের কথা কিন্তু তা মনে ধরেনি তার মা বাবার। এক সকালে তার ঘরে ঢুকে মেয়েটির মা বাবা আবিষ্কার করে সে সুইসাইড করেছে। পরে জানা যায়, অবসাদে ভুগছিল ওর ছোট্ট মন। স্কুলে নির্যাতনের শিকারও হয়েছিল, তা মুখ ফুটে বলতে চেয়েছিল মা বাবাকে কিন্তু তারা কান দেননি। অবসাদে, অবহেলায়, একাকীত্বে তার এই পদক্ষেপ।

খবরের কাগজের সুবাদেই আকছার হওয়া ঘটনার সঙ্গে আমি আপনি অল্পবিস্তর পরিচিত। এইসব ঘটনার রেশ দু-একদিন থাকে তারপর আবার যেই কে সেই। অথচ ডিপ্রেশন কিন্তু কর্কটরোগের মতোই, ধীরে ধীরে দখল নেয় শরীর মনের। ‘মন’ নামের বস্তুটির জোরেই মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। মন আছে বলেই মানুষ পৃথিবীর রাজা হতে পেরেছে। জয় করতে পেরেছে অনেক বাধাবিপত্তি। কিন্তু কখনো কখনো বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণ যেমন – ক্রোধ, দুঃখ, ভয়, হতাশা বারবার অশান্ত করে মনকে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, মানসিক অবসাদ হলো মানসিক চাপের এক অস্বাভাবিক অবস্থা, এক কথায়, মনের অসুখ। মানসিক অবসাদ রোগটির নাম হলেও শরীর ও মস্তিষ্কে এর প্রচুর কারণ এবং প্রকাশ সংঘটিত ও প্রকাশিত হয়। মানসিক অবসাদে মস্তিষ্কে সিরোটোনিন ও ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার বা নিউরোহরমোন বিশেষভাবে কমে যায়। এই রোগে মস্তিষ্কে ক্ষতিকারক স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায় যা মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে বাধা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে ১০০ জনের মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষ মানসিক অবসাদে আক্রান্ত।

কিন্তু আমরা তা সত্ত্বেও এই রোগ নিয়ে কোনোভাবেই সচেতন নই। ভারতের মতো উন্নতশীল দেশে আজও মানসিক অবসাদ একটি অবহেলার বিষয়। অনেকসময়ই অনেক অভিভাবকদের বলতে শোনা যায় যে, ‘এইটুকু বয়সে তোদের মন খারাপ? তোদের মনের আছে কি? নুন দিয়ে লেবু দিয়ে খেয়ে নে ঠিক হয়ে যাবে’। অন্যান্য আর ৫টা রোগ যেমন – ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, মাথা যন্ত্রণা, হার্ট অ্যাটাক এইসব রোগের মতো আমরা মানসিক বিষণ্ণতা বা অবসাদকে একই তালিকায় ফেলি না। মন কি শরীরের অংশ নাকি ! মন অবসাদে ভুগলে যে মনের ডাক্তারের দরকার তা আজকের উন্নত সমাজে দাঁড়িয়েও একটা হাসির বিষয়। মানসিক অবসাদকে আমরা ‘পাগলের প্রলাপ’ আর ‘মানসিক ভারসাম্যহীনতা’ বলে দেগে দিই। ‘মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে, পাগল নাকি ! সমাজ কি বলবে?’ আজও আমরা এই চিন্তা ধারায় বিশ্বাসী। আর তার ফল তো আমরা দেখছিই।

কী হয়েছিল কালিম্পংয়ের  সেই নিরাপত্তাকর্মীর

কালিম্পঙের বাসিন্দা চোডুপ লেপচা। কাজ করতেন কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। তাঁর ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ জন, মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। পরে নিজেকেও গুলি চালিয়ে শেষ করে দেন ওই নিরাপত্তারক্ষী। প্রায় ১০ থেকে ১৫ রাউণ্ড গুলি চালান ওই নিরাপত্তাকর্মী। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী, লেপচা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন কিন্তু কি কারণে তিনি এই ঘটনা ঘটান তার কোনো উত্তর মেলেনি।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, এক বছর আগে লেপচা কলকাতার চাকরিতে যোগ দেন। গুলি চালাতে দক্ষ হওয়ার কারণে তিনি সুযোগ পান এসটিএফে। উত্তরবঙ্গে একটি কাজে সফল হতে পারেননি। এরপর থেকেই নাকি তাঁর মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাল না জানার ফলে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। ক্রমে তাঁর মানসিক সমস্যা হতে থাকে। মনে করতে থাকেন, তাঁকে এনকাউন্টার করে খুনের চেষ্টা হচ্ছে। মাস তিনেক আগে নদিয়ায় একটি তল্লাশিতে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় সহকর্মীরা তাঁকে এনকাউন্টার করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশের গাড়ি থেকে পালিয়ে ফেসবুক লাইভ করতে শুরু করেন। তাঁকে লালবাজারে নিয়ে আসার পর তিনি দেওয়ালে মাথা ঠোকেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেও পালান। ফের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দশ দিনের ছুটির পর তাঁকে ট্রাফিকে বদলি করা হয়। সেখানেও অস্বাভাবিক আচরণ করার ফলে তাঁকে গত মাসের শেষে বদলি করা হয় পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। কিছুদিন অস্ত্র ছাড়াই ডিউটি করছিলেন। এর পর দশদিনের ছুটি সেরে ফিরে আসার পর শুক্রবারই অস্ত্র সহ তাঁকে ডিউটি দেওয়া হয়।

ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজের মনরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষের কথায়, "সাইকোটিক ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন ওই কনস্টেবল। আত্মহত্যার সংজ্ঞা ঘাঁটলেই চোডুপ লেপচার অদ্ভুত ব্যবহারের হদিশ পাওয়া যাবে।" বিখ্যাত মনোবিদ ফ্রয়েড বলেছিলেন, অন্যের বিরুদ্ধে হিংসা, রাগ, বিদ্বেষ যখন নিজের বিরুদ্ধে চালিত হয়, তখনই কেউ আত্মহত্যা করেন। চিকিৎসকের বক্তব্য, অর্থাৎ যিনি আত্মহত্যা করতে পারেন, তিনি একজনকে খুনও করতে পারেন। ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির ডিরেক্টর প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, চার রকমের আত্মহত্যা (Suicide) রয়েছে। অ্যানোমিটি, ইগোয়িস্টিক, অলটুইস্টিক, ফ্যাটালিস্টিক। চোডুপ লেপচা যেটা ঘটিয়েছেন, সেটা ইগোয়িস্টিক সুইসাইড।

এই ঘটনা প্রথম নয়

মানসিক অবসাদে এইরকম ঘটনার নজির এই প্রথম নয়। বেহালা থানা এলাকার পশুপতি ভট্টাচার্য লেনের বাসিন্দা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (৬২), পেশায় সরকারি পদস্থ আধিকারিক ছিলেন। বছর তিনেক আগে কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন আশিসবাবু। তার পর থেকেই অবসাদে ভুগতেন তিনি। এদিন সিঁড়ির রেলিং থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর।

পাশের গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল গাইঘাটার যুবক সজলের। তরুণীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন সজল। পরে আত্মঘাতী হন তিনি। অন্যদিকে শিলিগুড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে সুস্থ করতে না পেরে মানসিক অবসাদে বাবা ছেলেকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে এবং পরে নিজে আত্মঘাতী হয়।

এইসব ঘটনা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যে, মানসিক অবসাদ কতটা মনের ওপর চাপ ফেললে মানুষ এমন কাজ করতে উদ্যত হয়। মনোবিদদের এমন তত্ত্বে আতঙ্কিত আমজনতা। বিদেশে প্রায়ই দেখা যায় বন্দুক নিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েছেন আততায়ী। এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছেন শ্রেণিকক্ষে। তবে এইসমস্ত ঘটনা আপনার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, অবসাদকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। মনোবিদরা বলছেন, চেপে রাখা অবসাদ বেরিয়ে আসতে পারে খুন, প্রতিহিংসা, ও আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে।


মানসিক অবসাদের উপসর্গ চিনুন

মানসিক বিষণ্ণতা এক নীরব ঘাতক রোগ, যা আপনার জীবনে এমনভাবে আসে যে আপনি নিজেও বুঝে উঠতে পারছেন না যে আপনি অবসাদে ভুগছেন। বা আপনার আশেপাশের আপন মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছে। মানসিক অবসাদের শিকার আজ শুধু বয়স্থা মেয়ে-ছেলেই নয়, ছোট ছোট বাচ্চারাও এর শিকার। তারা হয়তো মুখে নিজের কথাটা মা-বাবাকে বলতে পারে না হয়তো বা মা বাবা সেই বিষণ্ণতাটাকে অন্য কোনও মন খারাপের কারণ বলে ধরে নেন। আস্তে আস্তে এই মানসিক অবসাদ আমাদের গ্রাস করতে শুরু করে, জীবনে নেমে আসে একাকীত্ব। স্বপ্নহীন,আনন্দহীন এক দূর্বিসহ জীবন নিয়ে আমাদেরই মাঝে বাস করে আমাদেরই কেউ একজন। কেউ হয়তো কলেজে যাচ্ছে কিন্তু সকলের সঙ্গে তার মতের মিল হচ্ছে না তা থেকেও আসতে পারে অবসাদ। আবার ক্রমাগত কাজের চাপ বৃদ্ধি এবং পরিবারকে ও নিজেকে সময় দিতে না পারা, কাজের জায়গায় অনবরত ব্যর্থতা এইসব কারণ থেকে আসতে পারে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন।

চিকিৎসকদের কথায় কখন আপনি বুঝবেন যে আপনি মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছেন, তার কিছু উপসর্গ হল – বিষণ্ণতার কারণে হতাশা বোধ হয়। মনে হয় যে সামনে ভালো কিছু নেই। নিজের সব কিছু নেতিবাচক মনে হতে পারে। তার দ্বারা ভালো কিছু হবে না মনে হয়। অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস কমে যায়। আর এসব তার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। চারপাশের মানুষকে শত্রু ভাবাপন্ন/ক্ষতিকর মনে করা বিশেষত কাছের মানুষদেরকে। ফলে পরিবারের সদস্য,বন্ধু-বান্ধব ও নিকটজনদের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়। কেউ কেউ নানা অজুহাতে বাড়ি থেকে দূরে চলে যায় বা চেষ্টা বা চিন্তা করে। এ বিষয়টি রোগিকে আরও একাকীত্বের মধ্যে ঠেলে দেয় যা তার রোগকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে যাওয়া। রোগি অনেক সময় বলে থাকে “অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি; তার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো”। এইসব উপসর্গ ক্ষণস্থায়ী আবার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যদি এই উপসর্গ দীর্ঘদিন থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির উপায়

১৭টি রাষ্ট্রে পরিচালিত ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের মধ্যে ১ জনের বিষণ্নতা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ আর শিশুদের মধ্যে ১ শতাংশের বিষণ্নতা রয়েছে বলে জাতীয় জরিপে পাওয়া গেছে। সে হিসাবে দেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে! পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার প্রায় দ্বিগুণ।

আপনি কি জানেন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন, ক্যাটরিনা কাইফও একসময় এই মানসিক বিষণ্ণতার শিকার ছিলেন? তাঁদের বক্তব্য, খারাপ সময় সবার জীবনে আসে। সাদা-কালোর মতোই নিরবচ্ছিন্ন সুখ যেমন আছে, তেমনই আছে কঠিন-জটিল পরিস্থিতি। সে সবের মোকাবিলা করতে হবে মাথা ঠান্ডা রেখে— এমনটাই পরামর্শ ক্যাটরিনার। বই পড়েন অবসরে। নিজেকে সময় দেন। আর ভরসা রাখেন মহাবিশ্বের স্রষ্টার প্রতি। এমন কোনও চিন্তা করেন না, যা তার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম কাজ হল – আমাদের নিজেদেরকে মানসিক চিকিৎসার কিছু ভ্রান্ত ধারনা ও কুসংস্কার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। আমরা যদি আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্যের খেয়াল নিতে পারি তাহলে সেই ভাবে আমরা আমাদের মানসিক দিকটা কেন দেখব না? মানুষের মনও তার দেহের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মাথা থাকলে যেমন ব্যথা হবে তেমনি মন আছে বলেই তার কষ্টও আছে। মাথা ব্যথার ওষুধ থাকলে আপনি কেন ভেবে নিচ্ছেন যে তা মাথা থেকে শুরু করে আপনার মনের রোগেরও উপশম করবে। সব ব্যথার ওষুধ তো এক নয়, সেই ভাবেই মানসিক অবসাদের চিকিৎসার আগে নিজেকে বুঝতে হবে। যদি নিজে অবসাদে ভোগেন তাহলে কি থেকে সেই অবসাদের শুরু তা চিকিৎসককে জানানো জরুরি। তার কাছ থেকে তথ্য গোপন মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা।

এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আপনি যদি মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান তাহলে আপনি পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন। আপনি আর ৫টা রোগের ব্যাপারে যেভাবে ডাক্তারের সাথে মন খুলে আলোচনা করেন এই ক্ষেত্রেও তাই করতে হবে। আপনি যদি এটা মনে করে থাকেন যে আপনিই একা যে এই সমস্যার মধ্যে আছে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। বিশ্বজয়ী এমন অনেক মানুষ আছে যারা এই মানসিক অবসাদকে কাটিয়ে উঠেছেন, নিজের পথ নিজে বানিয়েছেন। জয় করেছেন অসাধ্যকে।

মানসিক অবসাদকে দূরে রাখতে চিকিৎসকেরা কিছু অন্য ধরণের পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন তা হল – নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন বন্ধুদের থেকে সরে দাঁড়ান। ইতিবাচক মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। হাসুন, আড্ডা মারুন, গান শুনুন কিন্তু স্যাড সং নয়। যোগব্যায়াম শুরু করুন, খেলাধুলো করুন, বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিন। প্রচুর ঘুমোন। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটান। একটু দূরে কোথাও ঘুরে আসুন। আর অনেক বই পড়ুন।

সবশেষে এটাই বলার, মানসিক রোগকে অবহেলা করবেন না। তার পরিণতি যে কি ভয়ানক হতে পারে তা হয়তো আপনি নিজেও জানতে পারবেন না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো নিজের মনকেও ভালো রাখার চেষ্টা করুন। আপনাকে যদি কোনও কথা কষ্ট দিয়ে থাকে বা আপনি যদি কোনো কথায় আঘাত পান তাহলে তা প্রকাশ করুন, চেপে রাখবেন না। আর সবথেকে বড় ব্যাপার হল, আমাদের এই ঘোড়দৌড়ের জীবনে নিজের জন্যই বাঁচা হয়ে ওঠে না, তাই নিজের জন্য বাঁচুন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আধঘণ্টা নিজের সঙ্গে কাটান। নিজের জন্য বাঁচা মানে আবার নিজেকে একাকীত্বে ঠেলে দেওয়া নয় কিন্তু, নিজের জন্য বাঁচা মানে ওই সময় আপনি ওই জিনিসটাই করুন যাতে আপনার আনন্দ, আপনার সুখ। তাহলেই আক্ষরিক অর্থে তা বাঁচা হয়। আমরা হাসি খুশি থাকলেই চারপাশের মানুষজন, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধবদের খুশি রাখতে পারব, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারব। জানি অনেক দীর্ঘ পথ বাকি এই সমস্যাকে স্বমূলে নির্মূল করতে। তাই মানসিক রোগকে অবহেলা নয়, তা নিয়ে খুলে কথা বলুন।

More Articles