কারা ছিল পিএফআই-এর মূল চক্রী? 'নিষিদ্ধ' এই সংগঠনের নেতাদের পরিচয় এক নজরে

Popular Front of India: প্রকাশ্যে এসেছে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের বিস্তারিত পরিচয়। কারা এঁরা? কী তাঁদের পরিচয়?

পপুলার ফ্রন্ট অফ্ ইন্ডিয়া। অর্থাৎ পিএফআই। উৎসবের মরশুমে ফের শোরগোল ফেলেছে এই একটি নাম। দেশের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এই সংগঠনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়তেই দেশজুড়ে অভিযানে নামে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এবং এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। সেই অভিযানে বাদ যায়নি কলকাতাও। দেশের একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে একাধিক তথ্য উদ্ধারের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই সংগঠনের অন্যতম নেতাদের। অভিযোগ, যাঁদের অঙ্গুলিহেলনেই সন্ত্রাসমূলক কাজে ইন্ধন যোগায় পিএফআই। এবার প্রকাশ্যে এসেছে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের বিস্তারিত পরিচয়। কারা এঁরা? কী তাঁদের পরিচয়?

ওএমএ সালাম, পপুলার ফ্রন্ট অফ্ ইন্ডিয়া-র চেয়ারম্যান
কেরল সরকারের বিদ্যুৎ পর্ষদের স্থায়ী কর্মচারী সালাম। মূলত, সংগঠনের নীতি নির্ধারিত হত সালামের নির্দেশেই। তিনি 'রিহাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনে'র সঙ্গেও জড়িত বলে জানা গিয়েছে। এই সংগঠন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে একাধিকবার। সালামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি, তাঁকে সাসপেন্ড করেছে বিদ্যুৎ পর্ষদ।

আনিস আহমেদ, জাতীয় সাধারণ সম্পাদক, পিএফআই
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী আনিস আহমেদ বিখ্যাত এক টেলিকম সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে পড়াশুনা তাঁর। বরাবরের মেধাবী আনিস এই সংগঠনের প্রযুক্তিগত দিকে নজর রাখতেন। সংগঠনের প্রচার থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া, মুখপাত্রদের বয়ান, সংগঠনের অবস্থান। সব ক্ষেত্রেই দেশজুড়ে মূল নেটওয়ার্ক থাকত তাঁর নাগালে।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসে উসকানির অভিযোগে নিষিদ্ধ! কোন লক্ষ্যে চলত পিএফআই? নেপথ্যে কারা

পি কোয়া, জাতীয় কার্যকরী কমিটির কাউন্সিল সদস্য, পিএফআই
পেশায় অধ্যাপক। একটা সময় বিদেশে চাকরি করেছেন কোয়া। ১৯৮৬ নাগাদ কাতারে গিয়ে তিন বছর চাকরি করেন। তারপর অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন কোঝিকোর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। তিনি এদেশের আর এক নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-র সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ওই সংগঠন নিষিদ্ধের পর থেকেই চাপে পড়েন পি কোয়া।

সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের নীতি, আদর্শ এবং তাদের ভুল বুঝিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে কোয়ার বিরুদ্ধে। তিনি এই সংক্রান্ত কাজের জন্য গঠিত সংগঠন 'ইসলামিক যুব কেন্দ্রে'র প্রধান বলেও জানা যায়। বলা হয়, এই সংগঠনের শিক্ষিত নেতাদের মধ্যে কোয়া অন্যতম।

ইএম আব্দুর রহমান, জাতীয় সহ-সভাপতি, পিএফআই
প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক। কেরলের এরনাকুলামের কোচিন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষিত আব্দুর, অবসরের আগে থেকে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-র সভাপতি ছিলেন। বরাবর মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝানোর চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে। যিনি পিএফআই-র অন্যতম নীতি নির্ধারক এবং সমর্থকদের মধ্যে প্রভাবশালী বলেও দাবি করা হয়।

আফসার পাশা, পিএফআই-র জাতীয় সম্পাদক
২০০৬ সাল থেকে সংগঠনের অন্যতম নেতা এই ব্যক্তি। মূলত, ব্যবসায়ী তিনি। সংগঠনের আর্থিক দিকে এঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলেই দাবি।

আব্দুল ওয়াহিত সেইত, জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য, পিএফআই
বেঙ্গালুরুর শিবাজীনগরে 'কুটচি মেমন কমিউনিটি'-র মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন আব্দুল। এর সঙ্গেই অন্যতম নেতা হিসেবে কাজ করতেন এই সংগঠনের সঙ্গেও। জনসংযোগ, সংগঠনের বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল সেইতের। দাবি করছেন গোয়েন্দারা।

মহম্মদ শাকিফ ওরফে শাকিব, জাতীয় সম্পাদক, সংবাদমাধ্যম এবং জনসংযোগ বিভাগ, পিএফআই
সংবাদমাধ্যমের বিষয়টি দেখতেন এই সংগঠনের হয়ে। এছাড়া তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।

মিনারুল শেখ, সভাপতি, পিএফআই, পশ্চিমবঙ্গ
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। পিএইচডি করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। একাধিক কোচিং সেন্টারে পড়াতেন তিনি। গবেষণার পাশাপাশি এই সংগঠনের জন্য কাজ করতেন শাকিব, উঠেছে অভিযোগ। সমগ্র রাজ্যে সংগঠনের বীজ ছড়িয়ে দিতে প্রধান ভূমিকা ছিল তাঁর।

মহম্মদ আসিফ, সভাপতি, পিএফআই, রাজস্থান
কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করেই আসিফ যোগ দেন 'ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ্ ইন্ডিয়া'য়। যেটি পপুলার ফ্রন্ট অফ্ ইন্ডিয়া-র সঙ্গে জড়িত। এরপর ২০১৩-২০১৪ সাল নাগাদ, পিএফআই-র সংগঠনের রাজস্থানের রাজ্য সহ-সভাপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন। অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে এই সংগঠনের হয়ে প্রচার এবং সংগঠন বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই দক্ষিণ ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্য কর্নাটক-সহ দেশের প্রায় ১০টি রাজ্যে অভিযান চালান এনএআইএ এবং ইডি-র আধিকারিকরা। সন্ত্রাসবাদে উসকানি, জঙ্গিদের অর্থ জোগান দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিমদের ভুল বুঝিয়ে জঙ্গিবাদে মদত-সহ একাধিক অভিযোগে ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র (পিএফএআই) প্রায় ১০০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। একাধিক রাজ্যের পিএফআই আস্তানায় হয় তল্লাশি। সেখানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিমি-র পর ফের এই মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে কেন্দ্র।

মূলত, সিমি-র নিষিদ্ধ হওয়ার সূত্রেই দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে, দলীয় রাজনীতির বাইরে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে গজিয়ে ওঠে এই সংগঠন। যা ২০০১ সাল নাগাদ 'স্টুডেন্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ্ ইন্ডিয়া' বা সিমি-কে নিষিদ্ধ  ঘোষণা করার পর থেকেই সক্রিয় কাজ শুরু করতে থাকে পরোক্ষভাবে। ৬ বছর কাটে। এরপর ২০০৭ সাল নাগাদ তিনটি মুসলিম সংগঠন কেরলের ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, কর্নাটক ফোরাম ফর ডিগনিটি ও তামিলনাড়ুর মানিথা নীতি পাসারাই মিলে তৈরি হয় পপুলার ফ্রন্ট অফ্ ইন্ডিয়া। ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারি নাগাদ বেঙ্গালুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এই সংগঠন। মূলত, সিমি-র সদস্যরা এবং শিক্ষিত মুসলিম সমপ্রদায়ের যোগসাজশে বেড়ে ওঠে এই সংগঠন।

More Articles