ডোপিংয়ের জেরে দু'বছরের নির্বাসন, কলঙ্ক কাটিয়ে ফের জাদু দেখাতে পারবেন দীপা কর্মকার?

Dipa Karmakar Suspension : জিমন্যাস্টিকের তারকা দীপা কর্মকারকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে খেলা থেকে। ২১ মাস তাঁকে এই শাস্তি ভোগ করতে হবে। কেন?

২০১৬-র রিও অলিম্পিক। গোটা ভারত তাকিয়ে আছে একটি বিশেষ ইভেন্টের দিকে। জিমন্যাস্টিক নিয়ে এর আগে সেরকম উৎসাহ ছিল না ভারতীয়দের। কিন্তু এবার গোটা দেশ এই ইভেন্টের দিকেই তাকিয়ে আছে! বিশেষ করে, বাঙালিরা! কারণ, অলিম্পিকের মঞ্চে কেবল ভারতের নয়, বাঙালিদের প্রতিনিধিত্বও করছেন শ্যামলা রঙের শক্তিশালী চেহারার মেয়েটি। দীপা কর্মকার (Dipa Karmakar) সেই আশা যেন জ্বালিয়ে দিলেন হঠাৎ করে। তাঁর প্রোদুনোভা ভল্ট দেখার জন্য কাজ ফেলে বসে থাকল মানুষ, এটা কি কম কথা!

তখন থেকেই ভারতের জিমন্যাস্টিক এবং ক্রীড়া জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে গেলেন দীপা কর্মকার। কাট টু ২০২৩ সাল। আন্তর্জাতিক ডোপ টেস্টিং এজেন্সি ওয়াডার (WADA) একটি বিজ্ঞপ্তি সামনে উঠে এল। জিমন্যাস্টিকের তারকা দীপা কর্মকারকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে খেলা থেকে। মোট ২১ মাস তাঁকে এই শাস্তি ভোগ করতে হবে। কেন? দীপা নাকি হিগেনামাইন নামের একটি ওষুধ সেবন করেছিল। ২০১৭ সালেই এই ওষুধটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপরও নাকি এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন এই জিমন্যাস্ট। সেজন্যই এই শাস্তির খাঁড়া।

আরও পড়ুন : বেজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক, যে ভাবে পরিবেশ ধ্বংসের নজির গড়ছে চিন…

অবশ্য শাস্তির ব্যাপারটি অনেক আগেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। গত বছরের শুরুর দিক থেকেই দীপা কর্মকারকে এই শাস্তির মুখে পড়তে হয়। কিন্তু কারণ খুব স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। এমনিতে ২০১৬ রিও অলিম্পিকের পর তাঁকে সেভাবে খেলায় দেখা যায়নি। সেবারের অলিম্পিকে চতুর্থ হয়ে নজির গড়েছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল টোকিও অলিম্পিকের দিকে। কিন্তু হাঁটুর চোট তাঁকে একেবারে কাবু করে দিল। সেখানে অস্ত্রোপচারও হয়। তারপর থেকেই একটু একটু করে ফর্মও পড়তে থাকে।

সেই সময় দীপা কর্মকার তাঁর চোটের জন্য বেশকিছু ওষুধও খেতেন। বারবার তাঁকে ওয়াডার র্যা পিড টেস্টের জন্য ডাকা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি। দীপা কর্মকার আর তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী দুজনের কেউই সাড়া দেননি। সেইসঙ্গে কী ওষুধ খাচ্ছেন, সেই তথ্যও অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সিকে দেওয়া হয়নি। তিনবার র্যা পিড টেস্টে না বসার জন্য এমনিতেই গত বছর তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। ২০২৩-এ এসে জানা গেল, ওই ওষুধগুলির মধ্যে একটি ছিল হিগেনামাইন। যেটি ব্যান করেছিল ওয়াডা। সেজন্যই দীপাকে ২১ মাস জিমন্যাস্টিকের ক্ষেত্র থেকে সাসপেন্ড করা হয়।

আরও পড়ুন : জড়িয়েছেন মারাদোনাও, বিশ্বকাপের ডোপ কেলেঙ্কারি যেভাবে বার বার শিরোনামে

তবে আশার খবর একটাই, এই শাস্তির মেয়াদ অনেক আগে থেকে শুরু হওয়ায় বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না দীপাকে। এই বছরের ১০ জুলাই পর্যন্ত তিনি নির্বাসিত থাকবেন। তারপর ফের নামতে পারবেন মাঠে। কিন্তু ডোপিংয়ের কলঙ্ক একবার গায়ে লাগলে তার প্রভাব তো পড়েই। সেইসঙ্গে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী চোট। যে দীপা কর্মকারের দিকে তাকিয়েছিল গোটা ভারত, যাকে দেখে আরও অনেকে জিমন্যাস্টিক খেলতে উৎসাহী হয়েছেন, তাঁকে কি সেই পুরনো ফর্মে আর পাওয়া যাবে? ২০১৯-এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেভাবে পারফর্মেন্স দিতে পারেননি দীপা।

চোট এখন অনেকটা সেরে গিয়েছে। কিন্তু এখনও তার রেশ রয়ে গিয়েছে। দীপার এখন পাখির চোখ ২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিক। তার আগে বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিযোগিতা হবে। নিজেকে সেইভাবেই তৈরি করছেন দীপা কর্মকার। যে আসনটি একটু হলেও টলে গিয়েছে, তাকে ফের সামনে আনতে চান তিনি। সেজন্যই লড়াই চলছে, এখনও। নির্বাসন কাটলে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে যে! 

More Articles