খোঁজ মিলেছে ফ্রান্সে, কোভিডের ভ্যারিয়েন্ট IHU কতটা বিপজ্জনক?

আলফা ,বিটা, গামা, ডেল্টা, ডেল্টা প্লাস, ওমিক্রন, ইহু –অতিমারীর শুরু থেকে করোনা ভাইরাসের এমন কত ভ্যারিয়েন্টের নাম শুনেছি আমরা! এদের মধ্যে কিছু ভ্যারিয়েন্ট বিশ্ববাসীর ত্রাস বাড়িয়েছে আবার কিছু ভ্যারিয়েন্ট একেবারেই দুধভাত, দাঁত ফোটাতে পারেনি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। তা কতখানি প্রাণনাশী হতে পারে তার অভিজ্ঞতা আমাদের সকলেরই রয়েছে। তৃতীয় ঢেউয়ে ওমিক্রন দাবানলের আগুনের মতো হুহু করে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এরই মধ্যে ফ্রান্সে নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করেছেন এলদল বিজ্ঞানী যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে কি আবারও কোনও মারণ ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলল? চলুন নেওয়া যাক করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সাত- সতেরো।  

ইহু ভ্যারিয়েন্ট কী ?

ফ্রান্সের মেডিটেরানি ইনফেকশন নামক এক সংস্থার গবেষকরা কোভিডের নতুন একটি  ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার করেছেন। যার নাম রেখেছেন আইএইচইউ বা B.1.640.2। গবেষণায় দক্ষিণ পূর্ব ফ্রান্সের মার্সেইলাস এলাকায় বসবাকারী ১২ জনের দেহে করোনার এই নতুন ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। তবে এদের প্রত্যেকেরই আফ্রিকার ক্যামেরুনে যাতায়াতের ভ্রমণ ইতিহাস রয়েছে ।সেখান থেকেই এই ভ্যারিয়েন্ট এর আমদানি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা ।গবেষকরা আরও জানান এখনও পর্যন্ত  এর ৪৬ টি মিউটেশন দেখা গেছে যা ওমিক্রনের থেকেও বেশি। আর তাতেই চিন্তা বেড়েছে বিজ্ঞানীদের।তবে নতুন  ভ্যারিয়েন্ট কতখানি সংক্রামক তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী হবে তাও স্পষ্ট বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

সংক্রমণ ক্ষমতা  

আউটব্রেক.কম অনুসারে একটি ওয়েবসাইট  জিনোম সিকোয়েন্সিং ডেটাবেস ট্র্যাক করে জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত  B.1.640 ভ্যারিয়েন্টের অন্তত ৪০০ টি সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয়েছে । এটি কমপক্ষে ১৯ টি দেশে শনাক্ত করা হয়েছ। এই ভ্যারিয়েন্টটির  সর্বাধিক সংখ্যক সিকোয়েন্স ফ্রান্স থেকে এসেছে। ফ্রান্সে এখনও পর্যন্ত ২৮৭ টি কেস নিশ্চিত করা হয়েছে। জার্মানি থেকে ১৭ টি এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১৬টি মামলা রয়েছে। কিন্তু যে দেশে এই রূপটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বলে মনে হচ্ছে সেটি হল কঙ্গো, যেখানে এখন পর্যন্ত করা ৪৫৪ টি জিনোম সিকোয়েন্সের মধ্যে ৩৯ টি B.1.640 বংশের অন্তর্গত।তবে এর .২ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার খবর ফ্রান্স ছাড়া আর কোথাও শোনা যায়নি। মজার বিষয় হল B.1.640 এর একটি ভারতেরও অন্তর্গত বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই আবিষ্কারের বিষয়ে মহামারী বিশেষজ্ঞ এরিক ফেইগল ডিং ট্যুইট করে জানিয়েছেন, 'এখন করোনার নতুন রূপগুলি একের পর এক আসতে থাকবে। তার মানে এমন নয় যে সবগুলিই বিপজ্জনক। সংখ্যা বৃদ্ধি করার ওপর এর বিপজ্জনক হয়ে ওঠা নির্ভর করে।' মূল ভাইরাসটি থেকে মিউটেশনের সংখ্যাও  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তিনি জানিয়েছেন। ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক বলে মনে করছেন তিনি। সাউথ আফ্রিকাতে জন্মের মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যেই ওমিক্রন ভারতে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে এসেছে। 

চিন্তার বিষয় নয়

করোনার এই নতুন রূপের যে বিপুল সংখ্যক মিউটেশন ঘটেছে তা-ই এ মুহূর্তে তা গবেষকদের প্রধান মাথাব্যথা। B.1.640 এখনও তেমন উদ্বেগজনক নয়। ওয়েবসাইট আউটব্রেক ডট ইনফো অনুসারে, এই ভ্যারিয়েন্টটিকে সর্বশেষ ২৫ ডিসেম্বর শনাক্ত করা হয়েছিল। এর পরে, বিশ্বব্যাপী ডেটাবেসে কোনও নতুন কেস শনাক্ত করা হয়নি।

“প্রমাণ যা পাওয়া গিয়েছে তা নিয়ে এই মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়ার বা খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে আগামীতে বিপদ এড়াতে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার,” মঙ্গলবার একটি টুইট বার্তায় দিল্লি-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানী বিনোদ স্কারিয়া বলেছেন।

More Articles