দশ মিনিটে শনাক্ত মুখের ক্যনসার! খরচও নামমাত্র, অসাধ্যসাধনের গল্প বললেন ওঁরা

মাত্র দশ মিনিটে ওরাল ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্যে ক্ষুদ্র একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন আইআইটি খড়্গপুরের গবেষকরা। বলাই বাহুল্য ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। আমরা এই আবহেই কথা বলেছিলাম এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ড: সুমন চক্রবর্তী এবং এই গবেষণার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত গবেষক ড: অর্ক ভৌমিকের সঙ্গে। রইল সেই কথাবার্তা-

খুব সহজ ভাবে বুঝতে চাইছি আপনাদের আবিষ্কৃত এই যন্ত্র বা টেস্ট কিটটি কী ভাবে মুখের ক্যানসার শনাক্ত করে?

ড: চক্রবর্তী: আমাদের শরীরে বিভিন্ন কলাকোশে তাপমাত্রার পরিবর্তন হতে থাকে যখন ক্যানসার শুরু হয়। অর্থাৎ ওই কলাকোশে সুস্থ অবস্থায় একরকম তাপমাত্রা থাকবে, ক্যানসার পুরোমাত্রায় শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ প্রি-ক্যানসার স্টেজে একরকম তাপমাত্রা থাকবে, এবং ক্যান্সার যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, তখন কিন্তু তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় বাড়তে থাকবে। আমরা ক্যানসার শনাক্তকরণের এই যন্ত্র বা টেস্ট কিট দিয়ে মূলত ওই নির্দিষ্ট কলাকোশের তাপমাত্রা নির্ণয় করে বলতে পারি ওই ব্যক্তির ক্যানসার হয়েছে কিনা বা তিনি ক্যানসার হওয়ার ঠিক আগের পর্যায়ে রয়েছেন কিনা। ক্যানসার ঠিক সময়ে শনাক্ত করা গেলে, বিশেষ করে যদি তা প্রিক্যানসারাস স্টেজে হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু অধিকাংশ সময়েই ক্যানসার নিরাময় অনেকাংশে সহজ হয়ে ওঠে।

কিন্তু মুখের তাপমাত্রা তো আমরা থার্মোমিটার দিয়েই মাপতে পারতাম...

ড: চক্রবর্তী: থার্মোমিটার দেহের সার্বিক তাপমাত্রার একটা হিসেব দেয়, সেটা আমাদের ভুললে চলবে না। কিন্তু আমাদের তৈরি এই যন্ত্রটি দেহের যে কোনো অংশের আঞ্চলিক বা লোকালাইজ়ড তাপমাত্রা জানতে সাহায্য করবে। আর সেই তাপমাত্রার তারতম্য থেকেই আমরা বুঝব ওখানে ক্যানসার তৈরি হচ্ছে কিনা বা হলেও তা কোন স্টেজে রয়েছে।

ক্যানসার হলে ওই অঞ্চলের কলাকোশের তাপমাত্রার পরিবর্তন কী ভাবে হয়? কেনই বা হয় এরকম?

ড: চক্রবর্তী: ক্যান্সার হলে বা কোনো কলাকোশ ক্যান্সারের দিকে এগোলে, কোশের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শুরু হয়। তাদের পুষ্টি, অক্সিজেন সরবরাহ করতে বাড়তে থাকে রক্ত সংবহনও। প্রচুর শিরা ও ধমনী গঠন হতে থাকে - রক্ত সরবরাহ বাড়লে সেই কলাকোশের রক্তের সাথে তাপের প্রবাহ বাড়তে থাকে। ফলস্বরূপ তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। 

এদিকে কোশগুলি যখন আরও বাড়তে থাকে সংখ্যায়, পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে শিরা-ধমনীর সংখ্যা। শেষমেশ এমন অবস্থা দাঁড়ায়, পুরোনো-নতুন শিরা-ধমনী জড়িয়ে-পেঁচিয়ে একে-অপরকে রক্ত প্রবাহে বাধা দেয়। তখন আবার কমে যায় তাপমাত্রা, রক্ত প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গেই। এই অবস্থায় আমরা তাপমাত্রা মেপে বলতেই পারি যে ক্যানসার বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে।

শরীরের কোনো ক্ষুদ্র অংশের কলাকোশে যে তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে, তা এই যন্ত্রটি কী ভাবে মাপবে?

ড: চক্রবর্তী: তাপমাত্রা মাপার জন্যে আমরা একটি খুব ছোটো প্রায় তিন মিলিমিটার সাইজের থার্মাল বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করছি। এই ক্যামেরা দিয়ে নির্দিষ্ট ওই কলাকোশের বিভিন্ন অংশে যে তাপমাত্রা থাকে,  সেই তাপমাত্রার তারতম্যকে মেপে আমরা মানচিত্রের মত করে প্রকাশ করি। এই ম্যাপকে বলে হিট ম্যাপ। পরিবেশের তাপমাত্রা বোঝাতেও এরকম হিট ম্যাপের ব্যবহার হামেশাই করা হয়ে থাকে। ম্যাপে লাল রং বলে দেয় তাপমাত্রা যে খুব বেশি, এদিকে নীল রং ইঙ্গিত দেয় তাপমাত্রা যে একেবারেই কম।

শরীরের তাপমাত্রা তো বিভিন্ন কারণে বদলায়, তার কারণ যদি ক্যানসার না নয়, তাহলে?

ড: চক্রবর্তী : একাধিক শারীরিক কারণেই তাপমাত্রার পরিবর্তন হতে পারে, যেমন ধরা যাক জ্বর, বা আমাদের খাবার খাওয়ার পর শক্তি উৎপাদনের কারণে। তাই কেবল তাপমাত্রার তারতম্যের উপর নির্ভর করেই আমরা বলে দিতে পারবো না সেটা ক্যান্সার কিনা। আর ঠিক এই জন্যেই, যখনই তাপমাত্রার পরিবর্তন দেখা যাবে, তখনই আরও খুঁটিয়ে দেখা হয় কোন অংশে রক্ত কতটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ওই কলাকোশের শিরা-ধমনীর একে-অপরকে বাধা দেওয়ার কারণে। 

ক্যানসার হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হবেন কী করে?

ড: চক্রবর্তী: আমরা মুখের ভেতর যেখানে দেখি লাল-সাদা দাগ হয়েছে, বা দীর্ঘদিন ধরে ঘা রয়েছে, সেই জায়গাটির একটা ছবি তুলি ক্যামেরাটিকে তিরিশ সেকেন্ড ধরে রেখে। এইবার আমরা কম্পিউটার অ্যালগোরিদমের সাহায্য নি। এই যে হিটম্যাপটা পেলাম, সেটাকেই আমরা কম্পিউটার অ্যালগোরিদমে ঢুকিয়ে দি।

এই তাপের প্রবাহের জন্যে যে তাপমাত্রার সাম্যাবস্থা দেখা যায়, তার তো গাণিতিক সূত্র আছে, যাকে বলে বায়োহিট ইক্যুয়েশন। সেই সূত্রকেই আমরা কম্পিউটার কোড-এ পরিণত করেছি। এখানে যদি আমরা রক্তের প্রবাহ কত তা জানতে পারি, তাপমাত্রাও আমরা হিসেব করে বের করে নিতে পারব এই সূত্রের সাহায্যেই। আবার সমীকরণকে এদিক-ওদিক করে তাপমাত্রা থেকে রক্তের প্রবাহ কত তা ধরে ফেলতে পারি। এই রক্তপ্রবাহের ধরণ ক্যানসার বা প্রি-ক্যান্সারাস স্টেজের রক্তপ্রবাহের ধরনের সঙ্গে মিললে আভাস পাওয়া যায় বিপদ কতখানি। আর এই পর্যায়ে  আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সেরও সাহায্য নি। সেখান থেকেই বোঝা যায় রোগীর ক্যান্সার হয়েছে কিনা, বা হলেও কোন পর্যায়ে তা রয়েছে। যে অ্যালগোরিদম বানালাম আমরা তার সাহায্যে কম্পিউটার হিসেব করে ওই ব্যক্তির ক্যানসার হয়েছে কি-না, তারপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে টেস্টের রিপোর্ট কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনেই দেখা যায়।

এই যন্ত্রের ক্যামেরাটা রোগীদের মুখে প্রবেশ করাতে অসুবিধে হবে না?

ড: চক্রবর্তী: যন্ত্রটি খুবই ছোটো একটি টর্চের মত,  হাতেই ধরা যায়; এবং এটি মুখের শেষ প্রান্ত অবধি প্রবেশ করানো যায়।

সাধারণ মানুষ কী ভাবে লাভবান হবেন এই আবিষ্কারের ফলে?

ড: চক্রবর্তী: এই যন্ত্রের সাহায্যে খুব অল্প খরচে, সহজে ক্যানসার শনাক্ত করা যায়। সমস্যা হল, ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্যে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো পরিকাঠামো থাকে না বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষদের শহরে ছুটে আসতে হয়, শুধু তাই নয় ক্যান্সার শনাক্তকরণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলোও ব্যয়সাপেক্ষ, অন্তত গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যে। এই যন্ত্রগুলি যদি গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখা যায়, তাহলে সমস্যা অনেকটা কমে।

ইনফ্রারেড ক্যামেরা, হিট ম্যাপ, এত গাণিতিক সমীকরণ, অ্যালগোরিদম সব শুনে তো মনে হচ্ছে  পরীক্ষাটি যে স্বাস্থ্যকর্মী করবেন, তাঁর যন্ত্রটির কাজের ধরন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের প্রয়োজন...

ড: চক্রবর্তী: একেবারেই কোনো প্রাথমিক জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। এই সমীকরণ, অ্যালগোরিদম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদির কাজ আমরাই করে কম্পিউটারকে তৈরি করে রেখেছি। স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ শুধু মুখের ভেতরে যন্ত্রটিকে ধরা, খুবই সোজা কাজ। আর বাকি রিপোর্ট তো ফোন বা কম্পিউটারে দশ মিনিটেই দেখতে পাওয়া যাবে।

তাহলে কী অন্যান্য টেস্ট বা বায়োপ্সি একেবারেই করতে হবে না?

ড: চক্রবর্তী: করতে হতে পারে, যদি হিটম্যাপ দেখেও মুখের ক্যানসার সহজে শনাক্ত না করা যায়। খুব সমস্যা হলে বা শারীরিক অবস্থার জটিলতা দেখে হয়তো বাদবাকি টেস্ট বা বায়োপ্সি করতে হতে পারে ডাক্তারদের পরামর্শে।

 শুধু কি ওরাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই এই গবেষণা কাজে লাগবে, নাকি শরীরের অন্যান্য ক্যান্সারও শনাক্ত করতে পারবে এই যন্ত্র?

ড: চক্রবর্তী: শরীরের সমস্ত রকমের ক্যান্সারই শনাক্ত করতে পারবে এই  যন্ত্র, কিন্তু ওরাল ক্যানসার শনাক্ত করার জন্যে শরীরে ছুরি-কাঁচি চালাতে হয় না, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়। এটি একটি কারণ ওরাল ক্যানসারের দিকেই মনোনিবেশ করার।

কিন্তু ত্বকের ক্যান্সারও তো শরীরের বাইর থেকে শনাক্ত করা সম্ভব। এমনকি তাই আমার ছাত্র অর্কই প্রথম ভাবে ত্বকের ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্যে আমাদের গবেষণাকে কাজে লাগানোর কথা ভেবেছিল। কিন্তু ভারতে ওরাল ক্যান্সারের ঘটনা অনেক বেশি, বলা যেতে পারে তৃতীয় বা চতুর্থ  সারিতেই এর অবস্থান। ত্বকের ক্যানসারের ঘটনা খুবই কম সেই তুলনায়। তাই আমরা সবদিক ভেবে ওরাল ক্যান্সারকে লক্ষ্য করেই এগোই।

ল্যাবরেটরি টেস্টটা ঠিক কী পদ্ধতিতে করা হল?

ড: ভৌমিক: আমরা প্রথমে ল্যাবরেটরিতে ফ্যান্টম বা পরীক্ষাযোগ্য মডেল তৈরি করে পরীক্ষা করা শুরু করি। ফ্যান্টম মূলত বানানো হয় জেল দিয়ে, এবং শিরা-উপশিরার অনুকরণে তারমধ্যে ছোটোছোটো পাইপ দিয়ে রক্তসরবরাহ করা হয়। এই পরীক্ষার পর যখন আশাপ্রদ ফল পাওয়া শুরু করলাম, আমরা তখন পাণিহাটির গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ ডেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চের সাথে কাজ আরম্ভ করি মানুষের উপরে সরাসরি পরীক্ষা করার জন্যে। (একটু অমায়িক হেসে) এবং আমি এর জন্যে প্রায় টানা এক বছর যন্ত্রটাকে নিয়ে রোজ খড়্গপুর থেকে পাণিহাটিতে যাতায়াত করেছি!

বাস্তবে মানুষের দেহে পরীক্ষা করে কি এখনও দেখা হয়েছে? ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কোন পর্যায়ে রয়েছে এখন?

ডঃ চক্রবর্তী:  প্রায় ষাট জন ব্যক্তিকে নিয়ে গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ ডেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চে প্রথম ফেজে়র ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এই ফেজে়র ট্রায়াল ড: মৌসুমি পাল ও ড: রঞ্জনরশ্মি পালের তত্ত্বাবধানে করা হয়েছে। প্রথম ফেজের ট্রায়াল আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে।

 তবে আমরা উড়িষ্যার বেশ কিছু অঞ্চলে গিয়ে ফীল্ড ট্রায়াল করবো। কারণ আমরা ল্যাবের বাইরে একদম বাস্তবে নিয়ে গিয়ে বেশী সংখ্যক মানুষের উপরে পরীক্ষা করতে চাইছি।

পরবর্তী ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল উড়িষ্যাতেই করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?

ডঃ চক্রবর্তী:  ওড়িশা ভারতবর্ষে ওরাল ক্যান্সারের হাব, প্রচুর ঘটনা চোখে পড়ে এই রাজ্যে ওরাল ক্যান্সারের। তাই আমাদের এই সিদ্ধান্ত।

বানিজ্যিকরণের কথা কি ভেবেছেন আপনারা?

ডঃ চক্রবর্তী:  এই যন্ত্রটি বাজারে আনার আগে বিভিন্ন সংস্থা বানিজ্যিক ভাবে তা বানাতে পারে, তবে পুরোপুরি বানিজ্যিক না করে কিছু দায়িত্ব সরকারের হাতে দেওয়াই যায়। তাহলে অল্প খরচে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই যন্ত্রের ব্যবস্থা করা যায়।

এই কিটটির দাম কেমন হতে পারে?  সাধ্যে কুলোবে সাধারণ মানুষের?

ডঃ চক্রবর্তী: দাম সাধারণত বানিজ্যিক সংস্থাগুলী নির্ধারণ করে। আমাদের পক্ষে বলা খুবই কঠিন দাম কত হতে পারে। আমরা যে প্রসেসরগুলো ব্যবহার করেছি, তার দাম প্রায় তিরিশ হাজারের কাছাকাছি। তবে সুখবর হল, এই প্রসেসরগুলি ল্যাবের মত জায়গাতেই ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা এত উচ্চমানের প্রসেসর ব্যবহার না করে কম দামী প্রসেসর ব্যবহার করলে দাম প্রায় দশ হাজারের মধ্যে আনা যাবে বলেই আমার ধারণা। আর সাধারণ মানুষকে তো এই যন্ত্রগুলি কিনতে হবে না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এককালীন খরচেই কেনা যাবে এদের এবং তার জন্যে বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ পরিকাঠামোও লাগবে না।

আপনারা কোভিড শুরু হওয়ার সময় একটি টেস্ট কিট তৈরি করে সাড়া ফেলেছিলেন। তার সাফল্য কেমন এই মুহুর্তে?

ডঃ চক্রবর্তী:  সেই টেস্ট কিটটি বেশ সফল এবং বিভিন্ন বানিজ্যিক সংস্থা লাইসেন্স পাওয়ার পর  তা উৎপাদন করছে ইতিমধ্যেই। আশা করা যায় বাজারে আসবে দ্রুতই।

ভারতবর্ষের মানুষ তো ওরাল হেলথ নিয়ে এখনও অনেকটাই উদাসীন। সেই ব্য়াপারটাই কি কোথাও গিয়ে আপনাদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠল?

ডঃ চক্রবর্তী:  সত্যি বলতে এই গবেষণার খুব ফোকাসড কোনো ইন্সপিরেশন বা মোটিভেশন ছিল এমন নয়। সব সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই ভাবে শুরু নাও হতে পারে। আমাদের রিসার্চ টিম অনেকদিন ধরেই শরীরের মধ্যে তাপমাত্রার প্রবাহ বা বায়োলজিকাল হিট ট্রান্সফার নিয়ে কাজ করছিল আর এই কাজ করতেই করতেই প্রথম মাথায় আসে, আমাদের গবেষণাকে কী ভাবে বাস্তবে কাজে লাগানো যায়।

তবে আমাদের মোটিভেশন বা ইন্সপিরেশন যা-ই থাকুক না কেন, আমাদের ল্যাবের মূল ফিলোজ়ফি হল বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে প্রান্তিক মানুষের কাছ অবধি পৌঁছে দেওয়া, আমাদের অবিষ্কারকে তাঁদের জীবনে কাজে লাগানো। আমরা উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানে বসে গবেষণা করি, সুনাম অর্জন করি। আমরা একের পর এক বৈজ্ঞানিক জার্নালে কেবল নিজেদের গবেষণার ফল প্রকাশ করি এবং নিজেদের কেরিয়ার উজ্জ্বল করি; কিন্তু মানুষের উপকারে যদি সেই গবেষণা না লাগে, তাহলে আর এ সবের মানে কী!

দুই বিজ্ঞানীর পরিচিতি এক নজরে-

ড: সুমন চক্রবর্তী আইআইটি খড়্গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর এবং স্কুল অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের প্রাক্তন প্রধান। তিনি ইতিপূর্বে আমেরিকান ফিজি়ক্যাল সোসাইটি এবং রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির (ইংল্যান্ড) ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি, ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এবং ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের ফেলো নির্বাচিত হন।

ড: অর্ক ভৌমিক বেশ কিছু বছর পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে আইআইটি খড়্গপুরে ড: চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলিতেও গবেষণায় যুক্ত ছিলেন এবং বর্তমানে নিউ ইয়র্কের একটি ক্যানসার হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছেন।

More Articles