মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোন, এই রোগগুলি হতে পারে আপনারও

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ও অসুস্থতা সম্পর্কে ধারণা খুবই অস্পষ্ট। মানসিকভাবে অসুস্থদের ‘পাগল’ বলে দাগিয়ে দিয়েই দ্বায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেন তাঁর আত্মীয় পরিজনেরা। শারীরিক অসুস্থতার মতো রোগীর শরীরে ব্যাথা-বেদনার উদ্রেক না হওয়ায় আজও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গেছে আমাদের সমাজে। ২০১৬ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ভারতের প্রায় ১৪% মানুষের মানসিক শুশ্রূষার প্রয়োজন রয়েছে। অতিমারি পরবর্তী সময়ে এই পরিসংখ্যান বেড়েছে লাফ দিয়ে।ছোট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলেরই মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়েছে এই সময়।

বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে দীপিকা পাড়ুকোন বিভিন্ন সময়ে একাধিক মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভক্তদের সচেতন করেছেন। কিন্তু তাতে কতখানি কাজ হয়েছে সেবিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। সদ্য বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহও বলেছেন তিনি ওনোম্যাটোম্যানিয়া নামক জটিল অসুখে আক্রান্ত। তাতেই নেট নাগরিকদের অনেকেই ইন্টারনেট সার্চ করে জানার চেষ্টা করেছেন এই রোগের ব্যাপারে। শারীরিক অনেক রোগের নাম আমাদের জানা থাকলেও মানসিক রোগের নাম বা রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। চলুন বিশদে জেনে নেওয়া যাক কিছু মানসিক রোগের বিষয়ে-

ওনোম্যাটোম্যানিয়া

চিকিৎসকদের মতে ওনোম্যাটোম্যানিয়া হল এমন একটি অবস্থা যখন ব্যক্তি কিছু নির্দিষ্ট শব্দ, বা গোটা একটা বাক্যবন্ধ ক্রমাগত আওড়াতে থাকে। এছাড়াও ঘুমের মধ্যে ব্যক্তি কথা বলতে থাকেন। যিনি এমন সমস্যায় ভুগছেন সেই ব্যক্তি কিছুতেই সেই শব্দ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। কোনো কাজ থেকে বিশ্রাম নিতে পারেন না ফলে অনবরত কাজ করতেই থাকেন। ফলে ঘুমের সমস্যা হয়। তবে অনেক চিকিৎসকই এই মানসিক অবস্থাকে অসুখ বলতে নারাজ। তাঁদের মতে এমন মানসিক অবস্থা কোনোভাবেই দৈনন্দিন জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে না।

ক্রিপ্টোমনেশিয়া

এই অবস্থায় ব্যক্তি মনেই করতে পারেন না একটি নির্দিষ্ট ঘটনা ঠিক কখন বা কোথায় ঘটেছে। যেমন ধরুন, ব্যক্তিটি কোনো ঘটনা বইয়ে পড়েছেন কিন্তু পরবর্তীকালে সে কিছুতেই মনে করতে পারেন না কোথায় ঘটেছিল সেই ঘটনা। এমনকি তা বাস্তব না কল্পনা তাও বুঝে উঠতে পারেন না। অর্থাৎ ঘটনার উৎস সম্পর্কে  নিশ্চিতভাবে ভাবতে ব্যর্থ হন। এই অবস্থায় পরিচিত জায়গা বা ব্যক্তিও তাঁর কাছে অপরিচিত বলে মনে হয়।

ক্যাপগ্রেস ডেল্যুশন-

 ক্যাপগ্রেস ডেল্যুশনে ব্যক্তি তাঁর খুব কাছের একজনকে বন্ধু বা পরিচিতকে নিজের জমজ বলে কল্পনা করতে শুরু করেন, যার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। এক্ষেত্রে রোগী বিভিন্ন খারাপ বা অপরাধমূলক কাজ করে সেই মানুষটির ওপর দায়ভার চাপিয়ে দেন।রোগী নিজেও বুঝতে পারেন না তিনি নিজে এমন কাজ করছেন। অনেক সময় সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর এই লক্ষণগুলি থাকে।

এরোটোম্যানিয়া

এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় মনে করেন যে চারপাশে থাকা কোনো মানুষ তাঁর প্রেমে পড়েছেন। রোগী মনে মনে ভাবেন তাঁর স্বল্প পরিচিত উচ্চ সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিই তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। রোগীর প্রতি সহানুভূতি, সৌজন্যতা বা আন্তরিকতা দেখালে রোগী ভেবে নেন তাঁর প্রতি ভালবাসা নিবেদনের জন্যই এমন করছেন। আরও মনে করেন আশেপাশের মানুষ যেন বুঝতে না পারেন তাই এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিচ্ছেন।

অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিন্ড্রোম

এক্ষেত্রে ব্যক্তির তাঁর চারপাশের  জিনিসকে দেখার দৃষ্টি বদলে যায়। অর্থাৎ কোন জিনিস বা কোন জায়গার সঠিক অবস্থা বা আকৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকেনা। সব জিনিসেরই প্রকৃত আকারের তুলনায় সেটিকে ছোট বা বড় বলে মনে হয়।এই মানসিক অবস্থা মারাত্মক রূপ ধারণ করলে ব্যক্তি নিজের শরীরের আকৃতিও সঠিকভাবে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হন। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের সমস্যা বলে মনে হলেও এটি আদতে একটি মানসিক সমস্যা।

প্রসোপ্যাগ্নোশিয়া

আগেরদিন একজন ব্যক্তির সাথে আলাপ হয়েছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছেন তাঁর মুখ, এমনটা ঘটনা অনেক সময়েই আমাদের সাথে হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন এমন হতে থাকলে আপনার মানসিক সমস্যার কারণেই হচ্ছে বলে মনে করা হয়।তবে প্রসোপ্যাগ্নোশিয়ায় আক্রান্ত রোগী মনেই করতে পারেন না সেই মুখ তিনি আগে কখনও দেখেছেন কিনা। গভীর সমস্যা দেখা  দিলে কিছুক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের মুখও ভুলে যান। উল্লেখ্য,স্ট্রোক হওয়ার পরে সাধারণত রোগীর মধ্যে এই লক্ষণ প্রকাশ পায়।  তবে গবেষণা বলছে পৃথিবীর ২.৫% মানুষের ক্ষেত্রে জন্ম থেকেই এই রোগ দেখা যায়।

অ্যাপহানটেশিয়া

অ্যাপহানটেশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি মনে মনে কোনো জিনিসের ছবি কল্পনা করতে পারেন না। যেমন ধরুন, বল শব্দটি শোনার পাশাপাশি আমাদের মনেও গোলাকার ছাঁচ ভেসে ওঠে।কিন্তু এই মানসিক সমস্যা থাকলে তিনি তাঁর মনে কোনো ছবি কল্পনাই করতে পারবেন না রোগী।

তবে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ ও থেরাপি চললে মানসিক সমস্যা সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ও হয়ে যায়।

More Articles