দূরতম ছায়াপথ থেকে আসছে রহস্যময় 'সিগন্যাল'! কীসের ইঙ্গিত পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা?

Mysterious Radio Signal from Distant galaxy : হঠাৎ এমন তরঙ্গ ভেসে আসার কারণ কী? কোনও বিশেষ ‘বার্তা’ পাঠাতে চাইছে কেউ?

তারারা কত আলোকবর্ষ দূরে, সেই কথাটি গানে গানে প্রকাশ করেই ফেলে বাঙালি। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ সেই গানেই বোকাবাক্সের কথা শুনেছিল সবাই। কিন্তু এবার সেই দূর আলোকবর্ষ থেকেই ভেসে এল অদ্ভুত একটা ‘সংবাদ’। আর সেটা এসে ধরা পড়ল ভারতীয় বিজ্ঞানীর কাছেই। মহাবিশ্বের দূরতম জায়গা থেকে এই রহস্যময় রেডিও সিগন্যালদেখে খানিক তাজ্জবও হয়ে যান বিজ্ঞানীরা। হঠাৎ এমন তরঙ্গ ভেসে আসার কারণ কী? কোনও বিশেষ ‘বার্তা’ পাঠাতে চাইছে কেউ? সেজন্যই এরকম তরঙ্গ? তাহলে কি… এসব ভিনগ্রহীদের কাজ?

তবে কেবল ভারতীয় নন, কানাডার বিজ্ঞানীরাও এই বিশেষ সিগন্যালের হদিশ পেয়েছেন। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টোরাল গবেষক অর্ণব চক্রবর্তীও সেই দলে আছেন। তিনি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, হঠাৎই এই বিশেষ রেডিও সিগন্যাল তাঁদের নজরে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গবেষণার কাজ। বিস্তর পরীক্ষা নীরিক্ষার পর দেখা গিয়েছে, নয় বিলিয়ন অর্থাৎ ৯০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি ছায়াপথ থেকে এই তরঙ্গ ভেসে এসেছে! এতটাই দূরে সেই জায়গাটি যে, সেখানে পৌঁছতে আরও কয়েকশো কোটি বছর লেগে যাবে! সেখান থেকে এমন সিগন্যাল! রহস্য যেন আরও বাড়ল!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রহ্মাণ্ডের দূরতম প্রান্তগুলির মধ্যে একটি হল এই অঞ্চলটি। সেখান থেকে একটি অজানা রেডিও তরঙ্গ ভেসে আসা মানে বৈজ্ঞানিক দিক থেকেও সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষ ছায়াপথের নাম ‘SDSSJ0826+5630’। কিন্তু প্রায় ৯০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এই ছায়াপথ থেকে ভেসে আসা তরঙ্গ টিকে থাকল কী করে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর জন্য দায়ী পদার্থবিদ্যার একটি বিশেষ জিনিস, নাম ‘গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং’। মহাকাশে খুব স্বাভাবিকভাবেই এই বিশেষ ব্যাপারটি ঘটে। লেন্স আমাদের দৃষ্টিশক্তি ঠিক করতে সাহায্য করে, আলোর গতিপথকে নিজের স্বভাব অনুযায়ী প্রভাবিত করে। কখনও দূরের জিনিস কাছে আসে, কখনও ছোট জিনিসকে বড় করে দেখায় লেন্স।

মহাকাশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন বস্তু। সেটা নক্ষত্র হতে পারে, কিংবা গ্রহ, উপগ্রহ বা অন্য কিছু। সবার মহাকর্ষ শক্তি আলাদা আলাদা। এই ভিন্ন মহাকর্ষ শক্তির ভেতর দিয়ে আসার সময়ই রেডিও তরঙ্গটি শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে। তাই এতদূর থেকে আসার পরও ধরা পড়েছে এটি। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখনও বাকি থেকে গেল। কেন এমন রহস্যময় তরঙ্গ ভেসে এল মহাকাশ থেকে?

ভারতীয় ও কানাডার বিজ্ঞানীদের দল জানাচ্ছেন, মহাকাশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে নানা রকম সিগন্যাল নির্গত হয়। সেখানে রেডিও তরঙ্গও থাকে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই বিশেষ রেডিও সিগন্যালটি আসলে বহু বহু প্রাচীন। সঠিকভাবে বলতে গেলে, বিগ ব্যাংয়ের পর আমাদের এই মহাবিশ্বের বয়স যখন প্রায় ৪৯০ কোটি বছর, তখনই এই রেডিও তরঙ্গটি সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর ৪৫০ কোটি বছর আগে আমাদের সৌরমণ্ডল তৈরি হয়। মানে, এই বিশেষ রেডিও তরঙ্গটি সূর্য ও পৃথিবীর জন্মের আগেই তৈরি হয়েছিল!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৪৯০ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া এই তরঙ্গ এখন এসে ধরা দিয়েছে পৃথিবীতে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে এর থেকে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতের গবেষণার ক্ষেত্রে এই রহস্যময় রেডিও তরঙ্গ অনেক কাজে আসবে। মহাবিশ্বের গোপন রহস্য উন্মোচন করতেও সাহায্য করতে পারে এই বিশেষ রেডিও তরঙ্গ।

More Articles