প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক, দাম লাখ পাঁচেক, শোরগোল বিশ্বকাপে রেফারিদের ঘড়ি নিয়ে

Fifa World Cup : একে রেফারির হাতঘড়ি, তায় আবার বিশ্বকাপ অত্যাধুনিক তো হবেই!

ঝলমলে ময়দান, হাজার হাজার আলো, দর্শকের ভিড় আর তার মধ্যেই রোজদিন চলছে খেলোয়াড়ী জাদু। বড় টিমের পাশাপাশি দাপট দেখাচ্ছে ছোট টিমগুলিও। আলোচনা, পর্যালোচনা সবই চলছে। কিন্তু সবটাই হচ্ছে ম্যাচের ওই অফসাইড আর এক্সট্রা টাইমকে ঘিরেই। আর এসব নিদান যিনি দিয়ে থাকেন তিনি হলেন রেফারি। কিন্তু রেফারি একা নন, নেপথ্যে রয়েছেন আরও একজন। ৯০ মিনিটের ম্যাচের সেই আসল তারকা। রেফারিমশাইও চোখ বুজে ভরসা করেন তাকেই। মাত্র কয়েক ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, আর তাতেই বাজিমাত। কেমন নিজের নিয়মে বেঁধে রাখে পুরো ম্যাচটাকে। একেবারে কাঁটায় কাঁটায়। ম্যাচের এই মহার্ঘ্য বস্তুটি হল রেফারির ওই হাতঘড়িটি।

বিশ্বের যে কোনও ফুটবল ম্যাচে রেফারিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল এই হাতের ঘড়িটিই। মাঠে নামার সময় বাঁশি, হলুদ আর লাল কার্ডের সঙ্গে এটিকেও নিতে ভুললে চলবে না! এটি ছাড়া অচল বাকি তিনটিও। তাই কব্জিতে শক্ত করে বেঁধে নিতেই হয় তাকে। তারপর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্তের সঙ্গী সে। খুব উত্তেজনার সময়ও তার একটুও বিচলিত হওয়ার জো নেই। নিজের পছন্দের টিমকে খানিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার সাধ জাগলেও তা মারা যায় ওই ফুটবলের মাঠেই। কাঁটার সঙ্গে কাঁটার সংঘর্ষ চালিয়ে সে ইচ্ছে দমন হয় খানিক। বিনা শব্দেই নিয়ত নজর কাড়ে রেফারির। অতঃপর হাফ টাইম, ফুল টাইম এবং মুক্তি।

আরও পড়ুন : ‘টিয়েন্টো’ থেকে ‘আল রিহালা’, ৯২ বছরে বিশ্বকাপের ফুটবলখানাই হয়ে উঠলো ‘হাইটেক’

একে রেফারির হাতঘড়ি, তায় আবার বিশ্বকাপ, ব্যাপারখানা যে নেহাৎ সাধারণ কিছু হবে না সেকথা সবাই জানে। রক্ত-মাংস তার নেই ঠিকই তবে যা যা আছে তাও তাক লাগাতে বাধ্য। সময় গড়ানো যার কাজ, সে নিজেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। অত্যাধুনিক রেফারি এসেছে যখন আরও অত্যাধুনিক ঘড়ি না হলে চলবে কেন! এবছরের কাতার বিশ্বকাপে রেফারিরা যে ঘড়ি ব্যবহার করছেন, তাতে রয়েছে অভিনব প্রযুক্তি। তা কেবল সময় দেখায় না। এক ঘড়ি করে আরও অনেক কাজ। কী সেই কাজ? দেখতে কেমন বিশ্বকাপের রেফারির হাতঘড়ি? দামই কত? রয়েছে হাজার প্রশ্ন।

আগেকার দিনে রেফারিদের ঘড়ি পরতে হত শুধু সময় দেখার জন্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই ঘড়ির কাজ অনেক বদলে গিয়েছে। পথ চলতি সাধারণ মানুষই এখন পুরনো ঘড়ি পরতে চায় না। দম দেওয়া ঘড়ি তো অনেকদিনই দম হারিয়েছিল, এখন স্মার্ট ওয়াচ এসে চিরাচরিত কাঁটার ঘড়িতেও অরুচি ধরিয়েছে। কালো কালো ঘড়িই এখন হাতে হাতে ফিরছে। শুধু সময় দেখে আর সময় নষ্ট করেন না কেউই, তার সঙ্গে দেখে নেন শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপের মাত্রা অথবা কতটা হাঁটাহাঁটি করেছেন তার হিসেবও। ডিজিটাল জমানায় এটাই দস্তুর। সেখানে বিশ্বকাপের ময়দানে রেফারির ঘড়িবাবু যে আরও অনেক বেশি ‘স্মার্ট’ হবে, সে তো বটেই।

প্রযুক্তিগত ভাবে অনেকটাই উন্নত হয়ে উঠেছে রেফারিদের ঘড়ি। এবার বিশ্বকাপে-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনেও তাই রয়েছে হাতঘড়িটিই। শুধু মাঠেই রয়েছ যে তা নয়। মাঠে থেকে বাইরেটাও সামলাচ্ছে সে। মাঠের রেফারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিচ্ছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির। সুইস ঘড়ির জয় সর্বত্র, বিশ্বকাপও তার ব্যতিক্রম নয়। ফিফা রেফারিদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে হাত ঘড়ি সরবরাহ করছে সুইজারল্যান্ডের সংস্থা হাবলট। বাজারচলতি যে সব দামি স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়, তার থেকে আরও অনেক বেশি প্রযুক্তি রয়েছে এই ঘড়িগুলিতে। খেলার মাঠে রেফারিদের যে যে তথ্য দরকার, তার সবই মিলবে ওই কয়েক ইঞ্চির হাত ঘড়িতে।

আরও পড়ুন : পুরুষদের বিশ্বকাপে ম্যাচ সামলাবেন এই মহিলা, যে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব

গুগল ওয়্যার ওএস অপারেটিং সিস্টেমে চলা এই স্মার্টওয়াচ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। সামনে আছে বড়সড় ধাতব বেজেল। গোল ডিসপ্লে ব্যবহার করেছে হাবলট। সাধারণত কালো সেরামিক এবং কালো টাইটানিয়ামের ডায়ালই রয়েছে ঘড়িতে। ডায়ালটির ব্যাস ৪৪ মিলিমিটার। ঘড়ির স্ট্র্যাপে রয়েছে কাতারের পতাকা। এছাড়া রেফারি যদি চান, সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশের যে কোনও একটির পতাকাও আঁকাতে পারেন ঘড়িতে। এখানেই শেষ নয়, এই ঘড়ির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন চিপ। এর মাধ্যমেই যাবতীয় তথ্য আনাগোনা চলছে বিশ্বকাপের মাঠে। অফসাইড, গোললাইন পার, ফাউল, হ্যান্ডবল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ এলেই সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে ওঠে রেফারির কবজি। তৎক্ষণাৎ প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেন রেফারি। এমনকী কোনও ফুটবলারের সম্পর্কে তথ্য দরকার হলে, সেটাও রেফারি পেতে পারেন এই ঘড়ির মাধ্যমেই। তাও আবার চটজলদি।

এই এত এত কাজ, তাও আবার এক ঘড়িতেই। এমন ঘড়ির দামও তাই আকাশছোঁয়া। ৫,৪৮০ ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকার কাছাকাছি দাম প্রতিটি ঘড়ির। জানা গিয়েছে, মোট ১০০০টি ঘড়ি তৈরি করা হয়েছে সুইস সংস্থার তরফে। এবারের বিশ্বকাপে মোট ১২৯ জন ম্যাচ পরিচালক রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ জন রেফারি, ৬৯ জন সহকারী রেফারি এবং ২৪ জন ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি। রয়েছেন ছ'জন মহিলা রেফারিও। তার মধ্যে স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট ম্যাচও খেলিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক রেফারিকেই দেওয়া হয়েছে এই বিশেষ ঘড়িটি। প্রত্যেকেই ম্যাচে নেমেছেন অভিনব এই সুইস ঘড়িটি কবজিতে বেঁধেই।রেফারিদের পাশাপাশি কাতারে আসা ভিভিআইপি অতিথি এবং প্রাক্তন খেলোয়াড়দেরকেও এই ঘড়ি উপহার দেওয়া হচ্ছে। প্রাক্তন ফুটবলার লুইস ফিগো, মার্সেল দেসাই জানিয়েছেন ঘড়ি প্রাপ্তির সংবাদ। তবে সাধারণ মানুষের জন্য এখনও বাজারে আনা হয়নি এই ঘড়িগুলি। তাই এই ঘড়িতে সময় দেখার অনুভূতি পেতে অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। আপাতত যতদিন বিশ্বকাপ চলছে ততদিন চোখে দেখেই স্বাদ মিটুক। কিন্তু অপছন্দের অফসাইড হলে রেফারির সঙ্গে ঘড়িটিকেও কথা শোনাতে ভুলবেন না!

More Articles