প্রিয়জনের থেকে গোলাপ পেয়ে ফেলে দিচ্ছেন! সুস্থ থাকার যে সুযোগ অজান্তেই হারাচ্ছেন

Rose Health Benefits : ভাবে গোলাপ নষ্ট করে আখেরে ক্ষতিই করছেন। যদি সেই জিনিসই আমাদের শরীরকে আরও সুস্থ, তরতাজা করে তোলে?

দেখতে দেখতে চলে এল আরও একটা ভ্যালেন্টাইনস ডে। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে দিনগুলি কাটানোর এমন সুযোগ কি কেউ ছাড়ে! রোজ দে দিয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র প্রেমের সপ্তাহ শুরু। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসা আর গোলাপ একসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। হাতে হাত রেখে, পকেটে ফুল নিয়ে যুগলরা নেমে পড়েন রাস্তায়, নদীর ধারে।

আর তারপর? ফুল তো চিরকাল একসঙ্গে থাকবে না। ভ্যালেন্টাইনস ডে চলে যাওয়ার পর সেই গোলাপের গোছা আমরা ফেলে দিই। প্রতি বছরই এই এক ছবি দেখা যায় বিশ্বজুড়ে। কিন্তু এভাবে গোলাপ নষ্ট করে আখেরে ক্ষতিই করছেন। ভালোবাসার মানুষটি যে উপহার দিয়েছে, তাকে আরও লম্বা সময় কাছে রাখতে ইচ্ছে করে না? কেমন হয়, যদি সেই জিনিসই আমাদের শরীরকে আরও সুস্থ, তরতাজা করে তোলে? গোলাপ কেবল প্রেমের প্রতীক নয়; শরীর সুস্থ রাখতেও তার জুড়ি মেলা ভার। অথচ না জেনেই সেই ফুল ফেলে দিই। গোলাপের সঙ্গে কীভাবে জড়িত আমাদের শরীর, স্বাস্থ্য? আসুন জেনে নিই।

গোলাপের উপকারিতা ও গুলকন্ড (Gulkand)

যারা পান খান, তারা এই বস্তুটির নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। ভারতের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন পানের গুমটিতে পাওয়া যায় এই গুলকন্ড। আর এই বিশেষ জিনিসটি তৈরির প্রধান উপকরণ কিন্তু গোলাপ ফুলই! নানা মশলার সঙ্গে এই গুলকন্ডও পানের মধ্যে অবশ্যই দেওয়া চাই। কিন্তু ভারত জুড়ে এত ব্যাপকভাবে এই বস্তুটি ব্যবহার হয় কেন? কারণ একটাই, এর উপকারিতা।
গুলকন্ডের উপকারিতা

বলা হয়, প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রেও এই গুলকন্ডের উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন পারস্যে এই বস্তুটি তৈরি করা হতো। আসলে এটি গোলাপ ফুল দিয়ে তৈরি মিষ্টি জ্যাম জাতীয় খাদ্যদ্রব্য। সেইসঙ্গে মেশানো হয় এমন কিছু জিনিস, যা এর খাদ্যগুণকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, যা আমাদের শরীরে শক্তি দেয়। এছাড়াও কেন গুলকন্ডের এত জনপ্রিয়তা? ঠিক কী কী উপকার হয় গুলকন্ড খেলে?

কম ক্যালোরি

১০ গ্রাম খাঁটি গুলকন্ডে প্রায় ৩০ ক্যালোরি থাকে; সেইসঙ্গে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল একেবারেই থাকে না। ফলে শরীরে গেলে ক্ষতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে এটি তৈরি হয়। এই পাপড়িতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল আর ভিটামিন থাকে। সেই গুণগুলি সরাসরি গুলকন্ডে এসে পড়ে। কোলেস্টেরল না থাকার জন্য শরীরের মেটাবলিজম ভালো হয়।

হজমশক্তি বাড়ায়

পেটে যন্ত্রণা, প্রদাহ, গ্যাস হলে স্রেফ ওষুধ হিসেবেই গুলকন্ড খাওয়া যায়। এটি পেট ঠাণ্ডা করে, হজম শক্তি আব্রায়, গ্যাসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। ডাক্তাররা এও বলেন, ঘনঘন অ্যান্টাসিড না খেয়ে প্রতিদিন ছোট্ট এক চামচ গুলকন্ড খেলে পেটের প্রদাহ, জ্বলন, গ্যাস এসব সময়া থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে পায়খানাও পরিষ্কার রাখে।

হৃদপিণ্ড ভালো রাখে

ডাক্তারের নিয়ম মেনে, প্রয়োজন মতো গুলকন্ড খেলে আমাদের হৃদপিণ্ডও ভালো থাকে। হার্ট রেটকেও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মাথাব্যথা আর নিদ্রাহীনতার সমস্যার ক্ষেত্রেও এটি কাজে আসে।

মেন্সট্রুয়াল বা মাসিকের সমস্যার সমাধান

মহিলাদের মাসিকের সময় রক্তপাত, মাঝে মাঝে খিঁচুনি, ব্যথা ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রে গুলকন্ডকে রেমেডি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে নিয়মিত, অল্প করে খেতে হবে। গুলকন্ড আমাদের পেশিগুলো স্থির করে, স্বাভাবিক রাখে, আরাম দেয়। গুলকন্ডে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়।

কীভাবে বাড়িতেই তৈরি করবেন গুলকন্ড?

গুলকন্ড পাওয়ার জন্য দোকানে যেতে হবে না কষ্ট করে। চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারবেন এটি। লাল অথবা গোলাপি গোলাপ ফুল দিয়ে এটি তৈরি করতে হবে। গোলাপের পাপড়িগুলো ছিঁড়ে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে চিনির রসের মধ্যে দিতে হবে। তারপর পুরো ব্যাপারটা একটি জারে ভরে ভালো করে বন্ধ করে রোদের মধ্যে রাখতে হবে। অন্তত ১৫ দিন রাখতে হবে; তারপরই তৈরি হয়ে যাবে গুলকন্ড। চাইলে এর সঙ্গে দারুচিনি, মেথির মতো অন্যান্য উপকারী জিনিসও যোগ করতে পারেন।

More Articles