প্রতিটি ভুয়ো আবেদনেই ৮০ টাকা? কর্নাটকের ভোটার তালিকায় জালিয়াতির নতুন তথ্য ফাঁস

Karnataka Aland Voter List Fraud: কর্নাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)-এর অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ভুয়ো ভোটার মুছে ফেলার আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ডেটা সেন্টার অপারেটরকে ৮০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

কর্নাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার ব্যাপক জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। কর্নাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)-এর অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ভুয়ো ভোটার মুছে ফেলার আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ডেটা সেন্টার অপারেটরকে ৮০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৬,০১৮ টি ভুয়ো আবেদন জমা পড়েছিল, এতে মোট ৪.৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

নাম মুছে ফেলার জন্য জমা দেওয়া আবেদনগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ টি বৈধ ছিল, অর্থাৎ ওই ভোটাররা আর আলন্দ কেন্দ্রে বাস করতেন না। বাকি ৬,০০০ টিরও বেশি আবেদন ছিল ভুয়ো। সিটের তদন্তে উঠে এসেছে, এই জালিয়াতিতে মোহাম্মদ আশফাক নামের একজন স্থানীয় ব্যক্তি জড়িত ছিলেন, ২০২৩ সালে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও, সে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে এবং তাঁর কাছে থাকা ইলেকট্রনিক ডিভাইস হস্তান্তরের শর্তে ছাড়পত্র পেয়েছিলেন। পরে তিনি দুবাই চলে যান।

সিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইন্টারনেট প্রোটোকল ডিটেইল রেকর্ড এবং আশফাকের কাছ থেকে জব্দ ডিভাইসের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, তিনি মোহাম্মদ আকরাম ও আরও তিনজনের সঙ্গে ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন। তাঁরা আলন্দর ভোটার তালিকা ম্যানিপুলেশনের জন্য একটি ডেটা সেন্টার থেকে এই ভুয়ো আবেদনগুলো জমা দিতেন।

আরও পড়ুন

মুছে ফেলা হচ্ছে বিরোধী ভোটারদের নাম! প্রমাণ সামনে আনলেন রাহুল গান্ধী

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদ আকরাম ও আশফাক এই ডেটা সেন্টারের মূল অপারেটর ছিলেন এবং বাকিরা ছিলেন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। মূল প্রমাণ হিসেবে একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে, যা ব্যবহার করে সমস্ত ভুয়ো আবেদন তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া, নির্বাচনী কমিশনের পোর্টালে ভুয়ো তথ্য প্রবেশের জন্য ৭৫ টি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন পোল্ট্রি ফার্মের কর্মী, আবার কেউ কেউ পুলিশের আত্মীয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি ভোটাধিকারকে একটি পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলছেন, “ভোটাধিকারকে মাত্র ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এটি আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য লজ্জার বিষয়।” সিট-এর তদন্তের পর কংগ্রেসের মিডিয়া হেড পবন খেরা জানিয়েছেন, “ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার এই ঘটনায় যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত। ভোট চুরি কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি সুসংগঠিত, তহবিল-সমৃদ্ধ যন্ত্র।”

বিজেপির নেতা সুবাষ গুত্তেদার এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এই তল্লাশিতে সাতটি ল্যাপটপ এবং একাধিক মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এই টাকা কোথা থেকে এসেছে, এখন তা যাচাই করা হচ্ছে। যদিও গুত্তেদার দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের বিজয়ী নেতা বি.আর. পাটিল ব্যক্তিগত স্বার্থে এই অভিযোগ তুলেছেন।

এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কলুষিত করছে, অন্যদিকে বিজেপি পাল্টা অভিযোগ করেছে, কংগ্রেসও ভোট চুরির অভিযোগে জড়িত।

আরও পড়ুন

‘ভোট চুরি’ বা এসআইআর! নির্বাচন কমিশনের সেম-সাইড গোল?

নির্বাচনী কমিশনও এই ঘটনার পর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে ভোটার তালিকা ম্যানিপুলেশন রোধ করতে, অনলাইন ভোটার মুছে ফেলার জন্য আধার-সংযুক্ত ফোন নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো আবেদন মুছে ফেলার যে পরিকল্পিত কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, তা সাধারণ নাগরিকের মধ্যে ভয় ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। সিট-এর তদন্ত শেষে প্রমাণগুলো আদালতে জমা দেওয়া হবে এবং যারা এই জালিয়াতিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনায় ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়েছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র আলন্দ কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ভোটার তালিকা ম্যানিপুলেশন ও জালিয়াতির ঘটনা যদি দ্রুত ধরা না পড়ে, তবে ভবিষ্যতের নির্বাচনের ফলাফলও প্রভাবিত হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলিকে এই ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

More Articles