মুছে ফেলা হচ্ছে বিরোধী ভোটারদের নাম! প্রমাণ সামনে আনলেন রাহুল গান্ধী
Rahul Gandhi’s ‘hydrogen bomb’: নাগরাজ, আরেক ব্যক্তি নাকি ৩৬ সেকেন্ডে দু'টি নাম বাতিলের চেষ্টা করেছেন ভোর চারটেয়। রাহুলের যুক্তি এত কম সময়ে এমনটা সম্ভব নয়।
প্রথম বার প্রেস কনফারেন্সে করে দেখিয়েছিলেন ভুয়ো ভোটারদের তালিকায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এবার প্রেস কনফারেন্সে রাহুল গান্ধী দেখালেন, কী ভাবে তালিকা থেকে ভোটারের নাম বাদ যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ মদতে একই জায়গা থেকে সুপরিকল্পিত ভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে ভোটার অপসারণ আর ভুয়ো ভোটার সংযুক্তিকরণ হচ্ছে, এমনটাই মত রাহুল গান্ধীর।
তিনি অভিযোগ করেছেন, বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডেটার সঙ্গে কারচুপি করা হচ্ছে। ফলে ভোটের দিন বিপুল সংখ্যক ভোটার বুথে গিয়েও দেখতে পাচ্ছেন, তাঁদের নাম তালিকায় নেই। তাঁর দাবি, কর্নাটক-সহ একাধিক রাজ্যে সফটওয়্যার ও ভুয়ো আবেদন ব্যবহার করে সংগঠিতভাবে বিরোধী ভোটারদের নাম মুছে দেওয়া হচ্ছে।
রাহুল বলেন, কর্নাটকের যে সব বুথে কংগ্রেস শক্তিশালী সেসব বুথকেই বিশেষভাবে নিশানা করা হয়েছিল— কারণ এসব বুথে কংগ্রেসের প্রচুর ভোট পেতে পারে, তাই ভোটারদের নাম মুছে ফেলা হয়। রাহুল বলেন, কর্নাটকের আলন্দ আসনে ৬,০১৮টি ভোটারের নাম মুছে ফেলার আবেদন করা হয়েছে এই ভাবে।
আরও পড়ুন- রাহুলের যাত্রায় বিহারে কংগ্রেসের ভোটভাগ্য ফিরবে?
এই দিন মঞ্চে আনা হয় সূর্যকান্ত নামের এক ব্যক্তিকে। কমিশনের নথি অনুযায়ী, তিনি ১৪ মিনিটে ১২ জনের নাম তালিকা থেকে সরিয়েছেন। সূর্যকান্ত স্পষ্ট বলেন, তিনি এ ব্যাপারে অবগতই নন।
নাগরাজ, আরেক ব্যক্তি নাকি ৩৬ সেকেন্ডে দু'টি নাম বাতিলের চেষ্টা করেছেন ভোর চারটেয়। রাহুলের যুক্তি এত কম সময়ে এমনটা সম্ভব নয়। তাঁর প্রশ্ন, ভোর চারটেয় কেন কেউ এই কাজ করতে যাবে? এখান থেকেই তিনি দেখাতে চাইছেন, গোটা ব্যাপারটাই আসলে প্রযুক্তিচালিত।
গুরুত্বপূর্ণ হল “সিরিয়াল নম্বর ১” ভোটারদের ভূমিকা। রাহুল গান্ধীর দাবি, ভোটার তালিকার সিরিয়াল নম্বর ১-এর ভোটাররাই অন্য ভোটারদের নাম ডিলিট করছেন। তিনি জানান, কর্নাটকের বহু ভোটারের নাম অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে, অথচ ওই ভোটাররা নিজেরাও জানেন না তাঁদের নামে এত ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। রাহুল দাবি করেন, ভোটারের নাম ডিলিটের আবেদন জমা করার জন্য ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলো অন্যান্য রাজ্য (কন্নড়ের বাইরে) থেকে এসেছে, এর ফলে কর্নাটকের ভোটারদের বিরুদ্ধে ফেক ফর্ম জমা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন রাহুল গান্ধী। সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “কারা এই নাম ডিলিট করছে তা জ্ঞানেশ কুমার ভালো করেই জানেন।” তাঁর দাবি, কমিশন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করত, তবে এই ধরনের ‘ভোট চুরি’ সম্ভব হত না।
এই তথ্যকে রাহুল গান্ধী তুলনা করেছেন “হাইড্রোজেন বোমা”-র সঙ্গে। তাঁর মতে, এটি শুধু কংগ্রেস বা বিরোধী রাজনীতির প্রশ্ন নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র এবং সাধারণ নাগরিকদের ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই। রাহুল গান্ধী স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এটি বিরোধী দল বনাম সরকার নয়। এটি জনগণের ভোটাধিকার বনাম কারচুপি।” তিনি দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।রাহুল গান্ধী বলেন, “এটি সাধারণ প্রশাসনিক ভুল নয়। এটি একেবারে সংগঠিত প্রচেষ্টা, যাতে বিরোধী দলের ভোট ব্যাঙ্ক দুর্বল হয়।
আরও পড়ুন-ভোটার অধিকার যাত্রা বুঝিয়ে দিল মোদি বিরোধিতার প্রধান মুখ রাহুলই
রাহুল গান্ধীর বক্তব্য অনুযায়ী, কর্নাটক সিআইডি (CID) নির্বাচন কমিশনকে অন্তত ১৮ বার চিঠি পাঠিয়েছিল। সেই চিঠিতে ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল—
•কে বা কোন মোবাইল নম্বর দিয়ে ভোটার ডিলিটের আবেদন জমা দিয়েছে
•কোন আইপি (IP) অ্যাড্রেস ব্যবহার করে অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে
•ওটিপি (OTP) লগ ও টেকনিক্যাল ডেটা, যা থেকে আসল আবেদনকারীকে শনাক্ত করা যেত
কিন্তু নির্বাচন কমিশন ১৮টি চিঠির একটিতেও সাড়া দেয়নি।
বিরোধীদের দাবি, শাসকদলের চাপে কমিশন ইচ্ছাকৃত এই তথ্য প্রকাশ করেনি, যাতে কারচুপির প্রমাণ সামনে না আসে। রাহুলের প্রশ্ন, “যদি কমিশনের কাছে লুকোনোর কিছু না থাকে, তবে কেন ১৮ বার চিঠি দেওয়ার পরও উত্তর দেওয়া হল না? তারা কীসের ভয়ে আছে?”
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী শিবিরে উদ্বেগ বাড়ছে। এর আগেও তিনি নির্বাচনী কারচুপির ইস্যুতে “অ্যাটম বোমা” উপমা ব্যবহার করেছিলেন। সেই অভিযোগ ঘিরেও সারা দেশে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। এবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে এটিকে “হাইড্রোজেন বোমা” বলে আখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁর মতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাত্রা ও গভীরতা এতটাই বিপজ্জনক যে তা গণতন্ত্রের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

Whatsapp
