ইজরায়েল গণহত্যাকারী! প্রমাণ তুলে দেখাল রাষ্ট্রপুঞ্জ
Genocide in Gaza: কমিশনের মতে, ইজরায়েলি রাষ্ট্রপতি ইসাক হার্জোগ, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্তের বক্তব্যগুলো গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উস্কানি দিয়েছে।
প্যালেস্টাইনে গণহত্যা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী, আর এই গণহত্যার নায়ক ইজরায়েলের শীর্ষ নেতৃত্ব, জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী গণহত্যা হিসেবে শণাক্ত করার জন্যে যে পাঁচটি শর্ত রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে চারটিই ইজরায়েল সংঘটিত অন্যায়ের ক্ষেত্র প্রযোজ্য। ফলে এই ঘটনাকে গণহত্যা বলার ‘যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি’ পাওয়া গেছে বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
১৯৪৮ সালের গণহত্যা বিরোধী সনদে কোনো বিশেষ ভূখণ্ডের বাসিন্দা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে নিপীড়ন, একটি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংসের চেষ্টা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের মতো ঘটনাকে গণহত্যা বলে গণ্য করার কথা বলা হয়েছিল।রাষ্ট্রপুঞ্জে রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এসবই ঘটেছে গাজায়। উল্লেখ্য এ হেন রিপোর্ট সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরলতম। ইজরায়েলি নেতাদের বক্তব্য এবং বাহিনীর আচরণের ধরণকে গণহত্যার হাতেগরম প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন- গাজায় ‘দুর্ভিক্ষ’! কখন এই ঘোষণা করে জাতিসংঘ?
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের ২০২১ সালে গঠিত ‘অকুপাইড প্যালেস্টাইনিয়ান টেরিটরির স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন’ এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তিন সদস্যের এই প্যানেলের সভাপতি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান নাভি পিলে, যিনি রুয়ান্ডার গণহত্যা ট্রাইব্যুনালের সভাপত্ব করেছিলেন।
এই রিপোর্ট তুলে ধরেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজার সবচেয়ে বড় ফার্টিলিটি ক্লিনিকে হামলা করে ইজরায়েল প্রায় ৪,০০০ ভ্রূণ এবং ১,০০০ শুক্রাণু নমুনা ও অপরিণত ডিম্বাণুর ধ্বংস করা হয়েছে।
কমিশনের মতে, ইজরায়েলি রাষ্ট্রপতি ইসাক হার্জোগ, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্তের বক্তব্যগুলো গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উস্কানি দিয়েছে। ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণের ধরণ থেকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যই স্পষ্ট’ হচ্ছে বলে জানাচ্ছে রাষ্টপুঞ্জ।
ইজরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথারীতি এই রিপোর্টকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। একজন মুখপাত্র কমিশনের তিন বিশেষজ্ঞকে ‘হামাসের ছায়া’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই রিপোর্ট সম্পূর্ণভাবে হামাসের মিথ্যার উপর নির্ভরশীল এবং ইতিমধ্যে খণ্ডিত হয়েছে।
আরও পড়ুন- ত্রাণ দেখিয়ে প্রাণ নেওয়া? যা চলছে গাজায়
তার দাবি, ‘হামাসই ইজরায়েলে গণহত্যার চেষ্টা করেছে—১,২০০ মানুষ হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, পরিবারগুলোকে জীবন্ত পোড়ানোর নিদান দিয়েছে।’
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। তারপর থেকে গাজায় অন্তত ৬৪,৯০৫ নিরপরাধ মানু্ষের প্রাণ গিয়েছে। জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি বারবার স্থানান্তরিত হয়েছে; ৯০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে; নিকাশি ব্যবস্থা ধসে গিয়েছে; গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বহু মানবাধিকার সংস্থা, ইওরোপের বড় অংশই ইজরায়েলকে গণহত্যাকারী কসাই বলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা আইসিজে মামলা চলছে, এই মামলাকে যদিও ইজরায়েল ‘সম্পূর্ণ অমূলক’ বলে খারিজ করেছে।
এই মুহূর্তে স্থলপথেও গাজা অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েল।

Whatsapp
