গাজায় ‘দুর্ভিক্ষ’! কখন এই ঘোষণা করে জাতিসংঘ?
Gaza famine: খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘের এক সংস্থা দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি বলেছে, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষে।
প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের একটি সংস্থা বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। গাজায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ অনাহারে। খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘের এক সংস্থা দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি বলেছে, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষে। আইপিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দুর্ভিক্ষ 'সম্পূর্ণরূপে মানুষের তৈরি'। কখন দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে জাতিসংঘ?
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি-র তিনটি প্রধান খাদ্যসংকটের সূচক মিলে গেলে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। আইপিসি হলো জাতিসংঘ ও ২১টি ত্রাণ সংস্থা, যা যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়।
তিনটি সূচক হলো:
১) ২০ শতাংশ পরিবারের চরম অনাহারে থাকা ও অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকি
২) ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশই তীব্র অপুষ্টির হার
৩) প্রতি ১০,০০০ জনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ জনের মৃত্যু
আরও পড়ুন- গাজায় গুলেন-বেরি সিনড্রোম! ইজরায়েলি হানাদারির মধ্যেই হু হু করে বাড়ছে এই রোগ
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএইচও) জানায়, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষই ক্ষুধার্ত থাকছে। এর ফলে ক্রমাগত অপুষ্টির হার বাড়ছে।বাজারে সামান্য কিছু খাবার পাওয়া গেলেও তার, মূল্য আকাশ ছোঁয়া। গাজায় এক কেজি ময়দার দাম ১০০ মার্কিন ডলার। কৃষি জমিও আর নেই, যুদ্ধে সবটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখন যেহেতু ইজরায়েলও বাইরের দেশের মানুষদের প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না এতে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছু দিন আগেই ১০০-রও বেশি আন্তর্জাতিক এনজিও, যেমন এমএসএফ, কারিতাস, সেভ দ্য চিলড্রেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ওক্সফার্ম ইজরায়েলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে যেন প্যালেস্টাইনে ঢোকার সমস্ত স্থলপথ খুলে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি আবার গাজার নাসের হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ছিল ইজরায়েল বাহিনী। ১৫ মিনিট পর পর দু-বার হামলা করে তারা। উদ্ধারকর্মী এবং সাংবাদিকদের নিশানা করেই এই হামলা করা হয়। এই দিন পাঁচ সাংবাদিক-সহ কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর বলেছে, অবিলম্বে এর 'ন্যায়বিচার প্রয়োজন'।
আরও পড়ুন- ১৯৬৭ থেকে ২০২৫! যেভাবে গাজায় বারবার নিশানা করা হচ্ছে সাংবাদিকদের
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েল হামাসে হামলার পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন থেকে ইজরায়েল গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইজরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের উপর সরাসরি হামলার পাশাপাশি খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবায় বাধা দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
এর আগে ২০২৪ সালে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গাজায় প্রতি ১০ শিশুর ৯ জনই ‘ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে’ রয়েছে। অনাহার এবং মারাত্মক অপুষ্টির কারণে প্যালেস্টাইনের অনেক শিশুই মারা গিয়েছে। ওই বছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, গাজার প্রতি ৫ শিশুর ৪ জনই প্রতি তিন দিনে অন্তত এক দিন পুরো দিন অভুক্ত থাকে।
ইজরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইজরায়েলি হামলায় ২০২৩ থেকে এখনও অবধি মোট ৬২,৭৪৪ জন নিহত এবং ১,৫৮,২৫৯ জন আহত হয়েছেন। আর কত দিন অন্ধকারে থাকবে প্যালেস্টাইন? কবে দুর্দশা মুক্ত প্যালেস্টাইন দেখব আমরা? সেই প্রশ্ন থাকছেই।

Whatsapp
