ওমিক্রনের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট প্রথম সাবভ্যারিয়েন্টের থেকেও মারাত্মক?

ওমিক্রনের দাপট কতটা হবে, সেই নিয়ে চিন্তিত সাধারণ মানুষ। যদিও কেউ কেউ বা বরাবরের মতই কোভিডের তোয়াক্কা না করে, কোভিড সচেতনতার ধারেকাছেও ঘেঁষছেন না।  তারই মধ্যে মাথা চাড়া দিচ্ছে ওমিক্রনের সাবভ্যারিয়েন্ট বিএ.টু। সাবভ্যারিয়েন্ট বিএ.ওয়ানকে ছাপিয়ে এখন ডেনমার্কের মতো দেশে সাবভ্যারিয়েন্ট বিএ.টু-ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

ওমিক্রনের  নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বি.এ. ২ কি, পুরোনো সাবভ্যারিয়েন্ট বি.এ. ১- এর থেকে বেশি ভয়ঙ্কর?

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে  ওমিক্রনের নতুন এই সাবভ্যারিয়েন্ট বিএ.টু-এর দাপট, প্রথম সাবভ্যারিয়েন্ট বিএ. ওয়ানের মতই হবে। হু-এর তরফ থেকে আরও জানানো হচ্ছে ওমিক্রনের এই দুই ভ্যারিয়েন্টের কারণে রোগের তীব্রতা বেশী হবে না, তবে খুব সহজে ছড়িয়ে পড়বে ভাইরাসটি। আপাতত এমন ডেটা নেই যার থেকে বলা যায় ওমিক্রনের বি.এ. ২ সাবভ্যারিয়েন্ট, বি.এ. ১ সাবভ্যারিয়েন্টের থেকেও বেশি ভয়ংকর। হু-এর তরফ থেকে ড: বোরিস প্যাভলিন জানিয়েছেন, ওমিক্রনের বি.এ. ২ সাবভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বাড়লেও কিন্তু হসপিটালাইজে়শনের ঘটনা বাড়েনি।

কত দ্রুত ছড়াতে পারে নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বি.এ. ২?

ডেনমার্কের একদল গবেষক জানাচ্ছেন, নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বি.এ-টু, প্রথম সাবভ্যারিয়েন্ট বি.এ-ওয়ানের থেকে অনেক সহজে ছড়িয়ে পড়ে। ওমিক্রনের দ্বিতীয় সাবভ্যারিয়েন্টটি ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রথমটির থেকে ৩৩% শতাংশ বেশি; গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ধরে সাড়ে আট হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করার পর এমনই জানাচ্ছেন গবেষকরা।

ফ্রেডরিক প্লেজ়নার, যিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন, জানাচ্ছেন, আমরা যদি বাড়ির মধ্যেই বিএ.২ এর সংস্পর্শে আসি, তাহলে আমাদের সাতদিনের মধ্যেই ৩৯% সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ওমিক্রনের বি.এ. ১ সাবভ্যারিয়েন্টের মধ্যে এই সম্ভাবনা ছিল ২৯%। হু-এর মতে, হয়তো ডেল্টার মত এত ভয়াবহতা ওমিক্রনের এই দুই সাবভ্যারিয়েন্ট দেখাবে না, তবুও এরা কিন্তু ভয়ংকর।

ভ্যাক্সিন কি আটকাতে পারবে ওমিক্রনের এই নতুন ভ্যারিয়েন্টকে?

নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট বি.এ-টুয়ের প্রভাবে কিন্তু খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন যারা দু'টি ডোজ় ভ্যাক্সিন নিয়েছেন তাঁরাও। এই তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, পুরোনো কোভিড ভ্যাক্সিন ডেল্টাকে বেশ কিছু অংশে রুখতে পারলেও, ওমিক্রনের নতুন ভ্যারিয়েন্টকে আটকানোর জন্যে যথেষ্ঠ নয়। কারণ মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের গঠনগত তারতম্য ঘটলেই, পুরোনো ভাইরাসের জন্যে বানানো ভ্যাক্সিন কিন্তু কাজ করবে না। সহজ কথায় বললে, কম্পিউটারের নতুন ভাইরাস অ্যাপ্লিকেশনকে যেমন পুরোনো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ্লিকেশন আটকাতে পারে না, সেক্ষেত্রে একটি আপডেটেড ভার্শান লাগে অ্যান্টিভাইরাসের, নোভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম। ভাইরাস রূপ বদলালে, ভ্যাকসিনকেও তার রূপ বদলাতে হতে পারে।

কেন ভ্যাক্সিন প্রয়োজন নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে মোকাবিলা করতে?

 কিন্তু তা সত্ত্বেও ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ় এবং প্রয়োজনে বুস্টার ডোজে়র গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এর ফলে ওমিক্রনের দুটি সাবভ্যারিয়েন্টেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। দেখা যাচ্ছে যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের থেকেই ওমিক্রনের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ছড়াচ্ছে বেশি মাত্রায়।

কী ভাবে উদ্ভব হল নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্টের?

ওমিক্রনের পুরোনো ভ্যারিয়েন্ট বিএ.ওয়ানের আরএনএ-তে চল্লিশটি পয়েন্ট মিউটেশন হওয়ার পরেই উদ্ভব হয়েছে এই দ্বিতীয় ভ্যারিয়েন্টের। এই পয়েন্ট মিউটেশন হল জিনের (এক্ষেত্রে আরএনএ) মধ্যে খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদে রাসায়নিক পরিবর্তন। আর আরএনএ ভাইরাসের ক্ষেত্রে অতিদ্রুত ঘটতে পারে এই মিউটেশন, ডিএনএ ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিরল।

কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

পাশাপাশি এ কথাও মাথায় রাখা উচিৎ বেশ কিছু দেশ কিন্তু এখনও ওমিক্রনের আসল দাপট দেখেনি। ডেনমার্ক ছাড়াও, ওমিক্রনের এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটির সন্ধান পাওয়া গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, সুইডেন এবং ব্রিটেনে। তাই এখনও ভাবা উচিৎ নয় যে আমরা কোভিডের দাপট থেকে বেঁচে গেছি। তবে যে দেশগুলি এখনও ওমিক্রনের দাপটের সাথে সাক্ষাতে লড়াই করছে, তাদেরও হতাশ না হওয়াই ভালো এই অবস্থায়।

More Articles