বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের জয়ের নেপথ্যে বাংলা, যে তিন কন্যার হাতেই রয়েছে আগামীর ব্যাটন

Womens t20 world cup : তিতাস একা নয়, তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলার আরও দুই ক্রিকেটার। রিচা ঘোষ ও ঋষিতা বসু।

ঝুলি ভর্তি একটার পর একটা রেকর্ড ছিল ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজদের, ছিল না কেবল বিশ্বকাপ জিয়ার খেতাবটুকুই। সেই আফসোস আজীবন তারা করে বেরিয়েছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলকে। তবে গতকালের ফলাফল নিমেষে কাটিয়ে দিয়েছে এতদিনের খরা। বিশ্বকাপ জিতেছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। আগে বারবার জয়ের খুব কাছ থেকে খালি হতেই ফিরতে হয়েছে তাদের। কিন্তু এবার আর কোনও সুযোগ হাতছাড়া করেনি শেফালি বর্মার দল। ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত বলের সামনে ধরাশায়ী ইংল্যান্ড বাহিনী। রান তুলতে হিমসিম অবস্থা হয় তাদের। ১৭.১ ওভার খেলে মাত্র ৬৮ রানে শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ভারতীয় বোলার তিতাস সাধু, অর্চনা দেবী ও পার্ষাভি চোপরাদের সামনে ব্যাট হাতে নিতান্ত শুধু মনে হচ্ছিল এদিন শক্তিশালী ইংল্যান্ড দলকেও।

এমন একটা জয় ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে আলোচনা। উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। আর সেই উচ্ছ্বাসের আঁচ এসে লেগেছে আমাদের বাংলাতেও। আর লাগবে নাই বা কেন বাংলার মেয়ের হাত ধরেই তো বিশ্বমঞ্চে ঘুরে দাঁড়ালো ভারত। ম্যাচের সেরার শিরোপাও এখন বাংলারই ঝুলিতে। এবারের আইকন হুগলির চুঁচুড়া নিবাসী তিতাস সাধু। শুধু ফাইনালের দিনটিতেই নয়, গোটা ইভেন্ট জুড়েই তিতাসের পারফরমেন্স ছিল নজরকাড়া। মোট ৬টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৬টি উইকেট। যার মধ্যে ফাইনালের মঞ্চে দুটো, এবং মাত্র ৬ রানের বিনিময়ে।

আরও পড়ুন - চাকদহ থেকে মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ঝুলন গোস্বামী অনুপ্রেরণার অন্য নাম

বাংলার তিতাস সাধুকে নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে উচ্ছ্বাস। তবে তিতাস একা নয়, তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলার আরও দুই ক্রিকেটার। রিচা ঘোষ ও ঋষিতা বসু। এই তিন ডাকাবুকো তনয়ার হাত ধরেই বিশ্বের দরবারে পাকাপাকি জায়গা করে নিল বাংলা। এই জয় তাই উৎসবের সামিল। হুগলির মেয়ে তিতাস, হাওড়ায় বাড়ি ঋষিতার আর রিচা ঘোষ থাকেন শিলিগুড়িতে। জয়ের খবরে তাই এই তিন জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে অকাল দিওয়ালি। ঝুলন গোস্বামীর অমন স্ট্রাইক রেটের উত্তরাধিকার হিসেবে কতটা যোগ্য এই তিন কন্যা তা হয়ত সময় বলবে। তবে আজকের জয় যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

চিনে নেওয়া যাক এই তিনজনকে -

১. তিতাস সাধু - হুগলির চুঁচুড়ার মেয়ে তিতাস সাধু৷ তবে এখন তাঁর একটাই পরিচয়, তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচের সেরা৷ বাংলার রঞ্জি দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, তিতাস লম্বা রেসের ঘোড়া। সেই কথার প্রমাণ অবশ্য মিলেছে ইতিমধ্যেই। ছোট থেকেই খেলাধুলায় ঝোঁক ছিল তাঁর। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ব্যাট হতে নেমে পড়তেন মাঠে। এমনকী কোচ প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায় নিজেও বলেছেন, তিতাসকে তিনি ছেলেদের সঙ্গেই অভ্যাস করাতেন। তিতাসের বাবা রণজিৎ সাধু নিজেও ছিলেন অ্যাথলিট। তাই মাঠের প্রতি অমোঘ টানটা তাঁর চিরকালই। তিতাসের হাত ধরেই প্রথম বিশ্বকাপে সেরার শিরোপা পেল বাংলা। ভারতীয় মহিলা দল এখন দেশে মহিলা ক্রিকেটের ছবিটাই বদলে দিল। চাকদহ এক্সপ্রেসের পর এবার কি তবে সফর চলবে চুঁচুড়া এক্সপ্রেসে সওয়ার হয়েই? সময় উত্তর দেবে এই প্রশ্নের।

আরও পড়ুন - ১৮ বছরেই বিশ্বজয়! বাংলার তিতাস সাধুই তবে আগামীর ঝুলন গোস্বামী?

২. রিচা ঘোষ - রিচা অবশ্য বাকিদের থেকে বয়সে এবং অভিজ্ঞতায় খানিক বড়। ইতিমধ্যেই সে বড়দের ক্রিকেট ফলে নিজের পাকাপাকি জায়গাও করে নিয়েছে। ‘Espncricinfo’ নামের একটি ক্রিকেট পোর্টালে, ভারতীয় পুরুষ বা মহিলা ক্রিকেটারদের নামের তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যাবে প্রথম দশেই রয়েছে রিচা ঘোষের নাম। ২০০৩ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর, শিলিগুড়িতে জন্ম রিচার। উইকেট কিপিং এবং ডানহাতি ব্যাটিং-এর পাশাপাশি ডানহাতি মিডিয়াম বোলিংও করেন তিনি। দেখতে সাদামাটা হলেও খেলার মাঠে চিরকালই দাপুটে রিচা, মাত্র ১১ বছর বয়সেই বেঙ্গল অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নিয়েছিল সে। তার পর থেকে ক্রমেই একটার পর একটা হার্ডল টপকে আজকে এই জায়গাটা অর্জন করেছেন। যেহেতু বড়দের দলে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে তাই সেই অভিজ্ঞতা দিতে প্রতিনিয়ত ঢেলে সাজিয়েছেন বিশ্বকাপের দলকে। অভিবাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন দলকে। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে সর্বক্ষণ নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। লুফে নিয়েছেন অনবদ্য ক্যাচ, আর দলকে এগিয়ে দিয়েছেন জয়ের খুব কাছাকাছি। উইকেটকিপার-ব্যাটারের আগ্রাসী মানসিকতার এক মিশেল যেন শিলিগুড়ির রিচা ঘোষ।

in u19 womens world cup titas sadhu richa ghosh hrishita basu, new three icon of India cricket team

মহিলা ক্রিকেটারদের হাতেই ভারতের বিশ্বজয়

৩. ঋষিতা বসু - গতকালের জয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আলোর রোশনাই হাওড়ার এক অনামী গলিতে। ফুলঝুরি, তুবড়ি, রংমশাল, অকালে সেখানে পালিত হচ্ছে দিওয়ালি। আর হবে নাই বা কেন! ঘরের মেয়ে বিশ্বমঞ্চে, তার ওপর আবার জিতেছে দল। আগামীতে আরও আরও জয় যে অপেক্ষা করে আছে তা বুঝেই এই সেলিব্রেশন। হ্যাঁ হাওড়ার ওই গলিতেই বাড়ি ঋষিতা বসুর।

হাওড়ার দাসনগরের বালিটিকুড়ি বিবেকানন্দ পল্লীর মেয়ে ঋষিতা বসু। এবছরের বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। যদিও বাকি দুইজনের মতো ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায়নি ঋষিতা তবে তাতে ফিকে হয়ে যায় না তাঁর যোগ্যতা। সেও অন্যদের মতোই যোগ্য বলে সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপে খেলার, এটাও কম জয় নয়।ফাইনাল ম্যাচে তব্যাট হাতে নামেন ঋষিতা, সৌম্যা তিওয়ারি যখন উইনিং স্ট্রোক নিচ্ছেন, তখন তিনি ছিলেন অন্য প্রান্তে। যদিও শেষপর্যন্ত তিনি আর রান করার সুযোগ পাননি ঋষিতা। তবে এটাই তো শুরু আরও অনেক অনেক পথ চলা বাকি, একথা বেশ জানেন ঋষিতা। আজকের এই জয় আগামীতে নতুন মাইলফলক রচনা করবেই। আর এবার হয়তো তিতাস, রিচা অথবা ঋষিতাদের দেখে বাংলার আরও অনেকে মেয়ের হাতে ব্যাট-বল তুলে দেবেন বাবা-মায়েরা!

More Articles