১৮ বছরেই বিশ্বজয়! বাংলার তিতাস সাধুই তবে আগামীর ঝুলন গোস্বামী?

Titas Sadhu U-19 T-20 World Cup: ১৭.১ ওভারে মাত্র ৬৮ রানেই শেষ যথেষ্ট শক্তিশালী দল ইংল্যান্ড!

বয়স ১৮। চুঁচুড়া থেকে সোজা দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে বিশ্বজয়! সারা পৃথিবীই এখন তাঁর উচ্চতার কাছে নতজানু, তাঁর খেলার উচ্চতা, তাঁর আগ্রাসন, তাঁর দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতার কাছে গুটিয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল! মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন বাংলার ক্রিকেটার তিতাস সাধু। তিতাস মনে করিয়ে দিয়েছেন ঝুলন গোস্বামীর কথা, একই রকম তেজ, একই রকম উচ্চতা প্রায়। দূর থেকে দেখে ধাঁধা লেগে যায়। মাত্র ৬৮ রানে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের মেয়েরা। তিতাস নিয়েছেন দু'টি উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জিতল ভারত। আর ১২ বছর পর ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জিতল টিম ইন্ডিয়া।

মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে খেলছেন পেশাদারি ক্রিকেট। মাত্র ১৩! খেলতে তো ভালোবাসেন ছোট থেকেই, সাঁতার কাটেন, দৌড়ন, নানা অ্যাথলেটিক্সে মন। কিন্তু ক্রিকেট খেলবেন ভাবেননি শুরুতেই, আগ্রহই ছিল না। তবে হ্যাঁ, বাবার আকাদেমিতে যেতেন নিয়মিত। বাবার ক্রিকেট আকাদেমিতে তখন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের ভিড়। কেউ রঞ্জি খেলছে, কেউ বা সদ্য ভারতের হয়ে খেলতে বেরোচ্ছে। ওদের সঙ্গে মিশতে ভালোই লাগত তিতাসের। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে এই মিশতে ভালোবাসা থেকেই ক্রিকেটকে ভালোবেসে ফেললেন। ১৩ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন ঠিকই কিন্তু সেবছর ট্রায়ালেই বাদ পড়ে যান। তারপর ক্লাস ১০-এর বোর্ড পরীক্ষা চলে আসে। সেসব মিটলে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম খেলেন তিতাস।

 

সে এক সাংঘাতিক খেলা! এত সুযোগ ইত্যাদি পেয়ে, মাঠে নেমে প্রথম বলেই কিনা ওয়াইড বাউন্ডারি! খুব খারাপ বল করেছিলেন সেবার তিতাস। তারপর আস্তে আস্তে সিনিয়র দলের সঙ্গেই ক্যাম্পে থাকা শুরু। এই ক্যাম্পই বদলে দিয়েছিল তিতাসের খেলার ধরন। আগে স্রেফ নেটে প্র্যাকটিস করতেন। প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা হতো না কারণ ক্যাম্পে থাকা হয়নি। বড়দের সঙ্গে খেলা, বড়দের সঙ্গে মেলামেশা, সারাক্ষণ ক্রিকেটকে আরও নিবিড়ভাবে দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই রাজকোটে খেলতে চলে গেলেন তিতাস। সবচেয়ে ছোট সেই দলে ছিলেন তিনিই। তারপর বাকিটা জুড়ে শুধুই ক্রিকেট!

আরও পড়ুন- চাকদহ থেকে মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ঝুলন গোস্বামী অনুপ্রেরণার অন্য নাম

বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক শেফালি বর্মা। ১৭.১ ওভারে মাত্র ৬৮ রানেই শেষ যথেষ্ট শক্তিশালী দল ইংল্যান্ড! ভারতের হয়ে তিতাস সাধু, অর্চনা দেবী ও পর্ষাভি চোপড়া দু'টি করে উইকেট নিয়েছেন। ক্যাপ্টেন শেফালি নিয়েছেন একটি উইকেট। ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩ উইকেটেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় ভারতীয় অনুর্ধ্ব ১৯ দল, তখন হাতে বাকি ৩৬ বল।

ফাইনালের মঞ্চে তিতাস সাধুর ৪ ওভারে ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট ভুলবে না বিশ্ব। ওপেনার লিবার্টি হিপ আর উইকেটকিপার সেরেন স্মেলির উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডই ভেঙে দেন তিতাস, এগিয়ে দেন দেশকে, বাড়িয়ে দেন মনোবল। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলার এই পেসারের ঝুলিতে রয়েছে মোট ৬ উইকেট।

বাংলার মহিলা দলের কোচ চরণজিৎ সিং প্রায় বছর পাঁচেক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তিতাসকে প্রথম দেখেন, উচ্চতা দেখেই হাঁ! সিএবি লিগে তখন জেলা থেকে মেয়েরা খেলতে এসেছে। ১০ গজের উইকেটে তিতাসকে বল করতে বলেন তিনি। সেই সময়েই দুর্দান্ত গতি তিতাসের। চরণজিৎ প্রায় জেদ করেই সিনিয়র দলে খেলান তিতাসকে। আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায় ওর। সেই আত্মবিশ্বাসই ফুল ফুটিয়েছে বিশ্বের দরবারে। বাংলার অষ্টাদশীকে এখন নিয়ত সেলাম করছে ক্রিকেট বিশ্ব।

More Articles