দেহের ৬ টি অঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বদল, যেভাবে বুঝবেন ডায়াবেটিসের শিকার আপনি

Diabetes Symptoms: যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে ডায়াবেটিকদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস ঘরে ঘরে, তাই মৃত্যুও প্রতি সংসারের অতিথি। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে প্রায়ই তেষ্টা পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, ক্লান্তি, ঝাপসা দৃষ্টি এবং অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটুকু উপসর্গেই সবটা শেষ না। রক্তে শর্করার অনিয়ন্ত্রিত মাত্রা শরীরের ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলিরও ক্ষতি করতে পারে, যা দেহের নানা অঙ্গে রক্ত পৌঁছানো কঠিন করে তোলে, ফলে নেমে আসতে পারে মৃত্যুও। শরীরের কোন কোন অংশে ডায়াবেটিস থাবা বসায় দেখা যাক।

চোখ

রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে তা রেটিনার রক্তনালীগুলিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে চোখ-সম্পর্কিত নানা সমস্যা যেমন ঝাপসা দৃষ্টি, ছানি, গ্লুকোমা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি দেখা দেয়। রেটিনোপ্যাথিতে রেটিনার পরিবর্তন হয়। যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে ডায়াবেটিকদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

পায়ের পাতা

দু'টি উপায়ে ডায়াবেটিস পা-কে প্রভাবিত করতে পারে। প্রথমটি স্নায়ুর ক্ষতির মাধ্যমে, যাতে পায়ে কোনও ধরনের সংবেদন অনুভব করা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা যেকোনও সংক্রমণ সারানোই কঠিন করে তোলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি ঘা বা সংক্রমণের চিকিত্সা না করা হয়, তবে এটি অঙ্গচ্ছেদের দিকেও নিয়ে যেতে পারে।

কিডনি

কিডনি শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন এবং বর্জ্য ফিল্টার করতে সাহায্য করে। এতে ক্ষুদ্র রক্তনালী রয়েছে যা কিডনির কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার বেশি মাত্রা এই রক্তনালীগুলির ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ডায়াবেটিক কিডনি রোগ হতে পারে, যা ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি নামেও পরিচিত। উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে, প্রস্রাবে প্রোটিন, প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা, পা, গোড়ালি, হাত ও চোখ ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, ক্লান্তি এবং আরও অনেক কিছু।

স্নায়ু

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এবং নেফ্রোপ্যাথির মতো, রক্তে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামক স্নায়ুর রোগের কারণও হতে পারে। এই অবস্থার কারণে অসাড়তা বা ব্যথা বা তাপমাত্রা অনুভব করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, জ্বলতে থাকার অনুভূতি, তীব্র ব্যথা এবং পেশিতে ক্র্যাম্প, পায়ের আলসার, সংক্রমণ এবং আরও অনেক কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন- ঘরে ঘরে শিশুদের শরীরেও হানা দিচ্ছে এই ঘাতক ডায়াবেটিস! কীভাবে লক্ষণ চিনবেন

হার্ট এবং রক্তনালী

রক্তে শর্করা বেশি হলে তা রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। তাই একজন ডায়াবেটিক সবসময় স্ট্রোক এবং হৃদরোগ সহ কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকির মুখে থাকেন। এছাড়াও, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ সহ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন অন্যান্য অবস্থার আশঙ্কাও বেশি।

মাড়ি

মাড়ির রোগ, যাকে পিরিওডন্টাল রোগও বলা হয়, রক্তে উচ্চ শর্করার সঙ্গে যুক্ত সাধারণ সমস্যা। এটি সাধারণত আটকে থাকা বা ঘন রক্তনালীর কারণে ঘটে যা মাড়িতে রক্ত ​​প্রবাহ কমিয়ে দেয়, তাই পেশিগুলি দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়াও, রক্তে উচ্চ শর্করা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় যা মাড়ির নানা রোগের কারণ। রক্তপাত, মাড়ির শিরশিরানি এবং মাড়ির যন্ত্রণা হলে সতর্ক হন।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কীভাবে কমাবেন?

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিচালনার প্রথম পদক্ষেপ। ডায়াবেটিস সহ দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর এবং কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে হবে।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সবার আগে দরকার। শারীরিক কার্যকলাপ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমেই তা বজায় রাখা যায়। ধূমপান এবং মদ্যপান সহ অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস কমিয়ে ফেলুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।

রক্তে বেশি শর্করা থাকলে কোন খাবারগুলি এড়ানো উচিত?

যদি রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে তবে ডায়েট নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। চিনিযুক্ত পানীয়, প্রচুর ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার, সাদা ভাত, রুটি, পাস্তা, মিষ্টি দই, মিষ্টি সিরিয়ালস, শুকনো ফল ইত্যাদি এড়িয়ে চলা দরকার। শরীরের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবার প্রয়োজন, তবে খেতে হবে বুঝেশুনে। এমন খাবারই খেতে হবে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না এবং দেহকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম ওয়ার্কআউটের ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত রক্তে শর্করাকে কমিয়ে দিতে পারে। ব্যায়াম শরীরকে ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে। ব্যায়ামের আগে এবং পরে ফারাক দেখতে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে পারেন। শরীর বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বুঝতে ব্লাড সুগারও পরীক্ষা করতে পারেন।

 

More Articles