শরীর নিজেই নিজেকে আক্রমণ করে! বিপজ্জনক এই রোগ থেকে যেভাবে বাঁচবেন

Autoimmune Disorder: দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেরই শরীরকে বাঁচানোর বদলে আক্রমণ করতে শুরু করে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করার অস্ত্র। কিন্তু যদি এমন হয় যে শরীরকে শত্রু ভেবে শরীর নিজেই আক্রমণ করে বসল? অবাস্তব নয়, এই রোগকেই বলে অটোইমিউন ডিসঅর্ডার (AD)। এতে দেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেরই শরীরকে বাঁচানোর বদলে আক্রমণ করতে শুরু করে। সাধারণত এই ক্ষেত্রে দেহ অটো-অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত প্রোটিন মুক্ত করে যা শরীরের নানা অঙ্গকে আক্রমণ করে। এতেও শরীরে প্রচুর প্রদাহ হয়। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অটোইমিউন রোগের সাধারণ উপসর্গ।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই, লুপাস, সোরিয়াসিস, অন্ত্রের প্রদাহজনক রোগ এবং হাশিমোটোর থাইরয়েডাইটিস অটোইমিউন রোগের উদাহরণ। অটোইমিউন রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ মানুষ অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে গাঁটে ব্যথা এবং ফোলাভাব, অবিরাম ক্লান্তি, ত্বকের সমস্যা, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, হজমের সমস্যা, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, পেশির ব্যথা। অটোইমিউন ডিসঅর্ডার কেন হয়? জিনগত কারণ থেকে শুরু করে হরমোন, এমনকী পরিবেশও এই রোগের জন্ম দিতে পারে।

পরিবেশগত কারণে এই অদ্ভুত সমস্যা দেখা দেয়। পরিবেশের নানা বিষাক্ত পদার্থ, যেমন পারদ, সিলিকা, কীটনাশক এবং তামাক অটোইমিউন রোগের সঙ্গে যুক্ত। এই উপাদানগুলি শরীরে রাসায়নিক-প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন বাড়ায়, যা অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া ঘটায়, ডিএনএ-র ক্ষতি করে। দূষণের মাত্রা বেশি হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। ঘন ঘন সংক্রমণ, বড় কোনও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ বিভিন্ন অটোইমিউন রোগের জন্ম দিতে পারে। সংক্রমণ শরীরে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাজে বাধা দেয়।

আরও পড়ুন- কিছুতেই হজম হচ্ছে না খাবার, ভিতরে ভিতরে বাসা বাঁধছে ভয়ংকর রোগ, যেসব উপায়ে হতে পারে প্রতিকার

পেটের অবস্থা ভালো না হওয়া এবং অটোইমিউন রোগের মধ্যে এক যোগসূত্র রয়েছে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ডিসবায়োসিস হলে অর্থাৎ অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ খারাপ ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে বেশি হলে প্রদাহ ঘটে। যেকোনও শারীরিক বা মানসিক চাপ অটোইমিউন রোগের কারণ হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, আলস্য অটোইমিউন রোগের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় বার করে জোরে হাঁটা এবং ব্যায়াম করা ইত্যাদির অভ্যাস না থাকলে শরীর নিয়ে ভুগতে হবেই। ওজন না কমালে অটোইমিউন রোগের প্রভাব কমাও মুশকিল।

এই রোগের আরেকটি কারণ হল অপর্যাপ্ত ঘুম। বিশ্রাম এবং ঘুম শরীরের নিরাময়ে সাহায্য করে, শরীরকে সংক্রমণ এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। ঘুম না হওয়া মানেই অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়া। প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়াও অটোইমিউন রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিষাক্ত রাসায়নিক টিস্যুর ক্ষতি করে যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

অটোইমিউন রোগ কমাতে বড় অস্ত্র হতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতির থেকে শরীরকে রক্ষা করে। প্রতিদিন মরশুমি ফল এবং শাকসবজি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন রঙের ফল এবং শাকসবজি বিভিন্ন পলিফেনল, ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

More Articles