কিছুতেই হজম হচ্ছে না খাবার, ভিতরে ভিতরে বাসা বাঁধছে ভয়ংকর রোগ, যেসব উপায়ে হতে পারে প্রতিকার

BMR : মেটাবলিজম হল সেই প্রক্রিয়া যা আপনার শরীরে গৃহীত খাদ্যকে ক্যালোরি অর্থাৎ ATP শক্তিতে পরিণত করে

প্রায়ই পেটের সমস্যায় ভুগছেন, কিছুতেই হজম হচ্ছে না খাবার? মুঠো মুঠো জোয়ান খাচ্ছেন, হজমের ওষুধও কিনছেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না? চিন্তা করার কিছু নেই এরকম সমস্যা সবার একার নয়, আপনারই আশেপাশে রয়েছে আরও অনেকেই যাদের একই সমস্যা। এমনকী ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকানদের ৯০%-এরও বেশি মানুষের মধ্যেই রয়েছে এই বিপাকীয় সমস্যা। কিন্তু কেন এত বেশি ছড়িয়ে পড়ছে হজমের সমস্যা? প্রতিদিনের অভ্যাসে কী কী ভুল করছি আমরা যার জেরে চাপ পড়ছে বিপকযন্ত্রের ওপর? আর কীভাবেই বা মুক্তি মিলবে এই সব সমস্যা থেকে, সবকিছু জানা খুবই প্রয়োজন। বিপাক তন্ত্রকে পুনরায় সেট করতে এবং আমাদের পুরো শরীরের স্বাস্থ্যকে আপগ্রেড করতে প্রয়োজন জরুরি কিছু পদক্ষেপ। এখানে, আমরা সাতটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের রূপরেখা দিয়েছি যা আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে সহজেই বিপাক জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন আপনিও।

প্রথমেই জানা দরকার কী এই মেটাবলিজম?

মেটাবলিজম হল সেই প্রক্রিয়া যা আপনার শরীরে গৃহীত খাদ্যকে ক্যালোরি অর্থাৎ ATP শক্তিতে পরিণত করে। যা সমস্ত জটিল শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী, যেমন, শ্বাস, খাদ্য হজম এবং পুষ্টি শোষণ, রক্ত ​​সঞ্চালন, আরএনএ ট্রান্সক্রিপশন, ডিএনএ সংশ্লেষণ, মস্তিষ্কে নিউরোনাল সেল সংকেত এবং যে কাজগুলোর জন্য বেশি শক্তি প্রয়োজন যেমন, শারীরিক কার্যকলাপ, প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রদাহজনক ভারসাম্য ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। একজন ব্যক্তির বেসাল মেটাবলিক রেট (BMR) হল একজন ব্যক্তির মৌলিক শারীরবৃত্তীয় কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরির পরিমাণ।

আরও পড়ুন - জলের নিচে যোগাসন! সাধারণ ব্যায়ামের থেকে বহুগুণে বাড়াবে মনোবল

আমাদের শরীরে এই মেটাবলিক রেট বা বিপাকীয় হার অনেকগুলি কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে- যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জিনগত কারণ, জৈবিক লিঙ্গ এবং বয়স। এগুলির ওপর অবশ্য মানুষের হাত নেই, তবে এছাড়াও এমন কিছু বিষয় রয়েছে বেসিক মেটাবলিক রেটের ওপর প্রভাব ফেলে যেগুলো নানা ভাবে নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন, মাইটোকন্ড্রিয়াল স্বাস্থ্য, পেশী ভর, অ্যাডিপোসিটি, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা, থাইরয়েড হরমোনের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাবারের সময়, রক্ত চাপের মাত্রা, ঘুমের স্বাস্থ্য, শারীরিক কার্যকলাপ সহ আরও অনেক কিছু।

১. পরিমিত জল পান করুন -

বিপাকযন্ত্রকে সঠিকভাবে চালনা করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সঠিক মাত্রায় জল পান। কোষে বিপাকীয় প্রতিক্রিয়ার জন্য জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শক্তি উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে হরমোন সংকেত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি সঠিক মাত্রায় জল পান। Frontiers in Nutrition ২০১৬ সালের পর্যালোচনা অনুসারে, পরিমিত জল পান বিপাকীয় হারকে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে জল খান।

২. সুষম, পুষ্টিকর খাদ্য -

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আজেবাজে খাবার থেকেই সমস্যা হয়। তাই প্রতিদিনের রুটিনে কিছু সুষম খাদ্য রাখা খুবই জরুরি। সঠিক পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট সবই প্রয়োজন শরীর সুস্থ রাখতে। স্বাস্থ্যকর ম্যাক্রো- এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরা একটি সম্পূর্ণ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকাই স্বাস্থ্যকর বিপাকের মূল চাবিকাঠি। কার্বোহাইড্রেটের তালিকায় রাখা যেতে পারে, গোটা শস্য, লেবু, ফল, আঁশযুক্ত সবজি। প্রোটিন যেমন, মাছ, মুরগি, লেবু, বাদাম, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যেমন, জলপাই তেল, অ্যাভোকাডোস, বাদাম, প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদজ খাবার যা ফাইবার এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর এসবই রাখতে পারেন তালিকায়।

৩. বিপাক-সমর্থক সম্পূরক

সামগ্রিক বিপাক নিয়ন্ত্রণের জন্য, দৈনন্দিন রুটিনে মাইন্ডবডিগ্রিনস মেটাবলিজম-এর মতো একটি প্রিমিয়াম মেটাবলিজম সাপ্লিমেন্ট যোগ করার কথা বিবেচনা করুন। এই বহুমাত্রিক সূত্রে পাঁচটি ক্লিনিক্যালি গবেষণা করা বোটানিকাল নির্যাস রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর ওজন এবং শরীরের গঠন, ভারসাম্য শক্তি এবং ক্ষুধা হরমোনের মাত্রা, শক্তি ব্যয়কে সমর্থন করে। ভিসারাল ফ্যাট জমা প্রতিরোধ করুন অপরদিকে থার্মোজেনিক ক্যালোরি বাড়ান। তার সঙ্গে কীভাবে দেহের অতিরিক্ত চর্বি পোড়ানো যায়, সেই দিকে নজর দিন।

৪. সচল রাখুন শরীর

বর্তমানে এমন একটা সময়ের মধ্যে যাচ্ছে আজকের প্রজন্ম যে ঘরে বসেই কাজ। ওয়ার্ক ফর্ম হোম। তার জেরে সারাদিন হাঁটাচলা খুবই কম হচ্ছে, তবুও যতটুকু ফুরসৎ মেকে হাঁটা ভোলার মধ্যে থাকুন। অফিসের কাজের ফাঁকে কিছু ঘরের কাজ করুন।দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওয়ার্কআউট করুন। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠুন। এছাড়াও ইন্টিগ্রেটিভ রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান হুইটনি ক্রাউচ, RDN, CLT সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ভারী ওজন তোলার পরামর্শ দেন। মোট কথা পেশী সচল রাখতে হবে।

আরও পড়ুন - শীতে ভোর ৪ টে থেকে ৬ টার মধ্যেই ঘটে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক! কীভাবে আটকাবেন?

৫. আপনার কোষকে বিশ্রাম দিতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান দিয়ে খাবার খান

যতক্ষণ না পর্যন্ত একজন ব্যক্তি ওজন হ্রাস বা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন না, ততক্ষণ বিপাক উন্নতির জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ হল বেশ খানিকটা সময়ের জন্য খাবার থেকে দূরে থাকা। এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অল্প করে খাওয়া। উপবাস হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এই বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। খেয়াল রাখবেন হীতে বিপরীত যেন না হয়।

৬. যোগ ব্যায়াম করুন

২০১৮ সালে সিএনএস নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড থেরাপিউটিকস গবেষণায় বলা হয়, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্করা সপ্তাহে আট ঘণ্টা করে যোগ ব্যায়াম করে তাদের বিপাকীয় তন্ত্রে একটি সামগ্রিক উন্নতি দেখেছেন। বিশেষত, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে এর কারণে। গবেষকরা জানাচ্ছেন মেডিটেশনের ফলে বিশ্রাম পায় কোষ যা সামগ্রিক বিপাকীয় সুস্থতাকে সমর্থন করতে পারে

৭. শরীর সুস্থ রাখতে দরকার পরিমিত ঘুম

প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অন্যান্য বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।সারা দিনে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আপনার শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে।

More Articles