ঠিক দু'বছর পর ফের কোভিডে আক্রান্ত বিগ বি, জুলাই-অগাস্ট কি অশুভ অমিতাভের জন্য

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কোভিডে আক্রান্ত হলেন বিগ বি। ২০২০ সালে বচ্চন পরিবারের বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিডে।

ফের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলেন বিগ বি। ২৩ অগাস্ট সামাজিক মাধ্যমে ট্যুইট করেছেন অমিতাভ— "এইমাত্র কোভিড টেস্ট করালাম, পজিটিভ… এই ক'দিন যাঁরা আমার সংস্পর্শে এসেছেন প্লিজ কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নিন একবার।" আপাতত এটুকু তথ্যই দিয়েছেন। কী অবস্থা কতটা গুরুতর— এই সবকিছুই জানা যায়নি এখনও। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কোভিডে আক্রান্ত হলেন বিগ বি। ২০২০ সালে বচ্চন পরিবারের বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছিলেন কোভিডে। অমিতাভ, অভিষেক, ঐশ্বর্য— পরীক্ষায় তিনজনেরই পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। নতুন করে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা জল্পনাকল্পনা।

অভিনেতার বয়স এখন ৭৯। ফলে ভক্তদের পক্ষে উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক'দিন আগেই জানিয়েছিলেন, বাড়িতে কোভিড-সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা চলছে। তার সঙ্গে বোঝাপড়া করছেন। তখনও একটা আশঙ্কা বাতাসে ভাসছিল। পরে অবশ্য জানা যায় 'জলসা'-র এক কর্মচারী কোভিড আক্রান্ত। এই 'জলসা' অমিতাভের বাংলোবাড়ির নাম। সমস্যা সেখানেই। যদিও সেবার খুব জোর বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁরা। পরিবারের কেউই আক্রান্ত হননি। কিন্তু এবার আর এড়ানো গেল না। আরেকবার ফের বিপদের মুখোমুখি অভিনেতা।

২০২০ সালের জুলাই নাগাদ খবরটা এসেছিল। প্রথমে অভিষেক আক্রান্ত হন, একে একে অমিতাভ ও ঐশ্বর্য। অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে, অমিতাভকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। বেশ কয়েক হপ্তা হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় কাটান অভিনেতা। সে-বছর অগাস্টে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসেন তিনি। বাড়িতেও সেই একই ব্যবস্থা। বিশেষভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় তাঁকে। সেবারে গৃহবন্দি থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন রীতিমতো। বলেছিলেন, এ এক ধরনের জেলখানা। মানসিক টানাপোড়েনেও ভুগছিলেন। বারংবার সেই অস্থিরতা উঠে আসছিল তাঁর ব্লগ পোস্টে। লিখেছেন, "নিজের ঘরে এই অসীম একাকীত্ব… ছোঁয়াছুঁয়ির ভয়... দুঃস্বপ্ন যেন… সিনেমায় যেমনটি দেখায়… কাচঘেরা ঘরের এপাশওপাশ, টেলিফোনে কথা… দূর থেকে হাত নাড়া অভিব্যক্তি, পরস্পরের সংস্পর্শে আসা কেবল ওটুকুই…হাতখানেক দূরেই আমার পরিবার, অথচ যেন কতখানি দূরত্ব!"

আরও পড়ুন: ‘তুমি নেশাগ্রস্ত, তাই ঝামেলা করেছ’, কেন শাহরুখ খানকে বলেছিলেন বিগ বি?

সামাজিক মাধ্যম আসার পরে ট্রোল সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। কারণে-অকারণে ব্যক্তিকে নিয়ে পরিহাস, তাকে বুলি করা— এইসব আগেও ছিল। পাড়ার আড্ডায়, ছোট পরিসরে। সামাজিক মাধ্যমের বিশাল ক্ষেত্রটিতে এর পরিসরও হাজার হাজার গুণ বেড়ে গিয়েছে। তারকাদের সঙ্গে সরাসরি বার্তালাপের সুযোগ পেয়েছে সাধারণ মানুষ। যে যত বেশি বিখ্যাত, তাকে নিষ্ঠুরভাবে বিদ্রুপ করার লোক জোটে তত বেশি। তাছাড়া যে-সময় অভিনেতা এই ব্লগ লিখছেন, সেসময় ভারতের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। গঙ্গায় লাশ ভেসে আসছে। উত্তরপ্রদেশে শয়ে শয়ে চিতা চুপিচুপি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গোটা চিকিৎসাব্যবস্থা খাবি খাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি মানুষের পরিচিত কেউ না কেউ মারা গিয়েছেন অতিমারীতে। লাখে লাখে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ গিয়েছে। তাঁরা পায়ে হেঁটে ফিরে আসছেন গ্রামে। কোনও ব্যবস্থা নেই। মৃত মেয়ের লাশ কাঁধে করে গ্রাম অবধি বয়ে এনে ক্লান্তিতে মারা যাচ্ছেন বাবাও। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে অমিতাভের বিলাসী আক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই বিক্ষুব্ধ হয়েছিল সাধারণ মানুষ। ফলে প্রচণ্ড ট্রোল হতে হয় অভিনেতাকে। রীতিমতো বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন অভিনেতা। ট্রোলের জবাবে লেখেন, এই মুহূর্তেও চিকিৎসাধীন তিনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও অসংখ্য প্রসিডিওর থাকে, বহু নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন হয়। সেই সব চলছে… এসময় মাথায় হাজার রকম চিন্তা আসে। আগে যা কখনও ভাবেননি। এই যে হাজার রকমের মন্তব্য, অস্বাস্থ্যকর আলোচনা— এসবের মূল্য কতটুকু! অথচ যারা এইসব কটু মন্তব্য করে, তারা এতেই বাঁচে, যন্ত্রের আড়ালে মানুষকে গালাগাল করেই তাদের দিন গুজরান।

জুলাই মাসের ১২ তারিখ নাগাদ টেস্টে পজিটিভ এসেছিল তাঁর। অগাস্টের ২ তারিখ ছাড়া পান। কাকতালীয়ভাবে বছর দুয়েক পরে সেই অগাস্টেই ফের কোভিডে আক্রান্ত হলেন। সেবার ছাড়া পাওয়ার খবর ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন, "পরীক্ষায় কোভিড নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতাল থেকেও ছাড়া পাওয়া গিয়েছে। ঘরে ফিরেছি, তবে কোয়ারেন্টাইনেই রয়েছি। ঈশ্বরের অশেষ করুণা, মা বাবার আশীর্বাদ, কাছের মানুষদের প্রার্থনা, গুণগ্রাহীদের প্রার্থনা… এবং অবশ্যই নানাবতীর চমৎকার যত্নআত্তি— এসবের জন্যই ফিরতে পারলাম। নতুনভাবে জীবন ফিরে পেলাম।"

বলা বাহুল্য এই প্রথমবার নয়, এর আগেও মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছিলেন অমিতাভ। ১৯৮২ সাল, 'কুলি'-র শুটিং চলছে। পুনীত ঈশ্বরের সঙ্গে একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় সময়ের কিঞ্চিৎ এদিকওদিক হওয়ায় মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিলেন অমিতাভ। সে সময় নিজের সিনেমার স্টান্ট বিগ বি নিজেই করতেন। তাতেই বিপত্তি। সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট ফিলোমেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। জ্ঞান নেই। অচেতন অমিতাভ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ডাক্তাররা জানান আঘাত গুরুতর। সেখান থেকে দ্রুত মুম্বইয়ে আনা হয় তাঁকে। ভর্তি করা হয় ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটে। প্রায় কোমায় চলে যান অমিতাভ। সার্জারির সময় কয়েক মিনিটের জন্য 'ক্লিনিক্যলি ডেড'! একথা বলেছিলেন অমিতাভ স্বয়ং। সেসময় ড. ওয়াদিয়া দেখছিলেন ব্যাপারটা। মরিয়া হয়ে কর্টিসোন অথবা অ্যাড্রিনালিন পাম্প করা শুরু করেন তিনি। প্রায় চল্লিশটা অ্যাম্পুল খরচ পরার পর সাড়া আসে অমিতাভের দেহে। কাকতালীয়ভাবে সেইদিনটিও ছিল ২ অগাস্ট। ১৯৮২ সাল। দীর্ঘদিন যমে-মানুষে টানাটানির পর সুস্থ হয়ে ওঠেন অমিতাভ। সেসময় সামাজিক মাধ্যম ছিল না। অথচ সমস্ত দেশ তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রার্থনা করেছিল।

'ব্রহ্মাস্ত্র'-র পর ফের বিকাশ বাহলের 'গুড বাই'-তে দেখা যাবে বিগ বি-কে। তাতে অভিনয় করেছেন রশ্মিকা মন্দানা, নীনা গুপ্তা, পাভেল গুলাটির মতো অভিনেতারাও। এ-বছরই, ৭ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে সেই ছবি। এছাড়াও পরিণীতি চোপড়া, অনুপম খের, বোমান ইরানি অভিনীত 'উঁচাই' ছবিতেও দেখা যাবে তাঁকে। যদিও সিনেমাটির কবে মুক্তি, তা এখনও অনির্দিষ্ট।

More Articles