ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে ভারতীয়রা! রিপোর্টে অশনি সংকেত

Antibiotics: ভারতীয়রা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গোগ্রাসে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাচ্ছেন- বলছে রিপোর্ট।

হালকা ঠান্ডা লাগা হোক বা যে-কোনও শারীরিক সমস্যা- ভারতীয়রা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গোগ্রাসে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাচ্ছেন। এমনকী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নেই এমন ওষুধও কোনওরকম প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধের দোকান থেকে বিক্রি হয়েছে করোনাকালে। এমনই দাবি ল্যানসেট-এর গবেষণাপত্রে। অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে গবেষক দলের সকলেই।

ল্যানসেট-এর গবেষণা রিপোর্ট
১ সেপ্টেম্বর ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০০ কোটিরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করেছে ভারতীয়রা। এর মধ্যে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যবহার সবথেকে বেশি। করোনাকালে এই প্রবণতা কয়েক গুণ বেড়েছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল, অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি ও ব্যবহার নিরীক্ষণ করা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়া নিয়মের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা। গবেষকরা জানিয়েছেন, যে-সমস্ত অ্যান্টিবায়োটিক ভারতীয়রা খায়- তার অধিকাংশই নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়। এমন প্রবণতা রুখতে ভারত সরকারকে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মত গবেষকদের।এই গবেষণাপত্রটি ওষুধ সংস্থার বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা ফার্মা ট্রাকের দেওয়া পরিসংখ্যান ও ন'হাজার সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়ে তৈরি প্যানেলের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তৈরি করা হয়েছে। এই রিপোর্ট তৈরিতে দিল্লির পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া-রও অবদান রয়েছে।

আরও পড়ুন: বদহজম কাটাতে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন, অজান্তেই ডেকে আনছেন মারণ রোগ

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সাধারণত ডিফাইন ডোজ (DDD) পদ্ধতিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকারীর হিসেব রাখা হয়। তাতেই দেখা গেছে, ২০২০ সালে ভারতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সংখ্যা ছিল ৫০৭১ মিলিয়ন। মানে প্রতি ১০০০ জনে প্রতি ১০.৪ অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দৈনিক ডোজ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ধরনের ওষুধের মধ্যে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ৫০০ এমজি-র ব্যবহার সবথেকে বেশি (৭.৬%) । দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে সিফিক্সিমি ২০০ এমজি (৬.৫%) । এছাড়াও কেন্দ্রের অনুমোদনহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হয়েছে ৪৪ শতাংশ। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারে ফলে মানবশরীরে এর প্রভাব কমতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিক হলো সেই ওষুধ, যা ব্যাকটেরিয়া থেকে হওয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় বা মেরে ফেলে।

২০২০ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ শীর্ষে পৌঁছেছিল। আর এই সময়েই দেশে লাফিয়ে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি। ২০২০ সালে ভারতে প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি বেড়ে হয়েছে ৭৬.৮ শতাংশ, যা আগের দু'বছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেশি। অবাক করার মতো কথা হলো, যেখানে আমেরিকা বা এই ধরনের উচ্চ আয়ের দেশে এই ওষুধের বিক্রি হ্রাস পেয়েছে, সেখানে ভারতে এই ওষুধের বিক্রি মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে, যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক মহলে।

সরকারি নজরদারির প্রয়োজনীয়তা
গবেষকরা গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, ব্রড স্পেকট্রামে ভারতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এতই বেশি যে, ভবিষ্যতে তা জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে, যা যথেষ্ট উদ্বেগের। ভারতে এই ধরনের ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণ হিসেবে কেন্দ্র-রাজ্য অসংহতিকেই দায়ী করেছেন গবেষকরা। এই কারণেই বাজারে অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি ও তাঁর ব্যবহারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই মনে করেছেন গবেষকরা। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অত্যধিক ব্যবহারের বিরোধী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। এর আগে ২০১৫ সালে ১৬টিরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিষিদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। যার অধিকাংশ ওষুধই এখনও বাজারে রমরমিয়ে বিক্রি হয়ে চলেছে। সেফলোস্পোরিন, পেনিসিলিন, ম্যাক্রলাইডস- এই তিন প্রকার নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিকই সবথেকে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে চলেছেন ভারতীয়রা। ফলে সরকারের কঠোর আইন এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে নাহলে অচিরেই ঘনিয়ে আসছে ভয়ংকর বিপদ।

More Articles