বদহজম কাটাতে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন, অজান্তেই ডেকে আনছেন মারণ রোগ
যদি অতিরিক্ত অ্যাসিড না থাকে, তবে অ্যান্টাসিডে থাকা ক্ষার পাকস্থলীর ক্ষতি করে। শরীরের রক্তাল্পতাও দেখা দেয়।
খাবার খেলেই গলা-বুক জ্বালা করছে। কখনও কখনও আবার মুখ টক হয়ে থাকছে। বুকের মাঝে চিন চিন করে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কমবেশি আমরা সবাই হজমের সমস্যায় ভুগে থাকি। এই অবস্থায় স্বস্তি পেতে অ্যান্টাসিডই একমাত্র ভরসা। তাই বেশিরভাগ মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড কিনে খেতে থাকেন। কিন্তু জানেন কি, এর ফলে স্বাস্থ্যের কতখানি ক্ষতি করে ফেলছেন আপনি?
প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক শ্রীরাম নেনে তাঁর ইউটিউব ভিডিওতে বলেছেন যে, ভারতের প্রায় ৩০% মানুষ গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় ভোগেন। ফলস্বরূপ দিনের পর দিন যথেচ্ছভাবে অ্যান্টাসিড খেয়ে চলেন।কিন্তু এই অ্যান্টাসিড মানবদেহের কিডনি, হৃদপিণ্ডর ক্ষতি-সহ একাধিক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অম্বল বা হজমের সমস্যার প্রধান কারণ কী?
গৃহীত খাদ্যবস্তু হজম করতে এবং তাতে উপস্থিত জীবাণুকে ধ্বংস করতে আপনাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। কিন্তু কখনও কখনও উৎপাদিত অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে অস্বস্তি বোধ হতে থাকে। চিকিৎসকদের মতে গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যার ক্ষেত্রে গোড়াতেই লুকিয়ে রয়েছে গলদ। অর্থাৎ, মূলত খ্যাদাভাসের কারণেই এই সমস্যা দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: ব্রেকফাস্টে যা খাচ্ছেন, তা মৃত্যু ডেকে আনছে না তো? সতর্ক হন আজই
দ্রুত খাবার খেলে বা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল খেলে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্যাস আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। যেমন ধরুন, বিরিয়ানি খেয়েই কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে আপনি ভাবছেন পেট হালকা হলো, কিন্তু না এতে গ্যাসের সমস্যা বাড়ে। আবার অতিরিক্ত তেল ঝালমশলা-সহ খাবার খেলে বা সঠিক সময় খাবার না খেলেও এই সমস্যার উদ্রেক হতে পারে। এছাড়া অনেকে জল গ্লাসে না ঢেলে সরাসরি জগ থেকে খান। এতেও কিন্তু বাড়ে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা। আবার শরীরে কোনও যদি কোনও ইনফেকশন থাকে, বিশেষত পেটে, তাহলেও খাবার হজমে সমস্যা দেখা দেয়।
অত্যধিক হজমের ওষুধ খাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যধিক মাত্রায় হজমের ওষুধ খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুলের মেডিসিন বিভাগের এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, অতিরিক্ত অ্যান্টাসিড হাড় ভঙ্গুর করে দেয়। কিডনির অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে এবং সবচেয়ে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে হৃদপিণ্ডে। হৃদযন্ত্রের অবস্থা এতটাই খারাপ করে দেয় যে, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা মারাত্মক বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বহু মানুষ প্রতিদিন অ্যান্টাসিড খান। প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন না হওয়ায় ওষুধের দোকান থেকেও প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় এই ওষুধ। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি-র গবেষকরা বলছেন, অ্যান্টাসিড খাওয়ার প্রবণতা ২৫% পর্যন্ত মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেয়।
পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড থাকলে, তা এই ওষুধগুলি কমিয়ে দেয়। কিন্তু যদি অতিরিক্ত অ্যাসিড না থাকে, তবে অ্যান্টাসিডে থাকা ক্ষার পাকস্থলীর ক্ষতি করে। শরীরের রক্তাল্পতাও দেখা দেয়। ওষুধের উপাদানগুলি কিডনিতে জমা হতে শুরু করে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ব্যাপক হারে কমে যায়। তাতে বাড়ে রক্তচাপ। ফলস্বরূপ হঠাৎই হার্ট অ্যাটাক হয় ব্যক্তির। এছাড়াও অ্যান্টাসিডের কারণে ডায়েরিয়া, কিডনিতে পাথর, শরীরে বি টুয়েলভ-এর পরিমাণ কমে যাওয়া, স্মৃতিভ্রংশ, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাথার যন্ত্রণা এবং তলপেটে ব্যথা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
করণীয়
এক্ষেত্রে কম তেলমশলার খাবার খান। গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন শাকসবজি-ফল বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে অন্তত ৩০ রকমের ফল, শাকসবজি-বাদাম এই খাবারগুলি খান। রোজ এক বাটি করে ডাল অবশ্যই খাবেন। এর পাশাপাশি শরীরচর্চা আবশ্যক। শরীরে কোনও অস্বস্তি মনে হলেই বেশি করে হাঁটাহাঁটি করুন, উপকার পাবেন। অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগলে দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিখ্যাত সংগীতশিল্পী কে কে-র মৃত্যুর কারণ হিসেবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি শোনা যায়, হৃদযন্ত্রের যে সমস্যা ছিল সেটা জানতেনই না কে কে। হজমের সমস্যা ভেবে প্রচুর অ্যান্টাসিড খেতেন সংগীতশিল্পী। কে কে-র স্ত্রীও কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, শারীরিক অস্বস্তির কারণে প্রায়ই অ্যান্টাসিড খেতেন কে কে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একটানা অ্যান্টাসিড খাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে চিকিৎসকরাও অ্যান্টাসিড ত্যাগেরই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।