সময়ের আগেই মৃত্যু হবে আপনার! দিনে কতটা পরিমাণ নুন খেলে বাড়বে আয়ু?

Excessive sodium Intake: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিদিন ৫ গ্রামেরও কম নুন খাওয়া উচিত মানে এক চা চামচ।

পাতে কাঁচা নুন না নিলে অসম্পূর্ণ লাগে? নুন বেশি খাওয়ার অভ্যাস যে কী মারাত্মক বিপজ্জনক তা সম্প্রতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অত্যধিক সোডিয়াম গ্রহণ বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং রোগের বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যের খলনায়ক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী নুন খাওয়া কমালে তা আগামী ৭ বছরে অন্তত ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু রুখে দিতে পারে! সোডিয়াম খাওয়ার পরিমাণ হ্রাস সম্পর্কে হু একটি প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ হ্রাস করার লক্ষ্য ঠিক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সোডিয়াম শরীরের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু সোডিয়াম বা নুন অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। খাবার লবণ মানে সোডিয়াম ক্লোরাইডই সোডিয়ামের প্রধান উৎস। তবে অন্যান্য মশলা যেমন সোডিয়াম গ্লুটামেটেও তা মেলে। সোডিয়াম শরীরে জল ও খনিজগুলির ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্নায়ুর কার্যকারিতা রক্ষায় নুনের ভূমিকা প্রবল। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ নুন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে যা কালক্রমে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় মানুষকে। ফাস্ট ফুড, চিপস, স্ন্যাকস, স্যুপ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ইন্সট্যান্ট নুডলস সবেতেই সোডিয়াম গ্লুটামেট রয়েছে বিপুল পরিমাণে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোডিয়াম হ্রাস নীতিগুলি বাস্তবায়িত হলে তা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে৷ তবে, সোডিয়াম গ্রহণ কমাতে প্রস্তাবিত নীতিগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে মাত্র ৯ টি দেশ, ব্রাজিল, চিলি, চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, সৌদি আরব, স্পেন এবং উরুগুয়ে। বিশ্বব্যাপী গড় সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ প্রতিদিন ১০.৮ গ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিদিন ৫ গ্রামেরও কম নুন খাওয়া উচিত, মানে এক চা চামচ।

আরও পড়ুন- সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাক! কেন চরম ‘ফিট’ মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডঃ টেড্রোস অ্যাডানম ঘেব্রেয়েসাস জানিয়েছেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও রোগের একটি প্রধান কারণ এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ এই অস্বাস্থ্যকর খাবারের অন্যতম উপাদান। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশিরভাগ দেশ এখনও কোনও বাধ্যতামূলক সোডিয়াম হ্রাস নীতি গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে প্রায় সমস্ত দেশেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়মিত বাড়ছে। WHO বিশ্বের সমস্ত দেশকেই সোডিয়াম হ্রাস নীতি গ্রহণের অনুরোধ যেমন করেছে পাশাপাশি খাদ্য প্রস্তুতকারকদেরও খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।

সোডিয়াম কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল চারটি নীতি কী?

কম নুন খাওয়ার জন্য খাবারে বদল করতে হবে এবং খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণের লক্ষ্যও নির্ধারণ করতে হবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল, স্কুল, কর্মক্ষেত্র এবং নার্সিং হোমে লবণ বা সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সীমিত করতে হবে। 

হু জানাচ্ছে, খাবারের লেবেলিংয়ে সোডিয়ামের উল্লেখ থাকতে হবে। যাতে উপভোক্তারা কম সোডিয়াম রয়েছে কিনা বা কতখানি সোডিয়াম রয়েছে তা বুঝতে পারবেন।

নুন/সোডিয়াম গ্রহণ কমাতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করতে হবে।

গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, স্থূলতা, অস্টিওপরোসিস এবং কিডনির রোগের মতো অন্যান্য রোগের ঝুঁকির সঙ্গে বেশি পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণের সম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন- বিশ্বের ৫ কোটি মানুষকে বাঁচিয়েছে নুন-চিনি জল! মরণোত্তর পদ্মবিভূষণে সম্মানিত দিলীপ মহলানবিশ

৪৩ টি সদস্য রাষ্ট্র স্কুলের দুপুরের খাবার, অন্যান্য খাবার বা স্ন্যাকসের সময় দেওয়া খাবার এবং পানীয়ের ক্ষেত্রে নুনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করেছে। ৩১ টি সদস্য রাষ্ট্র স্কুলের ক্যাফেটেরিয়া, স্ন্যাক বার বা ভেন্ডিং মেশিনে বিক্রি হওয়া খাবার এবং পানীয়ে নুনের মান নির্ধারণ করেছে। ৫ টি সদস্য রাষ্ট্র (কাবো ভার্দে, কিরিবাতি, মঙ্গোলিয়া, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং সেশেলস) স্কুলের চারপাশে বিক্রি হওয়া খাবারের ক্ষেত্রেও সোডিয়াম-নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ২০১৩ সালে সোডিয়াম দ্রব্যের জন্য বাধ্যতামূলক সর্বোচ্চ সীমা চালু করেছিল। ১৩ টি খাদ্য বিভাগের নানা সামগ্রী যেমন, রুটি, প্রাতঃরাশের সিরিয়াল, মার্জারিন, মাংসের পণ্য, জলখাবার এবং স্যুপ সহ নানা খাবারে নুন কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

More Articles