উত্তরবঙ্গে আবার বন্যা? দার্জিলিং নিয়েও বড় আশঙ্কা আবহাওয়া অফিসের

বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আর্দ্র বায়ুর প্রবেশ ঘটায় আগামী তিনি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে। 

বর্ষার দিন সমাগত, তবে মাথায় বাজ দক্ষিণে নয়, উত্তরের মানুষের।  রয়েছে অশনিসংকেত। ঠিক গতবছরের মতো এবছরেও বানভাসী হওয়ার সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এমনকী ধসও নামতে পারে দার্জিলিং ও তৎসংলগ্ন অঞ্লে, এমনটাই জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। আবহাওয়া দফতরের বুলেটিন অনুযায়ীস আগামী তিনদিন টানা বৃষ্টি চলবে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরের বুলেটিনে হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আর্দ্র বায়ুর প্রবেশ ঘটায় আগামী তিনি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে। 

এবছর নির্ধারিত সময় থেকে চারদিন আগেই বঙ্গে প্রবেশ করেছে বর্ষা। সেই থেকে একটানা বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের নদীগুলির জলস্তরও বেড়েছে।কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের ছবিটা ঠিক বিপরীত। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস বেড়েছে আরও। তবে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গেও প্রবেশ করবে মৌসুমি বায়ু।


উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি

তবে হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, আজ থেকে ১৯ জুন তারিখ পর্যন্ত কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেইমতো লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে এই দুই জেলায়। পাশাপাশি এই দিনগুলিতে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়িতে ভারী বৃষ্টি চলবে।তবে এই জেলাগুলির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।উত্তরের আরও দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,অবিরাম বৃষ্টির কারণে দার্জিলিং, কালিম্পং- এ ধস নামার আশঙ্কা করা হয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। বুধবার রাতেই বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার।
ডুয়ার্সে একটানা বৃষ্টির কারণে জল বেড়েছে নদীগুলোর। এই অবস্থায় আগামী তিনদিন অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস চিন্তা বাড়াচ্ছে । ফলে চিন্তায় নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে প্রবল বৃষ্টিতে কোথাও হাঁটু সমান তো কোথাও কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আগামী কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা এবং সংকোশ নদীর জলস্তর আরও বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কালজানি নদীতেও জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। নদী সংলগ্ন অধিকাংশ গ্রাম জলমগ্ন। সেতু ভেঙে পড়ায় ফালাকাটা-আলিপুরদুয়ারের রাস্তায় বন্ধ যান চলাচল। এখনও পর্যন্ত খোলা হয়েছে ৬০টির বেশি ত্রাণ শিবির। গোটা জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ। উদ্ধার কাজে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, এসএসবি এবং সিআরপিএফ।

ইতিমধ্যেই তিস্তা ব্যারেজ থেকে আড়াই হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ভুটানেও বৃষ্টির জেরে তিস্তা নদীর জল আরও বাড়বে বলেই জানা গেছে। জল বেড়ে গেলে নদী সংলগ্ন গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলঢাকা নদীতে জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। এরই মধ্যে জলঢাকা, ডুডুয়া, গিলান্ডি নদীতে জল বেড়ে যাওয়ার নদী সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।বৃষ্টির জেরে দৃশ্যমানতা কমবে। ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কাঁচা বাড়িও।

আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে বৃষ্টির পরিমাণ ৩০.৪ মিমি। জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে ০.১ মিমি । কোচবিহারে বৃষ্টি হয়েছে ৪ মিমি। মালদায় বৃষ্টির পরিমাণ ০.৭ মিমি বৃষ্টি।জানা গিয়েছে, গজলডোবায় তিস্তার বাঁধের মোট ৪৫টি লকগেটের মধ্যে ১১টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় বালাসন সেতুর ডাইভারশন সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ডাইভারশন সেতু এবং তার সংযোগকারী রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটা-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়ি রাত থেকেই জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, তিস্তার দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সিকিমেও একাধিক জায়গায় ধস পাওয়ার খবর এসেছে। ধস সরানোর কাজ শুরু করছে প্রশাসন।তবে সিংথাম এবং রংপোর মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এই মুহূর্তে। গতকালই সিকিম আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন,' আগামী পাঁচদিন অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে।' গতকাল ধসের মধ্যে পড়ে একজনের মৃত্যুও হয়েছে সিকিমে।এ অবস্থায় বহু পর্যটক দার্জিলিং,সিকিমের হোটেলে বন্দি হয়ে রয়েছেন । অনেকেই ফেরার চেষ্টা করেছেন।


কন্ট্রোলরুমের ফোনও বিকল

বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গে যখন বন্যা পরিস্থিতি মধ্যেই বিকল হয়ে গেল ফ্লাড কন্ট্রোলরুমের সব কয়টি টেলিফোন। এর ফলে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সেচ দফতরের কর্মীদের। ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার করেই তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন তাঁরা। এ নিয়ে ফ্লাড কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিমাই চন্দ্র দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কন্ট্রোলরুমের সব কটি ল্যান্ডফোন বিকল হয়ে গিয়েছে। ফলে আমরা তথ্য যোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছি। বিষয়টি আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং বিএসএনএল দফতরেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।'

More Articles