আকারে দিল্লি, লন্ডনের থেকেও বড়! যে বিশাল হিমশৈল ঘিরে চরম বিপদের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের

Iceberg Larger Than Delhi Became Threat : সাম্প্রতিক সময় বেশ কয়েকবার সেই ভয়ংকর বিপদ সংকেত দেখেছে গোটা বিশ্ব।

অ্যান্টার্কটিকা মানেই বিস্তীর্ণ বরফের দেশ। যেদিকেই তাকানো যায়, কেবল ধু ধু সাদা চাদর, আর প্রবল ঠাণ্ডার ঝাপটা। এখন সেই অ্যান্টার্কটিকার দিকেই কড়া নজর রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ধীরে ধীরে গলছে হিমবাহ। ভেঙে যাচ্ছে, জলে ভাসসছে বড় বড় হিমশৈল। ফলে বিপদ বাড়ছে সভ্যতার। সাম্প্রতিক সময় বেশ কয়েকবার সেই ভয়ংকর বিপদ সংকেত দেখেছে গোটা বিশ্ব। ফের একবার এমনই ছবির সাক্ষী থাকল বিজ্ঞানীমহল।

ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর একটি ছবি সামনে এনেছেন। মেরু প্রদেশের দিকে নাগাড়ে নজর রেখেছেন তাঁরা। তখনই সামনে আসে দুটি হিমশৈলের ছবি। বিশাল বড় এই হিমশৈল দুটি সমুদ্রের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। ঢেউ আর স্রোতের ফলে সেটি এক জায়গায় স্থিরও থাকতে পারছে না। কিন্তু আসল প্রশ্ন সেটা নয়। প্রশ্ন হল ঠিক কত বড় এই হিমশৈল দুটি?

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হিমশৈল দুটি আসলে একটি বিশাল হিমবাহের টুকরো অংশ। ২০২৩-এর জানুয়ারিতেই এর একটি মূল হিমবাহ থেকে ভেঙে আলাদা হয়ে যায়। আরেকটি ২০২১ সালের মে মাসেই আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে সমুদ্রেই ভেসে আছে এগুলি। বিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছেন এ৮১ (A81) এবং এ৭৬এ (A76a)। এই দুটো ঘিরেই সতর্কতা জারি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, দুটো হিমশৈলের আকারই বিশাল বড়। ঠিক কতটা বড়? এ৮১ হিমশৈলের আকার প্রায় ১৫৫০ বর্গ কিলোমিটার। এতটাই বড় যে, ভারতের রাজধানী দিল্লি আর ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনও এই হিমশৈলের সামনে নিতান্তই ‘শিশু’! এ৭৬এ-র আকার তো আগেরটার থেকেও অনেক বড়।

আর এই দুই বিশাল হিমশৈল নিয়েই চিন্তায় বিজ্ঞানীরা। কেন? হিমশৈল সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এর আগেও দেখেছে পৃথিবী। টাইটানিকের মর্মান্তিক কাহিনি তো কিংবদন্তি হয়ে আছে। সেই হিমশৈলটির থেকেও কয়েক হাজার গুণ বড় এগুলি। আর স্রোতের জেরে এগুলি ফকল্যান্ড আর দক্ষিণ জর্জিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। এর ফলেই প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা। এই সময় অনেক মৎস্যজীবী নিজেদের জাহাজ নিয়ে মাছ ধরতে বেরন। সেই সময় এই বিশাল বড় হিমশৈল দু’টির সঙ্গে ধাক্কা লাগার সমূহ সম্ভাবনা। সেইসঙ্গে সমুদ্রের জীবন ও স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি স্থলভাগে আছড়ে পড়ে, তাহলে প্রাণীজগতেরও ক্ষতি। 

সেইসঙ্গে আরও একটি দিক তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। এই দুটো বিশাল হিমশৈল আদতে আরও বড় একটি হিমবাহের অংশ। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জেরেই এই হিমবাহগুলিতে ভাঙন ধরছে। গলে যাচ্ছে বরফ। এই দুটি হিমশৈলও যদি সম্পূর্ণ গলে যায়, তাহলে সমুদ্রের জলস্তর বেশ কিছুটা বাড়বে। ফলে প্লাবিত হবে আশেপাশের ছোটখাটো দ্বীপগুলি। অন্যদিকে এই হিমশৈল গলে গেলে ভেতরে চাপা পড়ে থাকা যাবতীয় বস্তু বাইরে বেরিয়ে আসবে। সেখানে ধুলোকণা, জীবাণুও থাকতে পারে। আপাতত এই হিমশৈল ও অ্যান্টার্কটিকার দিকেই নজর রেখেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। মেরু অঞ্চল যদি একবার বেসামাল হয়, সভ্যতাই সংকটে পড়বে।

More Articles