মুখ বন্ধ রাখুন হাসিনা! চাইছে দিল্লি?
India Bangladesh relations: মিস্রীর বক্তব্যে ভারত পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে— ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং দুই দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে।
হাসিনা মুখ বন্ধ রাখুন, যেন এমনটাই বার্তা দিচ্ছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুতে উত্তপ্ত হচ্ছে দুই দেশের কূটনৈতিক পরিসর। এই সময়েই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, নয়াদিল্লি আপাতত সংযমী অবস্থান নিতে চাইছে। একদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানানো হচ্ছে, অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোনো তীব্র প্রতিক্রিয়া এড়াতেও সচেষ্ট ভারত। নাম না করলেও স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের দায় নিতে রাজি নয়াদিল্লি। পক্ষান্তরে তাঁকে নীরব থাকার কথাই বলা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন সরকার গঠিত হলে সহযোগিতামূলক সহাবস্থানের বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে বেঁধে দেওয়া সময়ে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনে। কূটনৈতিক মহলের মতে, এই অবস্থান ইঙ্গিত দেয়— শেখ হাসিনা আপাতত নীরব পর্যবেক্ষণে থাকুন, যাতে দুই দেশের সম্পর্ক ও নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিস্রী স্পষ্ট করেছেন, ভারতের ফোকাস এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখা। তাঁর কথায়, "আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক রেখেছি। ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, "এর জন্যে চাই পারস্পরিক সহযোগিতা, এমন কোনো বিবৃতি বা সক্রিয়তা যা এই পরিবেশ তৈরি করার পথে বাধা তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।" ভারত সফরে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এমনটাই বলেছেন বিক্রম মিস্রী।
আরও পড়ুন
২৬ বছর পর বাংলাদেশে ফিরছেন তারেক রহমান! ক্ষমতার কুর্সি অপেক্ষমান?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যও যেন সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। মিস্রী মনে করিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রফেসর ইউনূসের সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনমত দ্রুত প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছি।" এই বক্তব্যে স্পষ্ট, ভারত এখন চাইছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যেন স্বাভাবিক পথে এগোয়। অর্থাৎ, ক্ষমতার প্রশ্নে প্রকাশ্য অবস্থান না নিয়ে স্থিতিশীলতার পক্ষে বার্তা দিচ্ছে নয়াদিল্লি।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের মতে, দুই দেশের সম্পর্ক কোনো দলের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, "ভারত থেকে বাংলাদেশে যখন শক্তি প্রবাহিত হয়, তা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের বাড়িতে সীমাবদ্ধ থাকে না। জল, বিদ্যুৎ বা পণ্য—সবই বাংলাদেশের মানুষের জন্য। আমাদের সহযোগিতার নকশা জনমুখী।" অতএব, মিস্রীর বক্তব্যে ভারত পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে— ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং দুই দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থই প্রাধান্য পাবে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটা বিচারাধীন বিষয়, এ বিষয়ে দু-দেশের মধ্যে আরও নিবিড় কথাবার্তা প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, আমরা চাই বাংলাদেশ সরকরারে সঙ্গে এ বিষয়ে একযোগে কাজ করতে।"
আরও পড়ুন
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন টানাপোড়েন! শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ কোন পথে?
বিক্রম মিস্রী আরও বলেন, "দুটি সরকার একে অপরের সাথে যখন যোগাযোগ করে তখন অবশ্যই সেই যোগাযোগ বহুস্তরীয় হয়। সরকারের স্তরে, সরাসরি হতে পারে আবার সরকারের বাইরে, নাগরিক সমাজের সাথে, মিডিয়া, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মাধ্যমেও যোগাযোগ হতে পারে। অতীত নয়, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সম্পর্ক গড়তে চাই আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে।" এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, দিল্লি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নিউট্রাল কূটনীতির পথে হাঁটছে। শেখ হাসিনা বা বিএনপি, কেউই নয়, ভারতের ফোকাস এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বাস্তবিক স্বার্থে। কূটনৈতিক মহলের মতে, বিক্রম মিস্রীর বক্তব্য যেন ইঙ্গিত করছে— হাসিনা মুখ বন্ধ রাখুক, যাতে পরিস্থিতি ঠান্ডা থাকে।
ভারত এখন বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকৌশল পর্যবেক্ষণ করছে। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দিয়ে নয়াদিল্লি বোঝাতে চাইছে— এই সংবেদনশীল ইস্যুতে প্রকাশ্য রাজনৈতিক মন্তব্য নয়, বরং পর্দার আড়ালের আলোচনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান এখন পরিষ্কার— বাংলাদেশে যেই সরকার আসুক, সম্পর্ক থাকবে।

Whatsapp
