ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন টানাপোড়েন! শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ কোন পথে?
Sheikh Hasina Extradition: ঢাকা থেকে বারবার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি উঠলেও নয়াদিল্লি জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পরামর্শ ও আলোচনার প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে। এই আবেদনের জবাবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে নয়, বরং আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই নেওয়া সম্ভব।
ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী বলেন, “শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনগত বিষয়। এই ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে হলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় প্রয়োজন।” তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, নয়াদিল্লি এই মুহূর্তে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার পথে হাঁটতে চাইছে না।
ভারত ইতোমধ্যে খোলাসা করেছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া হবে না এবং বাংলাদেশও বলেছে, যদি দরকার পড়ে, আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে পারি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারতকে একটি ডিপ্লোমেটিক নোট পাঠিয়েছিল, সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রমাণ-নথি সংযুক্ত ছিল। তবে, এখনও পর্যন্ত ভারতের দিক থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোনো নতুন তথ্য নেই, আদালতে বিচার শুরু হয়ে গেছে, এবং যদি কেউ না আসে, তবুও বিচার থেমে থাকবে না।
আরও পড়ুন
৬ মাসেই পদত্যাগ! কেন বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে?
ভারতে প্রত্যর্পণ বিষয়ক প্রক্রিয়া প্রত্যর্পণ আইন, ১৯৬২ (Extradition Act, 1962) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই আইনে বলা হয়েছে, অন্য দেশ থেকে কোনো নাগরিককে ফেরাতে হলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, প্রমাণ এবং অপরাধের ধরন বিচার করতে হয়।
ভারতের বর্তমানে প্রায় ৫০টি দেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও হতে পারে— অর্থাৎ, যদি কোনো অভিযোগ রাজনৈতিক চরিত্রের হয়, তাহলে প্রত্যর্পণ নাকচ করা যায়।
গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন ঘটে তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের, প্রায় দেড় দশক ধরে তারা ক্ষমতায় ছিল। আন্দোলনের চাপে ৫ অগাস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা এবং ভারতে আশ্রয় নেন। সেই সময় থেকেই দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় কূটনৈতিক টানাপোড়েন, যা পরবর্তীতে প্রভাব ফেলে সীমান্ত বাণিজ্য ও জলবণ্টন সংক্রান্ত আলোচনাতেও। ঢাকা থেকে বারবার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি উঠলেও নয়াদিল্লি জানিয়েছে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পরামর্শ ও আলোচনার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন
গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনাই, যা উঠে এল তদন্তে
সম্প্রতি শেখ হাসিনার বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অডিও ফাঁস হয়েছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। এছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা চলছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে একটি অভ্যন্তরীণ আদালত তাঁকে আদালতে উপস্থিত না থাকার জন্য ছয় মাসের সাজা দেয়। তবে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত নিজেদের অবস্থান বদলায়নি, এই নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েছে কেন্দ্র সরকার।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যু শুধু আইনগত নয় — এটি ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্যেরও একটি বড় পরীক্ষা। ভারত একদিকে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঝড়ও তুলতে পারে। বিদেশ সচিব মিস্রী এদিন আরও বলেন, “আমরা বাংলাদেশে দ্রুত ও স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চাই। যে সরকার জনগণের ম্যান্ডেট পাবে, ভারতের সহযোগিতা তাদের সঙ্গেই অব্যাহত থাকবে।”
প্রসঙ্গত, এই পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট — তারা রাজনৈতিক চাপে সিদ্ধান্ত নেবে না, বরং আইন, আলোচনা ও আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনেই এগোবে। বাংলাদেশের আদালতে বিচার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে, আর নয়াদিল্লি অপেক্ষা করছে সঠিক সময় ও আইনি পরিপক্বতার। অতএব, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো হবে কি না, তা এখন নির্ভর করছে দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার ফলাফলের ওপর।

Whatsapp
