নিজের কল্পনার দুনিয়ায় পৌঁছনোর রাস্তা বাতলে দেবে এই দোকান!

আপনি পাহাড়ে আছেন। যেদিকেই তাকাচ্ছেন, সেদিকেই বিশাল পাহাড়, এদিকের পাহাড় সাদা, অন্যদিকের পাহাড় সবুজ, মাঝে নদী বয়ে যাচ্ছে, পাখি ডাকছে। তার মাঝের উপত্যকায় আপনি হেঁটে বেড়াচ্ছেন।

হঠাৎ আপনার সন্তান আপনাকে ডাকল তার পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্যে। আর উপায় নেই। এত সুন্দর একটা পরিবেশ উপভোগ এখন আর করা সম্ভব নয়। আপনি আপনার ভিআর সেটটি খুলে ফেললেন।

আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এটা কী হল? পাহাড় থেকে হঠাৎ সন্তানের পড়াশোনা, তার পর কোথাকার কি ভিআর? নিজের ঘরে বসে ইউটিউবের ভিডিও দেখেছেন পাহাড়ের, কিন্তু ভিআর দিয়ে পাহাড়ে কীভাবে পৌঁছনো গেল? অনেক প্রশ্ন। উত্তর একটাই। মেটাভার্স! একটি ডিজিটাল দুনিয়া, যেখানে কল্পবিজ্ঞান সত্যি হতে চলেছে। যেখানে থ্রিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি পৌঁছে যাবেন অপার্থিব, কৃত্রিম এক পৃথিবীতে। যে প্রযুক্তির সাহায্যে আপনি পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্তে, যে-কোনও মানুষের কাছে পৌঁছে যাবেন, ভার্চুয়ালি। তাকে চোখের সামনে দেখবেন, তাকে মানে তার অবতারকে। বাড়ি বসে আপনি তার সঙ্গে গেম খেলবেন, অফিসের মিটিং করবেন, বেড়াতে যাবেন, শপিং করবেন, পার্টি করবেন- কিন্তু সবটাই অপার্থিব। আপনি কিছু ছুঁতে পারবেন না, স্বাদ, ঘ্রাণ কিছুই পাবেন না। কিন্তু সবই আপনার অভিজ্ঞতায় জমা হবে, শুধুমাত্র নিজের চোখে একটি যন্ত্র লাগিয়ে দিয়ে।

আর একটু বিশদে বিষয়টা বোঝানো যাক।

আরও পড়ুন: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সকলের অ্যাকাউন্টে ব্লু টিক: কতটা বদলাবে এলন মাস্কের ট্যুইটার?

'মেটাভার্স' শব্দটি বা ভাবনাটির উৎপত্তি কোথায়?

কল্পবিজ্ঞান লেখক নিল স্টিফেনসন, তাঁর উপন্যাস 'স্নো ক্র্যাশ'-এ প্রথম মেটাভার্সের চিত্র এঁকেছেন। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে মানুষ তাদের থ্রিডি অবতারের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। 'স্নো ক্র‍্যাশ'-এর মেটাভার্সে দেখানো হয়েছে কীভাবে মানুষ কাল্পনিক থ্রিডি জীবন যাপন করে। 

'মেটাভার্স' শব্দের অর্থ কী?

'মেটাভার্স' শব্দটি দু'টি শব্দ নিয়ে গঠিত। একটি 'মেটা', যার অর্থ হল নির্বিকল্প ও বৃহত্তম, এবং 'ভার্স' শব্দের অর্থ ব্রহ্মাণ্ড। অর্থাৎ, 'মেটাভার্স' শব্দের অর্থ হল এমন একটি ডিজিটাল পৃথিবী, যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটির পাশাপাশি ভিডিয়ো ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বাস্তব দুনিয়ার মতোই একটি জগৎ বানাতে সক্ষম।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহারকারী হন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানবেন যে, ফেসবুক নিজের সংস্থার নাম পাল্টে ফেলেছে। তার নতুন নাম মেটা। এই নাম পাল্টে ফেলা শুধু মার্ক জাকারবার্গের সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য ছিল না। মেটাভার্সের দুনিয়াতে তাদের আবির্ভাবের বার্তাও ছিল সেটা। এই থ্রিডি দুনিয়ার বাজার দখলের লড়াইতে এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল তারা। ৯ মে, ক্যালিফর্নিয়ার বার্লিংগেম শহরে তারা মেটার বিপণি খুলতে চলেছে। তারাই হয়ে উঠবে বিশ্বের প্রথম সংস্থা, যারা মেটাভার্সের সামগ্রীর বিপণি চালু করল।

সেই বিপণিতে কী থাকছে? থাকছে মেটার সেই সমস্ত পণ্য, যা গ্রাহকদের পৌঁছে দেবে অপার্থিব সেই দুনিয়াতে। এক বিশাল পর্দা থাকবে ১৫৫০ স্কোয়ারফুটের এই বিপণিতে। যেখানে গ্রাহকেরা সমস্ত পণ্য নিজেরা পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখবেন, আরও ভালোভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন এই নতুন দুনিয়ার সঙ্গে। থাকছে রে ব্যান সংস্থার থ্রিডি চশমা, থাকছে মেটার নিজস্ব কোয়েস্ট টু ভিআর। সহজ উদাহরণ দিতে গেলে বলা যায়, আটের দশকের মোবাইল ফোনের দোকানের মতো হতে চলেছে এই বিপণি।

কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় হল, এই প্রযুক্তি আগামী দিনে কি আরও একা করে দেবে মানুষকে? এখনই দেখা যাচ্ছে, কীভাবে সামাজিক মাধ্যমের নেশায় বুঁদ প্রজন্মের পর প্রজন্ম। তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন, আসল দুনিয়াতে তাদের কোনও মন নেই। তাদের হাতে এই প্রযুক্তি কি আশঙ্কার উদ্রেক ঘটাবে না? তাছাড়া সত্যিই কি এই ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োজন আছে মানবজাতির? হ্যাঁ, একথা ঠিকই যে, মেটাভার্স সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে এখনও এক দশক হয়তো লেগে যাবে, কিন্তু তাও, বিপদ কি এড়ানো যাবে? আর গ্রাহকদের তথ্য? ফেসবুকের বিরুদ্ধেই গভীর অভিযোগ, তথ্য বিক্রি করে দেওয়ার। মেটাভার্স তো ব্যবহারকারীদের জীবনে আরও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কী হবে তথ্যের সুরক্ষার? উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব।



More Articles