মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সকলের অ্যাকাউন্টে ব্লু টিক: কতটা বদলাবে এলন মাস্কের ট্যুইটার?
অবশেষে জল্পনার অবসান। শেষ পর্যন্ত এলন মাস্কের ঝুলিতেই এল ট্যুইটার। ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বদলে ট্যুইটারের একশো শতাংশ শেয়ারের মালিক হলেন এলন মাস্ক। কিছুদিন আগেও তাঁর বোর্ডে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এ-বছরের এপ্রিল মাসের শুরুতেই ২২ হাজার কোটি টাকায় অ্যাপটির ৯% অংশীদারি কিনেছিলেন টেসলা-র অধিকর্তা। তবে মাস্কের দাবি, তিনি ট্যুইটারের অংশীদার হওয়ার সময় ভেবেছিলেন, এটি বাকস্বাধীনতার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে। কিন্তু বিনিয়োগের পর সে ভুল ভেঙে গেছে। তাই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থা হিসেবে এর বদল ঘটানোই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
শেষ কয়েক বছর ধরেই মাইক্রো ব্লগিং সাইটটির ইউজার-সংখ্যা যে হারে কমেছে, তাতে হ্রাস পেয়েছে সংস্থার বাজারদরও। মাত্র ১% ভারতবাসী এই মুহূর্তে ট্যুইটার ব্যবহার করেন। বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ ট্যুইটার ব্যবহার করলেও ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় তা অনেক কম। মাস্ক নিজে কিছুদিন আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ফলোয়ার বেশি থাকা সত্ত্বেও বহু তারকা বছরে একটি বা দু'টি-র বেশি ট্যুইট করেন না, তবে কি ট্যুইটারের দিন শেষ হতে চলছে? এই অবস্থায় অনেকেই মনে করছেন, ৪৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ একটু বেশিই হয়ে গেল বোধহয়। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এ-ব্যাপারে একেবারেই চিন্তিত নন। বরং বাজার ধরতে একাধিক নতুন ফিচার সংযোজনের কথাও জানিয়েছেন মাস্ক।তিনি বলেন, "ট্যুইটারকে আরও ভালো করে গড়ে তুলব। আরও নতুন ফিচার যোগ করা হবে। এতে মানুষদের বিশ্বাস আরও বাড়বে।" নতুন কী কী ফিচার যোগ হতে পারে ট্যুইটারে? একবার চোখ বোলানো যাক সেইদিকে।
১. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
মার্চ মাসের শেষে এলন মাস্ক ট্যুইটার ব্যবহারকারীদের সরাসরি প্রশ্ন করেন, গণতন্ত্রের জন্য বাকস্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি, আপনি কি মনে করেন ট্যুইটার এই নীতি মেনে চলে? উত্তরে ৭০% মানুষের জবাব ছিল- না। কিছু কিছু উত্তরদাতা সংস্থাটিকে কিনে নেওয়ার পরামর্শও দেন। এরপরেই ট্যুইটারের শেয়ার কেনার কথা প্রকাশ্যে আসে। একশো শতাংশ শেয়ার কেনার পর ধনকুবের নিজেই তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, "বাকস্বাধীনতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। ট্যুইটার একটি ডিজিটাল টাউন স্কোয়ার, যেখানে মানবতার ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি নিয়ে মত বিনিময় হয়।" তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচকও যেন ট্যুইটারে থাকেন। এরই প্রকৃত অর্থ হল বাকস্বাধীনতা।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আসলে জিতছে কি আমেরিকাই?
২. 'এডিট' বাটন সংযোজন
একই কায়দায় ট্যুইটারে এডিট বাটনের সংযোজন নিয়েও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে। উত্তরে ৭৪% মানুষ জানিয়েছেন, হ্যাঁ। বাকি ২৬% শতাংশ মানুষ বলেছেন, না এডিট বাটনের প্রয়োজন নেই। ফলে মনে করা হচ্ছে যে, নতুন রূপে ট্যুইটার এলে তাতে পোস্ট এডিট করার অপশন যুক্ত হতে পারে। তবে উত্তরদাতাদের অনেকে বলেছেন, এক্ষেত্রে কেউ ট্যুইট এডিট করে বদলালে, তার যেন উল্লেখ থাকে পোস্টে। তাহলেই কোনও অসুবিধে থাকার কথা নয়। অন্য এক ব্যবহারকারী বলেছেন, দু'টি কাজ করা যেতে পারে। এডিট কথাটি উল্লেখের পাশাপাশি ট্যুইট করার সময় থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে সেই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে এবং পরিবর্তনের নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে তাঁর অনুরাগীদের কাছে। এর উত্তরে মাস্ক নিজেই বলেছেন, বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ট্যুইটারকে ঢেলে সাজাতে চলেছেন এলন মাস্ক।
৩. স্বচ্ছ অ্যালগরিদম ব্যবস্থা
স্বচ্ছ অ্যালগরিদম ব্যবস্থা নিয়ে আসতে চলেছেন এলন মাস্ক। এর ফলে কোন ট্যুইট কী পরিমাণে ছড়াবে, তা স্পষ্ট দেখা যাবে। অন্য কোনও অজানা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন হবে না এক্ষেত্রে। স্বচ্ছ অ্যালগরিদম ব্যবস্থার মাধ্যমে যে-কোনও সময় দেখে নেওয়া যাবে, কোন ট্যুইট কত মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
৪. ভুয়া অ্যাকাউন্টের ইতি
ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলার দিন শেষ হতে চলেছে মাস্কের ট্যুইটারে। এজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হবে বলেও জানা গেছে। তিনি নিজে ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন, ৬৯.৪২০% পরিসংখ্যানই ভুল। এই বিষয়ে মাস্কের বক্তব্য, বিশেষ কোনও মতবাদ ছড়িয়ে দিতে বা নির্দিষ্ট কোনওদিকে জনমত তৈরির চেষ্টায় ইদানীং ‘বট্ অ্যাকাউন্ট’ ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর করা একটি ট্যুইটই ঘুরিয়েফিরিয়ে ভিন্ন মানুষের অ্যাকাউন্ট থেকে দেখা যায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, বহু মানুষ একই মত পোষণ করছেন।কিন্তু মাস্কের হাতে শেষ হতে চলেছে সেই চালাকি।
৫. ব্লু টিক সবার অ্যাকাউন্টে
মাস্কের সময় প্রতি ট্যুইটার ব্যবহারকারীই যাচাই করা, অর্থাৎ ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের অধিকারী হতে চলেছেন। মাস্কের মতে, প্রতিটি অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড হওয়া প্রয়োজন। এর ফলে মাধ্যমের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। তাই প্রতিটি ট্যুইটার ব্যবহারকারী পাবেন ‘ব্লু-টিক’, যা ভুয়া অ্যাকাউন্ট রুখতে সহায়ক হবে।