খুলে গেছে 'নরকের দ্বার', মানবসভ্যতা ধ্বংসের মুখে? আসল সত্যিটা কী?

ফের একবার খুলে গেছে 'নরকের দ্বার' (Portal to Hell)! তবে কি নতুন করে ঘনিয়ে আসতে চলেছে চরম বিপদ, যা অদূর ভবিষ্যতে শেষ করে দেবে মানবসভ্যতাকে? পাঠকরা ঘাবড়ে যাবেন না একেবারেই। এই নরকের দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার ফলাফল ততখানি ভয়ংকর নয়। তবে এই নরকের দ্বার আপনার মনে কৌতূহল জাগাতে বাধ্য। পৃথিবীর বুকে মানুষের তৈরি আশ্চর্য জিনিসগুলির মধ্যে অন্যতম এই 'নরকের দ্বার'। কিন্তু 'নরকের দ্বার' ব্যাপারটি কী? কীভাবেই বা খুলে গেল এর মুখ? বিস্তারে জেনে নেওয়া যাক‌।

'নরকের দ্বার' আসলে জল নির্গমনের জন্য তৈরি গর্ত। পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ার নাপা ভ্যালিতে অবস্থিত বেরিয়েসা লেকে রয়েছে এই গর্তটি। এই লেক মানুষেরই সৃষ্টি। স্থানীয়দের কাছে এই গর্ত 'গ্লোরি হোল' নামেও পরিচিত।

বেরিয়েসা লেকের ওপর রয়েছে ৩০৪ ফুট উঁচু মন্টিক্যালো বাঁধ যার জলধারণ ক্ষমতা ৫২.১ বিলিয়ন গ্যালপ। এক্ষেত্রে লেকের জলস্তর ৪.৭ মিটারের ( ১৫.৫ ফুট) ওপরে উঠে এলে এই নির্গমন পথ ধরে জল বের করে দেওয়া হয়। ২২ মিটার চওড়া (৭২ ফুট) মুখ এবং ৭৫ মিটার দীর্ঘ (২৪৫ ফুট) এই টানেল প্রতি সেকেন্ডে ১,৩৬০ কিউবিক মিটার (৪৮,০০০ কিউবিক ফিট) জল গিলে ফেলতে পারে। টানেলের মধ্য দিয়ে জল দেড় কিলোমিটার দূরের 'পুতা ক্রিক' নামে একটি জায়গায় এসে পড়ে। লেকের অতিরিক্ত জল এর মধ্য দিয়ে বেরনোর সময় টানেলের মুখে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়, যা দেখতে ভিড় জমায় বহু মানুষ। গত সপ্তাহে এই টানেল খুলে যেতেই ইন্টারনেটে সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: মানুষের নগ্ন ছবি দেখেই সাড়া দিল ভিনগ্রহীরা? কী বলছে নাসা?

তবে এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালেও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে লেকের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় খুলে যায় এই গর্ত। সেই সময় কয়েকহাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন এই দৃশ্য দেখতে। তবে কোনওভাবেই ভুল করে নয়, রীতিমতো ইঞ্জিনিয়ারদের পরিকল্পনামাফিক ১৯৫০ সালে তৈরি করা হয় এই জল নির্গমন পথটি। আসলে বাঁধ নির্মাণের সময় অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়ার জন্য সর্বদাই একটি বা দু'টি দরজা থাকে বাঁধের পাশে। কিন্তু মন্টিক্যালো বাঁধটি তৈরির সময় দরজা বানানোর মতো জায়গাই ছিল। তখনই নির্মাণকর্তাদের মাথায় আসে এমন টানেল তৈরির কথা।

১৯৯৭ সালে প্রথম এবং শেষবারের মতো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে এখানে। ঘুরতে এসে এমিলি নামে একজন মহিলা পড়ে যান এই টানেলের মধ্যে। যদিও ২০ মিনিটের চেষ্টার পর কোনওরকমে উঠে এসে বসে থাকেন টানেলের গায়ে। কিন্তু উদ্ধারকারী দল পৌঁছতে দেরি করায় বাঁচানো সম্ভব হয়নি সেই মহিলাকে। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল। এই ঘটনার পর থেকেই লেকে বোটিং এবং সাঁতার কাটা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

তবে নির্মাণকারীদের ধারণা ছিল, ৫০ বছরে পর পর এই টানেল কাজে লাগতে পারে। কিন্তু বর্তমান শতাব্দীতেই এই নিয়ে তিনবার খুলে গেছে এই 'নরকের দ্বার'। এর থেকে কার্যত স্পষ্ট, পৃথিবীর আবহাওয়া কত দ্রুত বদলে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এমনই আরেক ‘নরকের দরজা’ রয়েছে তুর্কমেনিস্তানেও। সেখানকার কারাকুম মরুভূমিতে গত ৫০ বছর ধরে জ্বলতে থাকা আগুনকে ঘিরেও বিস্ময়ের কমতি নেই। সেই আগুনমুখো গহ্বরের ছবিও নেটদুনিয়ায় হামেশাই দেখা যায়।

More Articles