মানুষের নগ্ন ছবি দেখেই সাড়া দিল ভিনগ্রহীরা? কী বলছে নাসা
দিনসাতেক আগে নাসা নিজেদের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে লাল গ্রহের শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমা অঞ্চলের একটি ছবি পোস্ট করে। যে পোস্টে দেখা যাচ্ছে মঙ্গলের বুকের একটি খাতের স্পষ্ট অবস্থান। যা খানিক দেখতে লাগছে একটি সুবৃহৎ পায়ের ছাপের মতো।
কিন্তু নেটদুনিয়া রাতারাতি শোরগোল ফেলে দেয়, এটি না কি এলিয়েন বা ভিনগ্রহীদের পায়ের ছাপ। কিছুদিন আগেই নাসা মহাকাশে এলিয়েনদের আকৃষ্ট করতে নারী-পুরুষদের নগ্ন ছবি পাঠিয়েছিল। সে নিয়ে বিশাল শোরগোলও হয়েছিল নেটদুনিয়ায়। টিপ্পনীও কেটেছিল নেটিজেনরা। তাহলে কি এবার সত্যিই...
নাহ, পাঠক যা ভাবছেন তা নয়। ভিনগ্রহীরা সাড়া দেয়নি। নাসার তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, এই ছবি আদতে তোলা ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর। আর ভিনগ্রহীদের উদ্দেশ্যে 'নিষিদ্ধ' ছবি পাঠানো হয় সপ্তাহখানেক আগে।
আরও পড়ুন: কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর? এতদিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা
তাহলে আসলে এটি কীসের দাগ লাল গ্রহের গায়ে?
নাসার বক্তব্য, এটি একটি বিশাল খাত বা ক্রেটার (Crater)। যার মধ্যে আবার রয়েছে আরও একটি সুগভীর এবং বৃহৎ খাত। দ্বিতীয় এই খাতটির নাম রাখা হয়েছে আইরি খাত বা আইরি ক্রেটার। নাসার পোস্ট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আইরি ক্রেটারের গায়ে সুদীর্ঘ আঁচড়ের মতো দেখতে দাগ। যেন সত্যিই কেউ পা বা হাত দিয়ে তৈরি আঁচড়ের দাগ ফেলে রেখে গেছে।
কী ভাবে তৈরি হয়েছিল এই খাত, তা যদিও নাসার তরফ থেকে জানানো হয়নি।
নাসার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলগ্রহের ঠিক শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমা যেখানে, ঠিক সেখানেই এই খাত অবস্থিত। বা উল্টো করে বললে, এই সুবৃহৎ খাতটি যেখানে অবস্থিত, তাকেই শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমা হিসেবে ধরে নিয়েছে নাসা।
মঙ্গলের বুকের শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমা, আসলে পৃথিবীর বুকের গ্রিনিচ মিন লাইন (Greenwich Mean Line) বা প্রাইম মেরিডিয়ান (Prime Meridian)। এই শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমাতে এসেই মঙ্গলের পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধ এক হয়, ঠিক নীল গ্রহ, অর্থাৎ, পৃথিবীর মতোই।
কীভাবে নাসার নজরে এল?
এই সুবৃহৎ খাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবিটি তোলা হয়েছে হাই-রেজোলিউশন ইমেজিং এক্সপেরিমেন্ট (High-resolution Imaging Experiment) বা হাইরাইজের (HiRISE) সাহায্যে। এই উচ্চমানের ক্যামেরাটি ঘুরে বেড়ায় লাল গ্রহের Reconnaissance orbit-এ। আর এই ছবিটি তোলা হয়েছে মঙ্গল থেকে ২৬৮.৩ কিলোমিটার দূর থেকে। এবং ছবিটি গুণমান পিক্সেলে বোঝাতে গেলে বলতে হয়, আইরির এই ছবিটি পিক্সেল প্রতি ৫০ সেন্টিমিটার বা ১৯.৭ ইঞ্চি।
হাইরাইজ (HiRISE) কী? হাইরাইজ আসলে একটি ক্যামেরা, যা মঙ্গলের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে, এই গ্রহের বিভিন্ন ছবি তোলে। কিন্তু এটি যে সে ক্যামেরা নয়। হাইরাইজ দৃশ্যমান আলোর সাহায্যে ছবি তুলতে পারলেও, এর টেলিস্কোপের মতো দূর থেকে দেখে ছবি তোলার ক্ষমতা আছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, খুব বেশি রেজোলিউশনের ছবি, অর্থাৎ যে ছবিতে খুঁটিনাটি সবকিছু দেখা ও বোঝা যায়, এমন ছবিও তুলতে পারে হাইরাইজ। আর সেজন্যই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে নাসার সম্প্রতি পোস্ট করা আইরি খাতের ছবিটি।
মঙ্গলের থেকে ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে, মঙ্গলের বুকে থাকা এক মিটার দীর্ঘ কোনও বস্তুর এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি তোলা কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। মঙ্গলের বুকে কী খনিজ পাওয়া যাচ্ছে, বা কোথায় কোন রাসায়নিক রয়েছে গুচ্ছ-গুচ্ছ, সেই হদিশও বহুদূর থেকে দিতে পারে হাইরাইজ। নাসার ওয়েবসাইটে এই ক্যামেরার বিবরণ থেকে জানা যাচ্ছে, লাল গ্রহের এত খুঁটিনাটি ছবি নিখুঁতভাবে তুলে আনার জন্যে, এর আগে এত উচ্চমানের ক্যামেরার ব্যবহার হয়নি।
এবং এই ক্যামেরাটির মূল তত্ত্বাবধায়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা-র লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি ল্যাবের বিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড ম্যাকএউইন।
মঙ্গল অভিযান?
আপাতত আইরি খাতে মানুষের পা রাখার পরিকল্পনা নেই। নাসা জানাচ্ছে, আইরি নিয়ে আরও বিশদে গবেষণা করতে পার্সিভেরেন্স এবং কিউরিওসিটি রোভার। পার্সিভেরেন্স রোভার বা আদরের পার্সি মঙ্গলের বুকে এক বছর শেষও করেছে খুব সম্প্রতি। মঙ্গলে জলের সন্ধান, নদী বা ব-দ্বীপের গঠন, পলির অস্তিত্ব সবই খুঁটিয়ে দেখছে পার্সিভেরেন্স রোভার। মঙ্গলে জলের উপস্থিতি ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার জন্যে আদর্শ। পার্সি খুঁটিয়ে দেখছে সেরকম জীব কখনও উপস্থিত ছিল কি না লাল গ্রহের বুকে।
ব্যাকটেরিয়া হোক কিংবা সত্যজিৎ রায়ের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাওয়া অদ্ভুতদর্শন অ্যাং, ভিনগ্রহে খুঁজে পাওয়া গেলেই তা ভিনগ্রহী। তাই এ-যাত্রায় আশাহত হলেও, ভিনগ্রহীদের হদিশ পেতে, পার্সিভেরেন্স এবং কিউরিওসিটি রোভার ভবিষ্যতে আশার আলো দেখাচ্ছে।