৬০ লক্ষ মানুষ অনাহারে! কী পরিস্থিতি সুদানে?
Sudan civil war: জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, সুদানে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ এখন সরাসরি অনাহারের মুখে। অর্থাৎ তারা এখন এমন অবস্থায় আছে খাবার না পেলে বাঁচাই সম্ভব নয়।
প্রায় দু'বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ পুরো সুদানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। রাজধানী খারতুম থেকে শুরু করে দারফুর, করদোফান— যে দিকেই তাকানো যায়, সেখানেই ভাঙা ঘরবাড়ি, পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বাজার, ফাঁকা রাস্তা আর আতঙ্কে জর্জরিত হয়ে যাওয়া গৃহহীন মানুষ। Rapid Support Forces (RSF) এবং Sudanese Armed Forces (SAF)-এর সংঘর্ষ দেশটিকে শেষ করে দিয়েছে।
যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের খাবার-নিরাপত্তার উপর। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, সুদানে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ এখন সরাসরি অনাহারের মুখে। অর্থাৎ তারা এখন এমন অবস্থায় আছে খাবার না পেলে বাঁচাই সম্ভব নয়। প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এখন মারাত্মক খাদ্য সংকটে আছে। যে কোনো সময় তারা সম্পূর্ণ অনাহারের মুখে পড়তে পারে।
অধিকাংশ পরিবার দিনে একবার খাবার জোটাতে পারছে না। যাদের হাতে সামান্য সঞ্চয় ছিল, সব শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেক মা-বাবা নিজেরা না খেয়ে শিশুদের জন্য কয়েক টুকরো রুটি রাখছেন। জল পাওয়া কঠিন, অনেক এলাকায় মানুষ নোংরা পুকুর থেকে জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন
১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ ঘর ছাড়া! কোন পথে সুদান?
যুদ্ধের কারণে ত্রাণ যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি দরকার, ঠিক সেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দারফুর, করদোফান, এল-গেজিরা এবং খারতুমের বহু জায়গায় অবরোধের কারণে ত্রাণবাহী ট্রাক যেতে পারছে না। রাস্তা বন্ধ, চেকপোস্টে লুটপাট, সামরিক গোষ্ঠীর বাধা— সব মিলিয়ে খাদ্য পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা উত্তর দারফুরের এল-ফাশের। এখানে হাজার হাজার পরিবার দিন ধরে না খেয়ে আছে। বেশ কিছু হাসপাতালে নিয়মিত অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু চিকিৎসা বা পুষ্টিকর খাবার, কিছুই যথেষ্ট নেই। মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, “এল-ফাশের এখন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।” এর অর্থ, খাদ্যের অভাবে ব্যাপক হারে মৃত্যু শুরু হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি প্রতি মাসে প্রায় ৪-৫ মিলিয়ন মানুষকে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছে। ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর ও এফএও একত্র হয়ে কিছু এলাকায় সাহায্য পাঠিয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ করদোফানে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। সুদানের মোট অনাহারে থাকা মানুষের তুলনায় এই সাহায্য খুবই সামান্য।
আরও পড়ুন
বুভুক্ষু প্রায় ছ’লক্ষ! দু’বছর যে যে ভয়াবহতা দেখছে সুদান
যুদ্ধের কারণে কৃষিকাজও করা যাচ্ছে না। বীজ নেই, যন্ত্রপাতি নেই, সেচব্যবস্থা নষ্ট। অনেক কৃষক যন্ত্রপাতি বা বীজ ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে খাবার পাওয়া গেলেও দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এক কেজি ময়দা বা ডাল অনেক মানুষের পুরো সপ্তাহের আয়ের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
জাতিসংঘ, খাদ্য কর্মসূচি (WFP) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে, সুদান এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল। যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক সাহায্য না বাড়ে এবং যুদ্ধবরতি কার্যকর হয়, তাহলে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। সুদানে বর্তমানে ২৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ। অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা কোনো না কোনোভাবে খাদ্য ও ওষুধের উপর নির্ভরশীল।
সাহায্য না বাড়ালে কোটি মানুষ সরাসরি জীবনের ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। যুদ্ধ থামানো না গেলে, সুদান ধীরে ধীরে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাবে, এটা এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তব বিপদ।

Whatsapp
