পাকস্থলীর মধ্যে তিন কেজি চুল, বিরল রোগ ‘পিকা’ অজানা অনেকেরই

rare disease pica : খাওয়ার অযোগ্য যা কিছু তার প্রতিই আসক্তি তৈরি হয় এই রোগে

খাওয়ার বিষয়ে কোনওরকম কার্পণ্য নেই আমাদের। যা কিছু, তা কেবল হাতে ধরে নয়, পরখ করে নিতে চায় চেখে দেখেই। কিন্তু খাদ্য তালিকা যে বাড়তে বাড়তে গিয়ে ঠেকেছে একেবারে অখাদ্য পর্যন্ত তা খোঁজ রাখেন কজন? 

সম্প্রতি চিনের একটি ঘটনা সামনে আসায় অবাক বনেছেন অনেকেই। কিশোরীর বয়স বছর ১৪। বাড়ি চীনের সানজি প্রদেশে। মা–বাবা চাকরিসূত্রে দূরে থাকে বলে দাদু-দিদার সঙ্গেই থাকে সে। জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে সে নাকি নিজের চুল খেয়েছে। তবে নাতনির চুল খাওয়ার বদভ্যাস চোখে পড়েনি দাদু -দিদার। ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে আর অন্য কিছুই খেতে পারে না সে। অবশেষে ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচার করতে হয় কিশোরীর। এবং চিকিৎসকরা তার পেট থেকে বের করে আস্ত একটা চুলের ডেলা। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ওজন করে দেখা গেছে এই ডেলাটি নাকি প্রায় ৩ কেজির সমান।

আরও পড়ুন : হুইলচেয়ার চলবে রোগীর মস্তিষ্কের জোরে! আশ্চর্য আবিষ্কারে তোলপাড় বিশ্ব

একটু একটু করে জমেছিল পেটের মধ্যে চুল। অদ্ভুত এক অভ্যাস। অন্য খাবারে অরুচি, লোভ কেবল মাথার চুলেই। এমনকী নিজের চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে মাথায় টাক পড়ে যায় তার। আর এর জেরেই পেটের মধ্যে অমন ভয়াবহ বিপত্তি। আস্ত একটা ইটের সমান ওজনের চুল নিয়ে চলছিল সে। জানা গেছে, টানা দু’ঘণ্টা ধরে চলে কিশোরীর অস্ত্রোপচার।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অদ্ভুত এই রোগীটির নাম ‘পিকা’। খাওয়ার অযোগ্য যা কিছু তার প্রতিই আসক্তি তৈরি হয় এই রোগে। মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এই প্রবণতা। কেউ ঘাস, কেউ মাটি অথবা আবর্জনা, ছাই, দেওয়ালের চুন সাবান, অর্থাৎ অখাদ্য সবকিছু দেখেই সামলাতে পারে না লোভ।মাইকেল লোটিটোর সেই কথাটা মনে পড়ে যায়, আস্ত একটা এরোপ্লেন খেয়ে ফেলেছিলেন এই ফরাসি ভদ্রলোক। লোটিটোর মতো এ রোগ ছে আরও অনেকেরই। পেরেক, চামচ, কাচ, সেফটিপিন, টুথ ব্রাশ, কার্পেট, মাথার চুল, মাটি, টয়লেট পেপার, অখাদ্যের হাজার পদ রয়েছে এদের খাদ্য তালিকায়।

আজকের চিনের শিশুটিই প্রথম নয়, বছর চারেক আগে নেহা সাউ নামে আরও এক ১২ বছরের মেয়ের পাকস্থলি থেকে আড়াই কেজি চুলের টিউমার বের করেছিলেন সার্জনরা। শুধু শিশুরাই নয় মনোরোগে আক্রান্ত বয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায় এই রোগ। এই রোগের উৎস নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। তবে, এই রোগের সঙ্গে মানসিক রোগ, উদ্বেগ, অপুষ্টি, রক্তাল্পতা ইত্যাদি জনিত কারণকেই প্রধান বলে মনে করেন বেশিরভাগ চিকিৎসক।

তাই রোগ নিরাময়ে কাউন্সেলিং এবং প্রয়োজনীয় ওযুধের ওপরই ভরসা করেন তারা। তবে এর জন্য সবথেকে বেশি যেটা প্রয়োজন তা হল পরিবারের বাকিদের সতর্কতা। কাউকে এরকম অভ্যাসের মধ্যে নিমজ্জিত হতে দেখলেই তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কথা বলতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে। তাহলেই এড়ানো যাবে অদ্ভুত এই ‘পিকা’ রোগকে।

More Articles