মৃত্যুর পরে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের কী হয়? 'ডিজিটাল উইল'-এর যে তথ্য অজানাই

Social Media Digital Will: স্থাবর সম্পত্তির উইল সম্ভব, কিন্তু ডিজিটাল সম্পদের উত্তরাধিকার হবে কে?

মানুষ চলে গেলে তবু তো মানব থেকে যায়। আজকাল তাঁদের ডিজিটাল অ্যাকাউন্টও থেকে যায়। থেকে যায় গুগল-পে তে পাঠানো টাকার খুচরো হিসেব অথবা মেসেঞ্জারের অদেখা মেসেজভাণ্ডার, অথবা গুগল ফটোর নির্দিষ্ট অ্যালবাম। মানুষ চলে গেলেও তাঁদের না থাকা ওইসব ডিজিটাল প্রোফাইলে স্মৃতি হয়ে ফুটে থাকে। মাঝেমাঝে সেসব প্রোফাইল খুলে সেই না থাকা মানুষের বিশ্বের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ সারি। থেকে যাওয়া মোবাইল নম্বরের না থাকা মালিকের চ্যাটে মেসেজ লিখে পাঠাই, জানি কোনও দিনই এসব ব্লুটিক হবে না। তবু কথা ঠিক বার্তা হয়ে পৌঁছে যাবে। মানুষ চলে গেলেও এসব ডিজিটাল উপস্থিতি আমাদের স্মৃতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ না থাকলে, মানে তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর এইসব ডিজিটাল প্রোফাইলের কী হয়? তাঁর করা সব সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কী হয়? বহুকাল ধরে যত্নে জিড্রাইভে বা গুগল ফটো বা ক্লাউডে থাকা ডিজিটাল মুহূর্তের কী হয়?

মৃত্যুর পর গুগল অ্যাকাউন্টের কী হয়?

স্থাবর সম্পত্তির উইল সম্ভব, কিন্তু ডিজিটাল সম্পদের উত্তরাধিকার হবে কে? উত্তরাধিকার হওয়া বা ডিজিটাল উপস্থিতি মুছে ফেলার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে টেক-বিশ্বে। গুগলের বিবিধ অ্যাকাউন্ট এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে একটি বিকল্প রয়েছে যার নাম, ইনঅ্যাকটিভ অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার। এর মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি তাঁর বিশ্বস্ত কোনও যোগাযোগকে তাঁর না থাকাকালীন সেই প্রোফাইলে ঢুকে কাজ করার অনুমতি দিতে পারেন। তবে উল্লেখযোগ্য, ওই বিশ্বস্ত ব্যক্তি কিন্তু চাইলেই যখন তখন প্রোফাইলে ঢুকতে পারবেন না। যদি ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট একটা দীর্ঘ সময় ধরে 'ইনঅ্যাক্টিভ' থেকে থাকে (এক্ষেত্রে ৩ মাস, ৬ মাস বা ১২ মাসের বিকল্প বেছে রাখা যায়) তাহলেই ওই প্রোফাইলে ঢুকে বাকি সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলা যায়।

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের ক্ষেত্রে কী করণীয়?

ফেসবুকে ডিজিটাল উত্তরাধিকারের বিষয়টি আগে থেকেই রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া যায় যিনি কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর মূল প্রোফাইলটির দেখভাল করতে পারবেন। সেই উত্তরাধিকারীই তখন ওই প্রোফাইলের হয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং কেন প্রোফাইলটি এতদিন অকেজো হয়ে পড়েছিল তা নিয়ে একটি পোস্টও লিখতে পারবেন। তিনি চাইলে প্রোফাইলটি চিরতরে ডিলিটও করে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন- হু হু করে কমছে ফেসবুক ফলোয়ারের সংখ্যা? রইল আসল কারণ

অ্যাপেলের ক্ষেত্রে কী করা যায়?

ফেসবুকের মতোই অ্যাপেলের ক্ষেত্রেও ডিজিটাল উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা যায়। সেটিংসে 'পাসওয়ার্ড অ্যান্ড সিকিউরিটি' অপশনে গিয়ে এই নির্বাচন সম্ভব। উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা থাকলে তিনি ছবি, মেসেজ, নোটস, ফাইলস যা যা অ্যাপ আপনি জীবিতাবস্থায় ডাউনলোড করেছেন, ব্যাক আপ রেখেছেন সমস্ত কিছুর অ্যাক্সেস পাবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পাসওয়ার্ড এবং টাকা পয়সা লেনদেন বিষয়ক তথ্যের হদিশ কিন্তু পাবেন না আপনার ডিজিটাল উত্তরাধিকারীও!

লিংকডিনের ক্ষেত্রে কী করণীয়?

লিংকডিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত মানুষের অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলতে পারেন যে কেউ। সেক্ষেত্রে তাঁদের মৃত মানুষের সম্পূর্ণ নাম, লিংকডিন প্রোফাইলের ইউআরএল, মেল আইডি, মৃত্যুর দিন এবং ডেথ সার্টিফিকেট লিংকডিনকে দিতে হবে।

আফটার নোট, সিকিওর সেফের মতো বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে ডিজিটাল উইল করা সম্ভব। যেমন আফটার নোটের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি তাঁদের বিভিন্ন প্রোফাইলের লগ ইন ডিটেইলস রেখে একটি উইল করতে পারেন। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি ৩ জন 'ট্রাস্টি' মনোনীত করতে পারবেন যারা তাঁর মৃত্যুর পর এই ডিজিটাল অ্যাক্সেস পেতে পারে। সিকিওর সেফের ক্ষেত্রে আবার কোনও ব্যক্তি চাইলে তাঁর সর্বোচ্চ ৫০ টি ডিজিটাল অ্যাকাউন্টের লগ ইন ডিটেইলস রাখতে পারেন যা পরে তাঁর মনোনীত উত্তরাধিকার গ্রহণ করতে পারবেন।

More Articles