স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগকে বামেদের একাসনে বসানো মস্ত ভুল: ইরফান হাবিব

Irfan Habib: ইরফান হাবিব বলছেন, একটি সাম্প্রদায়িক দলকে একটি জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে সমান করে দেখা যায় না।

কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)-এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উদ্বোধনী সীতারাম ইয়েচুরি স্মারক বক্তৃতায় প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব তাঁর শ্রোতাদের ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানালেন। বিশেষ করে সেইসব অধ্যায় যা ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভূমিকার উপর ছায়া ফেলেছে, তার বিশ্লেষণ জরুরি মনে করছেন ইরফান হাবিব।

নিজেকে একজন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে দৃঢ়ভাবে চিহ্নিত করে অধ্যাপক হাবিব বলছেন,আমাদের দুর্বলতাগুলি খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

আরও পড়ুন- ইতিহাসে উপেক্ষিত রয়ে গেলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের যে শহিদ নারীরা

এ বছর ইরফান হাবিব এখন ৯০-এর দশকে পা দিয়েছেন। মস্তিষ্ক এখনও সচল, ক্ষুরধার। স্মৃতিপটে এতটুকুও কুয়াশা জমেনি। ‘জাতীয় আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা এবং তার উত্তরাধিকার’ শীর্ষক তাঁর বক্তৃতায় হাবিব উল্লেখ করেন যে মার্কসবাদী ঐতিহাসিক লেখায় মধ্যপন্থী কংগ্রেস নেতা দাদাভাই নওরোজি এবং আর.সি. দত্তের অপরিসীম অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।অথচ সম্পদ নিষ্কাশন তত্ত্বই মার্কসবাদী তাত্ত্বিকতার পট রচনা করেছিল। 

ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের আগে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সমালোচনা ছিল। (কার্ল) মার্ক্স এবং (ফ্রিডরিখ) এঙ্গেলস ১৮৪০-এর দশকে উপনিবেশবাদের সমালোচনা করেছিলেন কিন্তু নওরোজি এবং দত্ত সেই সমালোচনা (ভারতে) বিকশিত করেছিলেন। আমাদের তাঁদেরকেও উদযাপন করা উচিত,” হাবিব বলেন।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতা দিবস হিসেবে কেন ১৫ অগাস্ট দিনটিকেই বেছে নেওয়া হলো

হাবিব আরও উল্লেখ করেন, “কমিউনিস্টরা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল”।

তবে, তাঁর মতে, কমিউনিস্টরা “মুসলিম লিগ এবং কংগ্রেসকে সমান করে দেখে” কৌশলগত ভুল করেছিল।

১৯৩০-এর দশক থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত, “কংগ্রেস অবিলম্বে এবং পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিল এবং মুসলিম লিগ মুসলিম লভ্যাংশ দাবি করেছিল।” হাবিব বলেন, যুক্তি দিয়ে যে কমিউনিস্টরা কংগ্রেসের আহ্বান সমর্থন করলেও, ভুলভাবে উভয় রাজনৈতিক সংগঠনকে সমান করে দেখেছিল।

মুসলিম লিগ সাম্প্রদায়িক ছিল, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ছিল জাতীয় দল… মুসলিম লিগ বিভাজন সমর্থন করেছিল, কংগ্রেস করেনি। কোন ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে উভয়ই একই?” প্রশ্ন ইরফান হাবিবের।

সাম্প্রদায়িক সমস্যা কমিউনিস্টরা ভালোভাবে সামলায়নি,” হাবিব বলেন।

তবে, তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে এমনকি যখন কমিউনিস্টরা একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক লাইন অনুসরণ করছিল, আর.পি. দত্ত তাঁর যুগান্তকারী বই ‘ইন্ডিয়া টুডে’ (১৯৪০-এ প্রকাশিত)-এ একটি আলাদা অধ্যায়ে উৎসর্গ করেছিলেন কেন ভারতকে ধর্মীয় লাইনে বিভক্ত করা উচিত নয়। তবে, তিনি বলেন যে তাঁর গ্রন্থটি তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক পি.সি. যোশী দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন- অনুপ্রবেশকারীদের উৎখাত: নির্বাচনী রাজনীতির হাতিয়ার?

হাবিব মনে করেন ১৯৪২-এর কংগ্রেস গৃহীত বম্বে রেজোলিউশন ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করার জন্য “ভুল সময়ে” ছিল। তিনি বলেন কংগ্রেস এমন সময় ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় যখন জাপানি বাহিনী ভারতের সীমান্তে ঘোরাঘুরি করছিল। তাঁর মতে, কমিউনিস্টরা সঠিকভাবে ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে তাদের প্রথম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

হাবিব জোর দিয়ে বলেন অতীতের ভুলচুক নিয়েই ভারতীয় বামপন্থী আন্দোলনের উত্তরাধিকার আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি কমবয়সিদের মার্কসবাদী বিষয়সমূহ পড়তে অনুরোধ করেন, যাতে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা যায়।

More Articles