অভিশপ্ত অমরনাথ! মেঘভাঙা বৃষ্টি মানেই মৃত্যুর হাতছানি পাহাড়ে?

প্রশাসন জানিয়েছে, ইতিমধ্যে এক লাখেরও বেশি পুন্যার্থী অমরনাথ গুহা দর্শন করে ফিরে গিয়েছেন। চলতি বছর ৩০ জুন শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। যাত্রা শুরুর পর থেকেই আবহাওয়ার কারণে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে অমরনাথ যাত্রা।

অমরনাথ যাত্রায় আচমকা মেঘ-ভাঙা বৃষ্টিতে ১৩ জনের মৃত‍্যু ও বহু মানুষের নিখোঁজ হওয়ার খবর ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে। মেঘ-ভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ভারতের অমরনাথ গুহা-সংলগ্ন অঞ্চল। এই ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।শুক্রবার বিকেলে ঘটেছে ঘটনাটি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও ১৩ জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ৫০-এর বেশি। মনে করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আলোর স্বল্পতার জন্য বারবার ব্যহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। দুর্ঘটনার সময় অমরনাথ গুহা ও তাঁবুর মাঝে বালতালে অবস্থান করছিলেন প্রায় বারোহাজার পুন্যার্থী।

কী অবস্থায় উদ্ধারকাজ?
ঘটনার পরই আইটিবিপি এবং এনডিআরএফ দল মোতায়েন করা হয়। উপস্থিত সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। কাশ্মীরের আইজিপি বিজয় কুমার জানিয়েছেন, হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসে বেশ কয়েকটি লঙ্গর ও তাঁবুও ভেসে গিয়েছে বলে খবর। পুলিশ, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। অমরনাথ বেস ক্যাম্পে নিরাপত্তাবাহিনী ইন্দো-তিব্বত বর্ডারের পুলিশও উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইটিবিপির তরফে জানানো হয়, এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখনও কিছু স্পষ্ট নয়। উদ্ধারকারী দল কাজ শুরু করেছে।

এনডিআরএফের (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স) ডিজি অতুল গাড়ওয়াল বলেন, উদ্ধারকাজে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আবহাওয়া। ভৌগোলিক অবস্থান এবং উচ্চতার চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিন্তু আমাদের জওয়ানরা ভালোভাবে প্রশিক্ষিত। রাজ্য সরকারের তরফে হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারের পর আহতদের হেলিকপ্টারে স্থানীয় মেডিকেল ক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছে। বিএসএফ, সিআরপি-র মেডিক‍্যাল টিমও সেখানে উপস্থিত রয়েছে। অন্যান্য দলের সঙ্গে আইটিবিপি-ও সেই কাজে যোগ দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ৬০ বছর ধরে অমরনাথ তীর্থযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই মুসলিম পরিবার

বন্ধ অমরনাথ যাত্রা
প্রশাসন জানিয়েছে, ইতিমধ্যে এক লাখেরও বেশি পুন্যার্থী অমরনাথ গুহা দর্শন করে ফিরে গিয়েছেন। চলতি বছর ৩০ জুন শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। যাত্রা শুরুর পর থেকেই আবহাওয়ার কারণে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে অমরনাথ যাত্রা। বিরূপ আবহাওয়ার জন্য দিনদুয়েক আগে যাত্রা স্থগিত করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় শুক্রবার থেকেই ফের অমরনাথ দর্শনে যাত্রার অনুমতি পান পুন্যার্থীরা। ঘটনার পর পহেলগামের নুনওয়ান বেস ক্যাম্প এবং গান্দেরবাল জেলার বালতালে যাত্রার অপেক্ষায় আটকে পড়েছে প্রায় ১৫,০০০ পুন্যার্থী। তাদের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে অমরনাথ যাত্রা।

মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ফ্ল্যাশ ফ্লাড
এর আগে ২০১০ সালেও খবরের শিরোনামে এসেছিল ফ্ল্যাশ ফ্লাড। মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে যে অনিয়ন্ত্রিত বন্যা হয়, তাকে ফ্ল্যাশ ফ্লাড বলে। ২০১০ সালের অগাস্ট মাসে লাদাখে এই ফ্ল্যাশ ফ্লাডের ফলে মৃত্যু হয়েছিল ২৫০ লোকের। এরপর ২০১৩ সালে কেদারনাথের ঘটনায় শিউরে উঠেছিল দেশ। ফ্ল্যাশ ফ্লাডের ফলে প্রায় ৯০০০ লোক নিখোঁজ হয়েছিল সেখানে।

মেঘভাঙা বৃষ্টি বা ক্লাউডবার্স্ট হলো ভারী বৃষ্টি। ১০ সেমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বৃষ্টিকে ক্লাউডবার্স্ট বলে। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের ফ্ল্যাশ ফ্লাডের পর প্রকাশিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, এই ধরনের বৃষ্টি সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের সংগত পায়। যে কোনও জায়গাতেই এমন বৃষ্টি হতে পারে, তবে পাহাড়ি এলাকায় এই বৃষ্টি বেশি দেখা যায়। হিমালয় বা পশ্চিমঘাটে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় এই মেঘভাঙা বৃষ্টি।

More Articles