টয়লেটে ফ্লাশ করে নষ্ট করছেন! মানুষের মল মূত্রেই জন্মায় বিষহীন সবজি, জানাল গবেষণা

Human Feces Compost: মনোজ মিত্র বাঞ্ছারামের বাগান সিনেমায় বলেছিলেন, "এই নাও জার, ধরে রেখো সার"। সেই কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে কেই বা জানবে?

সারা বিশ্বজুড়ে কৃষকদের মূল সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো সারের দাম বৃদ্ধি। সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন দেশের কৃষকরাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সরাসরি চাষের খরচ বৃদ্ধি এবং ফসলের দাম বাড়া ও যোগ্য মূল্য না পাওয়ার বিরুদ্ধেও লড়াইও জারি রয়েছে। সুরাহা দিলেন গবেষকরা। তবে বেশ উৎকট সুরাহা। গবেষকরা এমন এক সার ব্যবহারের পরামর্শ, দিচ্ছেন যা সাধারণত টয়লেটে ফ্লাশ করে দেয় মানুষ। হ্যাঁ, সবচেয়ে সস্তা এবং উপকারী সার হল মানুষের মল। মনোজ মিত্র বাঞ্ছারামের বাগান সিনেমায় বলেছিলেন, "এই নাও জার, ধরে রেখো সার"। সেই কথা এমন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে কেই বা জানবে? ফ্রন্টিয়ার্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মল এবং প্রস্রাব থেকে তৈরি সার ব্যবহার করা নিরাপদ এবং এর ফলে খাবারে খুব সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক পাওয়া যায়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ফসলের পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার পর বিশ্বের সব দেশের সরকারই সারের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়াতে চেষ্টা করছে। ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের মধ্যে বাড়তে থাকা ক্ষোভ প্রশমন করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ মল-মূত্র থেকে পাওয়া সারের বিকাশের পথ বিবেচনা করছে ।

নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে, গবেষকরা ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে শুরু করে পোকামাকড় প্রতিরোধক পর্যন্ত ৩১০টি রাসায়নিকের জন্য মানুষের দেহের বর্জ্য পদার্থের পরীক্ষা করেছেন। গবেষকরা দেখেছেন, এর মধ্যে মাত্র ৬.৫ শতাংশই শনাক্তকরণ সীমার উপরে এবং কম ঘনত্বের ছিল। সাধারণত, মল-মূত্রের সার ব্যবহারের মাধ্যমে কম পরিমাণ ফার্মাসিউটিক্যাল যৌগগুলি দেহের খাদ্য ব্যবস্থায় প্রবেশ করে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এই সার কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়।

আরও পড়ুন- নামে ঢ‍্যাঁড়স, পুষ্টিগুণে সবজির রাজা! উপকারিতা জানলে পাতে তুলবেনই

বাঁধাকপির ভোজ্য অংশে দু'টি ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য সনাক্ত করেছেন গবেষকরা। ব্যথানাশক আইবুপ্রোফেন এবং অ্যান্টিকনভালসেন্ট ওষুধ কার্বামাজেপাইন, এদের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। এর মানে হলো, একটি কার্বামাজেপাইন বড়ির সমতুল্য ডোজ শরীরে জমতে হলে হাফ মিলিয়নেরও বেশি বাঁধাকপির মাথা খেতে হবে।

রাশিয়ার যুদ্ধ হামলার পরে সারের খরচের বৃদ্ধি পাওয়াতে ইতিমধ্যেই অনেক কৃষক গোবর, এমনকী মানুষের মল মূত্রও ফসলের পুষ্টির জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু এই বিকল্প সারগুলি এতটা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। এই সমীক্ষা অবশ্য বলছে, মানুষের বর্জ্য থেকে প্রক্রিয়াকৃত কিছু পণ্য কৃত্রিম সারের থেকে দক্ষতায় একই প্রায়। যদি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হয় এবং মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে প্রচলিত কৃত্রিম খনিজ সারের জায়গা নিয়ে নিতে পারে মানুষের মূত্র এবং মল দিয়ে তৈরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য সার।

 

More Articles